চোখের দেখাই মনের দেখা নয়। রবীন্দ্রনাথ একবার লিখেছিলেন, 'যা সুস্থ বলে সুন্দর বলে প্রতীয়মান তার অন্তরেও লুক্কায়িত কিছু আছে। যাকে ধনী বলে মনে হয়, তার পর্দার আড়ালে লুকিয়ে বসে আছে উপবাসী।' ঠিক তেমনই আমাদের দেহও কেবল অস্থিমাংস-রসরক্তের সমাবেশ নয়, রয়েছে পেঁয়াজের খোসার মত ৫টি স্তর।
পঞ্চস্তর ও পঞ্চকোষ
একেবারে বাইরের স্তরটি হল অন্নময় কোষ (ফিজিক্যাল বডি), তার পরের স্তরে রয়েছে মনোময় কোষ (ইমোশনাল/ইনটেলিজেন্স বডি), তৃতীয় স্তরটি হল প্রাণময় কোষ (এনার্জি বডি)। প্রাণময় কোষের শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা যেমন রয়েছে তেমনই বিজ্ঞানও তাকে সমর্থন করছে। মানব দেহের উর্জা(শক্তি)ভিত্তিক জ্যামিতিক মানচিত্র অনুসারে, প্রাণময় কোষে রয়েছে মোট ৭২ হাজার নাড়ি। দেহের ডানদিকে ৩৬ হাজার এবং বামদিকে ৩৬ হাজার নাড়ি বিন্যস্ত। ৭২ হাজার নাড়ি পরস্পরকে ছেদ করে ১১৪টি প্রধান বিন্দুতে। এই ১১৪টি ছেদবিন্দু হল আমাদের স্থূল দেহের ১১৪টি সূক্ষ্ম চক্র, ১১৪টি সম্ভাবনার উৎসস্থল। তবে ১১৪টি সূক্ষ্ম চক্র শুধু সম্ভাবনা তৈরি করে না, সম্ভাবনা নষ্টও করে। বা বলা ভালো, আমরাই সম্ভাবনা নষ্ট করে ফেলি নিজেদের ভুল সিদ্ধান্তে/ভাবনায়। ত্রুটিযুক্ত বাস্তু, ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণের পথ প্রশস্ত করে। কারণ ভবন থেকেই ভাবনার উৎপত্তি।
এর পরে আসব, চতুর্থ স্তর অর্থাৎ বিজ্ঞানময় কোষের কথায়। পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের (চক্ষু-কর্ণ-নাসিকা-জ্বিহা-ত্বক) সাহায্যে যা অনুভূত হয় না, সেই ইন্দ্রিয়াতীত সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অনুভূতি অন্তরের অন্তঃস্থলে প্রবাহিত হতে পারে বিজ্ঞানময় কোষের মাধ্যমে। দিব্য জ্ঞানার্জনের অনন্য সাধারণ মাধ্যম, বিজ্ঞানময় কোষের দ্বারা, অতীন্দ্রিয় ভাব সমূহ, বাহ্য শরীর থেকে সূক্ষ্ম অন্তরে নিরন্তর সঞ্চারিত হতে পারে। একেবারে অন্তিমে পঞ্চম স্তর অর্থাৎ আনন্দময় কোষ। এই স্তরে ধীরে ধীরে আমাদের ফিজিক্যাল বডি সুখ-পরিপূর্ণ আনন্দঘন শরীরে পরিণত হয়। পরমাত্মার সঙ্গে একাত্ম হয়ে ওঠে অন্তরমন।
কিন্তু সমস্যা হল, অধিকাংশ মানুষেরই বাহ্য অনুভূতি বিজ্ঞানময় কোষ পর্যন্ত পৌঁছতেই পারে না। প্রাণময় কোষের ঘূর্ণাবর্তে পাক খেতে থাকে। ধারাবাহিক ভুল সিদ্ধান্ত ও ভাবনার বেড়াজালে জড়িয়ে দেহ-মন-কর্মের শান্তি বিনষ্ট হয়। কেরিয়ার-সঞ্চয়ে প্রভাব পড়ে, সম্মানহানি হয়। কর্মস্থলে, পরিবারে বা পারস্পরিক সম্পর্কে সুখ-শান্তি-স্বস্তি-স্থিতিশীলতা এলেও, তা নিতান্তই ক্ষণস্থায়ী। অথচ আমরা প্রত্যেকেই মাধুর্য চাই, শান্তি চাই। কিন্তু অশান্তি-ঝঞ্ঝাট-বিশৃঙ্খলতা-উদ্বেগ-অ্যাংজাইটি আমাদের পিছু ছাড়ে না। এর জন্য দায়ী আমাদের ত্রুটিপূর্ণ বাস্তু, অতীত জীবন, কার্মিক মাইন্ড, নেতিবাচক চিন্তা। আজ পর্যন্ত এই পৃথিবীতে মানব যা কিছু ঘটিয়েছে, প্রত্যেকটি ঘটনার সূচনা মানব-মস্তিষ্কে। মানুষের চিন্তা একদিকে যেমন সবুজ বিপ্লবের জন্ম দিয়েছে, অন্যদিকে ডেকে এনেছে বিশ্বযুদ্ধের মত বিপর্যয়। ইতিহাস আমাদের শিখিয়েছে, চিন্তার স্পষ্টতা-ইতিবাচকতা না থাকলে সৃষ্টির উদ্দেশ্য যাই হোক, তার প্রয়োগ কল্যাণকর হয় না।
স্পষ্ট-ইতিবাচক চিন্তা লাভের উপায়
এই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে Symbol Meditation এবং শ্বাসক্রিয়া। চিহ্ন, মুদ্রা, বীজযুক্ত শব্দ, ধ্বনির প্রয়োগ, রং এবং শ্বাস- প্রত্যেকটিই মেডিটেশনে অপরিহার্য। শ্বাসক্রিয়ার পরিবর্তন কিভাবে আমাদের মানসিক স্থিতি, অনুভব দক্ষতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তার স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে পাতঞ্জলি যোগসূত্রে। এই বিষয়ে আজ আলোচনা করব। সাধারণত প্রতি মিনিটে আমরা ১২-১৫ বার শ্বাস নিই। যদি কোনও বিশেষ চেষ্টা ছাড়াই শ্বাস গ্রহণের হার কমিয়ে ১০ বার/মিনিট করা যায়, এক অদ্ভুৎ ইনটিউশন কাজ করতে থাকে। এমন কিছু পূর্বাভাস আমরা পাই, নিকট ভবিষ্যতে তেমনটাই ঘটে! শ্বাস গ্রহণের হার মিনিটে ৯ বারের কম হলে, মনুষ্যেতর নানান প্রাণী, কীটপতঙ্গের অনুভূতিও আমরা বুঝতে পারি। যখন প্রতি মিনিটে আমাদের শ্বাস গ্রহণ ৭ বারের নীচে নেমে আসে, অভ্যন্তরে-বহিরঙ্গে সর্বত্র ডিভাইন এনার্জি অনুভূত হয়। স্বামী বিবেকানন্দ, যীশু খ্রিস্ট যেমনটা অনুভূব করতে পারতেন। আর প্রতি মিনিটে আমরা যদি মাত্র ৫ বার শ্বাস নেওয়া অভ্যাসে পরিণত করতে পারি, আমরাই হয়ে উঠব শক্তি কেন্দ্র! আনন্দময় কোষে স্থিত সত্য-সুন্দরের প্রকাশ ঘটবে। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড, প্রকৃতি, স্রষ্টা নিজেই আমাদের সঙ্গে উদযাপনে মাতবেন। আমরা যা ভাবব, তাই হবে! 'অহম ব্রহ্মাস্মি', I AM THAT, THAT I AM! এমনটাই বলছে পাতঞ্জলি যোগসূত্র।
কিন্তু এতই কি সহজ এই অভ্যাস? যুগপুরুষের নিষ্ঠা-অধ্যাবসায় আমরা কি আয়ত্ত করতে পারি? নিয়মিত চর্চায় কিছুটা করায়ত্ত করতে পারি বৈকি! প্রতি মিনিটে ৫-৭ বার না হোক, শ্বাস গ্রহণের হার ৯-১০ বার/মিনিট অভ্যাস করা কিছুক্ষণের জন্য হলেও সম্ভব। নির্দিষ্ট কিছু ক্রিয়া এবং Guided Symbol Meditation (প্রয়োজনে বিশেষ মুদ্রা সহযোগে)-এর মাধ্যমে প্রতিদিন অন্তত দুই থেকে তিনবার আমরা শ্বাসপ্রণালী নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, আর তখনই নিজেকেও সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আর যখনই আমরা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব, ঘটনাপ্রবাহও অনায়াসে নিয়ন্ত্রিত হতে থাকবে।
এবার আসি মুদ্রা প্রসঙ্গে। বাস্তুতে যেমন ৫টি তত্ত্ব থাকে, আমাদের শরীর-মনেও তেমন। এই পঞ্চতত্ত্বের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা ঈশ্বর আমাদের হাতের আঙুলে দিয়েছেন। তর্জনিতে বায়ুতত্ত্ব, মধ্যমায় ব্যোমতত্ত্ব, অনামিকায় ক্ষিতিতত্ত্ব, কনিষ্ঠায় জলতত্ত্ব(অপ) এবং বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠে অগ্নিতত্ত্ব (চার্জিং স্টেশন) মজুত। যেমন তর্জনি, মধ্যমা এবং বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ একত্র করলে অর্থাৎ বায়ু+ব্যোম+অগ্নিতত্ত্ব (দুই হাতেরই) একত্র করে নির্দিষ্ট ধ্বনি এবং চিহ্ন প্রয়োগ করলে সহজেই অর্থাভাব মিটে যায়। এরূপ প্রয়োগবিধিকেই মুদ্রা বলে। পেশাদার জীবনে নানাবিধ সমস্যা সমাধানে আমি এরূপ ১৮টি বিশেষ মুদ্রা, নির্দিষ্ট ধ্বনি এবং চিহ্ন সহযোগে Symbol Meditation দেশ জুড়ে বহু মানুষকে শিখিয়েছি। মানুষের জন্মবৃত্তান্ত, বাস্তুর বিভিন্ন জ্যামিতিক আকার এবং মুদ্রা বিষয়ে আরও তথ্য পরবর্তী পর্বগুলিতে আপনাদের জানাব।
Guided Symbol Meditation এবং বাস্তু বিষয়ক পরামর্শ পেতে WhatsApp - 86173 72545 / 98306 83986 (Payable & Non-Refundable)
ডিসক্লেইমার: এটি একটি বিজ্ঞাপন প্রতিবেদন এবং বিজ্ঞাপনদাতার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত। প্রতিবেদনে প্রকাশিত সমস্ত বক্তব্য / মন্তব্য একান্তই বিজ্ঞাপনদাতার নিজস্ব। এর সঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনের সম্পাদকীয় দফতরের কোনও সম্পর্ক নেই। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই যাচাই করে নিন।