মৌসুমি সরকার
সকালে ঘুম থেকে উঠেই চায়ের কাপ নিয়ে খবরের কাগজে চোখ। একে একে বাড়ির সবার আবদার মেটানো। স্বামী, সন্তান, শাশুড়ির দেখভাল। আর পাঁচ জন গৃহিণীর মতোই ছিল জীবন। তবে সেই গৃহবধূর তকমা পিছনে ফেলে মৌসুমি সরকার আজ এক জন সফল ইউটিউবার।
প্রথম থেকেই শক্ত হাতে সংসারের হাল ধরেছিলেন মৌসুমি। বেশ আনন্দে আর খুশিতে দিন কাটতে থাকলেও কোথাও একটা শূন্যতা থেকেই যাচ্ছিল জীবনে। সেখান থেকেই কিছু করার ভাবনা। এবং যেমন ভাবা, তেমনই কাজ। মৌসুমি প্রথম থেকেই বুঝতে পেরেছিলেন সমাজমাধ্যম কী করতে পারে! প্রযুক্তির হাত ধরে সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। বর্তমানে এই প্ল্যাটফর্ম আত্মনির্ভরতার এক মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
এ নিয়ে চিন্তা ভাবনার প্রাথমিক পর্যায়েই মৌসুমী পাশে পেয়ে গেলেন স্বামী ও শাশুড়িকে। মৌসুমির কাছে এ যেন ছিল এক সীমাহীন পরিতৃপ্তি। ব্যস! স্বপ্নের পথচলা শুরু। শুরু করলেন নিজের ইউটিউব চ্যানেল – ‘বং সোলমেটস’।
বিষয়বস্তু খুবই সাধারণ। দৈনন্দিন জীবনের কার্যকলাপকেই দর্শকদের কাছে নিজের মতো করে ফুটিয়ে তুলতে থাকেন মৌসুমি। কখনও শাশুড়ি মায়ের অনবদ্য কিছু রেসিপি নিয়ে রান্নার ভিডিয়ো, কখনও বা ছেলে রিয়ানের জন্মদিন উদযাপনের গল্প। কখনও আবার বন্ধুদের সঙ্গে সপরিবার চড়ুইভাতি, কিংবা কখনও নিজের মনের মতো করে নিজেরই কোনও পুরনো ঘটনা — এমনই সব ছাপোষা অথচ আকর্ষণীয় একগুচ্ছ গল্প ভিডিয়োর আকারে দর্শকদের সঙ্গে শেয়ার করতে থাকেন মৌসুমি। ক্রমে এই কনটেন্টগুলিই সাধারণ দর্শকের ভাল লেগে যায়। ঝাঁ-চকচকে নয়, বরং এই সাদামাটা ভিডিয়োগুলির সঙ্গে কোনও না কোনও ভাবে নিজেদের জীবনের মিল খুঁজে পাচ্ছিলেন তাঁরা। মনে হচ্ছিল মৌসুমি যেন ঠিক পাশের বাড়ির মেয়েটি! ফলে খুব কম সময়েই জনপ্রিয়তা অর্জন করে ‘বং সোলমেটস’। ভাইরাল হয়ে যান মৌসুমিও।
মৌসুমি ও তাঁর পরিবার
এ ভাবেই চলতে থাকে স্বপ্ন পূরণের লড়াই। প্রথম থেকেই যার সঙ্গী ছিল গোটা পরিবার। তাঁদের হাতে হাত রেখে চলার প্রতিশ্রুতিই জীবনের সবটা বদলে দিয়েছিল মৌসুমির। গতে বাঁধা সংসার জীবন কখনওই তাঁর স্বপ্নকে আটকে রাখতে পারেনি। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ইউটিউব/ফেসবুক সফর চলতে থাকে রমরমিয়ে। কোনও ভিডিয়োয় বাড়িতে লক্ষ্মী পুজোর আয়োজন, কোনওটিতে লক্ষ্মীর ভাঁড় ভেঙে সেই টাকা দিয়ে বিদেশে যাওয়ার পরিকল্পনা। স্বামী-সন্তান নিয়ে মলদ্বীপে বেড়াতে যাওয়ার ভ্লগ অথবা বিয়ের গয়নার গল্প। মোমোর সুস্বাদ থেকে নচিকেতার চায়ের দোকান – সব ধরনের কনটেন্টই রয়েছে মৌসুমির চ্যানেলে।
শাশুড়ি মা’র সঙ্গে মৌসুমি
ইউটিউবারের জীবন ভালই কাটছিল মৌসুমির। ২০২২-এ একটি অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ তাঁর জীবনে এনে দেয় খুশির জোয়ার — ‘মেটা ক্রিয়েটর ডে’। ঘটনাচক্রে সে দিন ছিল মৌসুমির জন্মদিনও। তাঁর কথায়, “আমার কাছে দিনটার একটা বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এ যেন সেই সময়, যে সময়ের স্বপ্নে বার বার আমার ঘুম ভেঙে যেত। অনুষ্ঠানে কেক কাটা থেকে শুরু করে সম্মানিত হওয়া, বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ- সব কিছু নিয়েই কেটে গিয়েছিল দিনটা।”
বর্তমানে ১ লাখ ইউটিউব সাবস্ক্রাইবার্স এবং ৭০ হাজার ফেসবুক ফলোয়ার্স নিয়ে বড় পরিবার হয়ে চলেছে মৌসুমির। এই সংখ্যাগুলো তাঁর কাছে যেন স্বপ্নপূরণের মতো।
এ তো গেল ইউটিউবারের সফর। তা ছাড়াও মৌসুমির অন্য একটি পরিচয় রয়েছে। বর্তমানে তিনি এক জন সফল ব্যবসায়ী। তাঁর একটি বিপণি রয়েছে মধ্যমগ্রামে। নাম ‘ইনডালজেন্স’। বিভিন্ন ধরনের প্রসাধন সামগ্রী পাওয়া যায় এখানে। অনলাইন এবং অফলাইন— দুই মাধ্যমেই কেনাকাটার সুবিধা রয়েছে। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে মৌসুমি সংসার সামলেও নিজের ভিন্ন দুই পরিচিতি গড়ে তুলতে পেরেছেন এ ভাবেই। তাঁর এই লড়াইয়ের নেপথ্যে রয়েছে অদম্য জেদ। তাতেই তিনি আজ ‘সর্বজয়া’।
এই প্রতিবেদনটি 'উই মেক আস' -এর সঙ্গে আনন্দবাজার ব্র্যান্ড স্টুডিয়ো দ্বারা যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত।