Madhurima Bagchi

ফোটোগ্রাফার থেকে সফল উদ্যোগপতি, মধুরিমার লেন্সে ধরা পড়ে আগামীর স্বপ্ন

সব থেকে অভিনব বিষয়টি হল এই সংস্থা তাদের ক্লায়েন্টদের জন্য অরিজিনাল মিউজিক কম্পোজ করে দেয়। যাতে ক্লায়েন্টদের কোনও রকম কপিরাইটের সমস্যা না হয়। বলা বাহুল্য, কলকাতা তথা গোটা পূর্ব ভারতে ‘দিলশাদি’ই প্রথম এই ব্যবস্থা চালু করে।

এবিপি ডিজিটাল ব্র্যান্ড স্টুডিয়ো

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৩ ১৯:০৮
Share:

মধুরিমা বাগচী ও দিলশাদি

প্রথাগত ধারণায় এক সময়ে ফটোগ্রাফিকে পুরুষ সর্বস্ব পেশা বলেই মনে করা হত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই প্রথা ভেঙেছেন বহু মহিলা। তাঁদের লেন্সেই সুনিপুণ ভাবে সৃজনশীলতার সঙ্গে ফুটে উঠছে আশপাশের বিষয়বস্তু। সুচারু দক্ষতার সঙ্গেই সমাজের চিরাচরিত ধারণাকে প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে ফটোগ্রাফির দুনিয়ায় নিজের সুদৃঢ় পরিচিতি তৈরি করেছেন মহিলা ফটোগ্রাফার মধুরিমা বাগচী

দিলশাদি

শহর কলকাতা থেকে দিল্লি, মুম্বই বা বেঙ্গালুরু — চিত্রগ্রাহকদের দুনিয়ায় মধুরিমা বাগচী বর্তমানে বেশ পরিচিত নাম।

তবে যে পেশা আজ তাঁকে সুখ্যাতি দিয়েছে, সেই পেশা সম্পর্কে প্রথম থেকে খানিকটা ধন্দেই ছিলেন তিনি। ছোট থেকেই পড়াশোনায় তুখোড়। মধুরিমার ফটোগ্রাফি চর্চা শুরু হয়েছিল খানিকটা প্যাশনের বসেই। ভালবেসে ছবি তুলতেন। হাতে ক্যামেরা থাকার সুবাদে বন্ধু মহলেও বাড়ে পরিচিতি। কলেজে পড়ার সময় থেকেই পোর্টফোলিও এবং মডেল শ্যুট করে হাত পাকাতে থাকেন মধুরিমা। ফার্স্ট ক্লাস নিয়ে বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পর্ব শেষ করার পরে প্রাথমিক ভাবে পড়াশোনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবলেও ধীরে ধীরে উপলব্ধি করেন নিজের ভালবাসার বিষয়কেই পেশা হিসাবে বেছে নিতে চান। ব্যস! এর পর থেকে মধুরিমার জীবন জুড়ে শুধুই ফ্রেম, লাইট, অ্যাপারচার!

বলা হয়, চিত্রগ্রাহকের চোখ আসলে ঈগলের চোখ। সে আস্তাকুঁড় থেকে হিরের আংটি খুঁজে পেতে পারে। চোখধাঁধানো ছবি তোলার সুবাদে খুব কম সময়েই ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম-সহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে তাঁর কাজের সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। পরিচয় হয় আলোকচিত্রজগতের বহু নামী-দামী মানুষের সঙ্গে। ফলে তাঁর এগিয়ে যাওয়ার পথও খানিকটা প্রশস্ত হয়।

সেই সময়ে কলকাতায় প্রথম ফুড ডেলিভারি অ্যাপ তার যাত্রা শুরু করে। এখান থেকেই তিনি ডাক পান ফুড ফটোগ্রাফির জন্য। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তাঁর এই কাজ ফটোগ্রাফির ভাষায় যাকে বলে ‘ক্লিক’ করে যায়। কলকাতা ছাড়াও দিল্লি, মুম্বই-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ডাক আসতে শুরু করে। বিভিন্ন ইভেন্টে ক্রমাগত চলতে থাকে ফটোশ্যুট।

দিলশাদি

ফটোগ্রাফির পাশাপাশি এ বার ব্যবসায়ীর ভূমিকাতেও দেখা যায় মধুরিমাকে। ২০১৫ সালে তৈরি হয় তাঁর ওয়েডিং ফটোগ্রাফি সংস্থা ‘দিলশাদি’, মাত্র চার জন সদস্য নিয়ে। জীবনের বিশেষ অধ্যায়টিকে আরও স্মৃতিমধুর করে তুলতে অনবরত নতুন নতুন প্রয়াস করে চলেছে এই সংস্থা।

সব থেকে অভিনব বিষয়টি হল, এই সংস্থা তাদের ক্লায়েন্টদের জন্য অরিজিনাল মিউজিক কম্পোজ করে দেয়। যাতে ক্লায়েন্টদের কোনও রকম কপিরাইটের সমস্যা না হয়। বলা বাহুল্য, কলকাতা তথা গোটা পূর্ব ভারতে ‘দিলশাদি’ই প্রথম এই ব্যবস্থা চালু করে। এর পাশাপাশি বিয়ের অনুষ্ঠানে লাইভ মিউজিকের আয়োজনও করে থাকে এই সংস্থা। তা ছাড়াও ক্লায়েন্টদের জীবনকাহিনির উপর ভিত্তি করে প্রি-ওয়েডিং এবং ওয়েডিং থিমের কাজও করে ‘দিলশাদি’।

দিলশাদি

চলতি বছরে এই সংস্থা অষ্টম বর্ষে পদার্পণ করল। বর্তমানে ‘দিলশাদি’র সদস্য সংখ্যা ২৫। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অভিনব কায়দায় ওয়েডিং প্ল্যানিংয়ের কাজ করে চলেছে ‘দিলশাদি’। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও অন্য দু’টি রাজ্যেও নিজেদের প্রসারিত করেছে। এই সব কিছুই মধুরিমাকে সফল চিত্রগ্রাহকের পাশাপাশি এক জন উদ্যোক্তার পরিচিতিও এনে দিয়েছে।

দিলশাদি

চার দিকে নিজের সংস্থার সুনাম শুনে মধুরিমার উপলব্ধি, ‘মেয়েরা পারে না এমন কোনও কাজ হয়তো নেই।’ নিজের কাজ গর্ব এনে দিলেও এই সফলতা কখনও তাঁকে তৃপ্ত করতে পারে নি। নিজের কাজকে রোজ আরও অভিনব করে তোলার চিন্তায় মগ্ন তিনি। নিজের কাজকে অন্য মাত্রা দিতে প্রতিনিয়ত নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন।

তবে এত দিন ধরে যাঁরা তাঁর পাশে থেকেছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি মধুরিমা। তাঁদের প্রত্যেককে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন। নিজের কাজের প্রতি অবিচল থেকে তিনি এটাই প্রমাণ করেছেন যে, নিজেদের স্বপ্নের সঙ্গে কোনও আপস নয়। আজকের নারীদের কাছে তাঁর এই জীবন-সফর উদাহরণস্বরূপ। সেই পথেই আজ তিনি ‘সর্বজয়া’।

এই প্রতিবেদনটি 'উই মেক আস' -এর সঙ্গে আনন্দবাজার ব্র্যান্ড স্টুডিয়ো দ্বারা যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন