প্রতীকী চিত্র
এখন আট থেকে আশি- প্রায় সকলের মধ্যেই অতিরিক্ত ওজন এবং স্বাস্থ্যগত জটিলতা লক্ষ করা যায়। এই সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে স্থূলতা একটি মারাত্মক সমস্যা বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। কারণ অধিকাংশ জটিল রোগের শুরুর ধাপ স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন বাড়ার সঙ্গেই সম্পর্কিত। ওজন বাড়ে মূলত অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কারণে। বেনিয়মের জীবনযাপন, উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার বা অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড খাওয়া, কায়িক পরিশ্রম না করা ইত্যাদি তার তালিকায় পড়ে। এ ছাড়াও ওজন বৃদ্ধির একটি বড় কারণ হল ডিজিটাল ডিভাইসের উপর মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি। এর ফলে এক জায়গায় বসে দীর্ঘ ক্ষণ কাজ করার প্রবণতার সঙ্গে অতিরিক্ত মাত্রায় ওজনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর তার জেরে দেখা দিচ্ছে ডায়াবেটিস বা ব্লাড সুগার বৃদ্ধি, ব্লাড প্রেশার, রক্তে লিপিডের মাত্রা অর্থাৎ কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারিন বেড়ে যাওয়ার মতো জটিলতা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সমস্যাগুলি ছাড়াও ওজন বৃদ্ধির সঙ্গে মানসিক অবসাদের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। ওজন বাড়লে মানসিক অবস্থারও পরিবর্তন ঘটে। তার থেকে ঘিরে ধরে বিষণ্ণতা। বিশেষত নারীদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি। কারণ ওজন বৃদ্ধি হলে শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। তাই অনেকেই মনে করে এতে বাহ্যিক সৌন্দর্যও নষ্ট হয়।
ওজন বৃদ্ধি নারীদের হরমোনের জটিলতা-সহ বহু গুরুতর রোগ ডেকে আনে। যে সব নারীর ওজন অতিরিক্ত বেশি, তাঁদের মধ্যে সন্তান ধারণে অক্ষমতার হারও বেশি। অতিরিক্ত মেদ শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, যা ঋতুচক্র ও ডিম্বাণুর উপরে খারাপ প্রভাব ফেলে। ফলে বন্ধ্যত্বের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার এই বিষণ্ণতা বা অবসাদ থেকে অনেকে মিষ্টি-জাতীয় বা তৈলাক্ত খাবারের দিকে ঝোঁকেন, যা ওজন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আরও বেশি ক্ষতিকারক। বিশেষত মধ্যবয়সী নারীদের ক্ষেত্রে এই ধরনের প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
এই মানসিক অবসাদ দূরীকরণের জন্যে পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বেশ কিছু খাবারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যেমন- শস্যজাতীয় খাবার, আখরোট, তেলসমৃদ্ধ মাছ, মাশরুম, আপেল, কলা ইত্যাদি খেতে পারেন। এ ছাড়াও রয়েছে গ্রিন টি, যার অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট মানসিক চাপ কমাতে খুবই কার্যকরী। ডার্ক চকোলেটে থাকা পলিফেনল মানসিক অবস্থার উন্নতি ঘটায়। পালংশাকে উচ্চ মাত্রায় ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা ক্লান্তি ও বিষণ্ণতা দূর করে। টমেটোর ফলিক অ্যাসিড ওজন কমানোর পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটায়।
এ ছাড়াও বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক ওজন বজায় রাখার জন্য খাদ্য তালিকায় কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার যেমন ভাত, রুটি, আলুর পরিমাণ কমাতে হবে। পরিবর্তে লাল চাল, লাল আটা, ওটস খাদ্য তালিকায় যোগ করতে হবে। বেশি খেতে হবে সবুজ শাকসবজি। এ ছাড়া জরুরি দৈনিক আড়াই থেকে তিন লিটার জল পান, আট ঘণ্টা ঘুম এবং নিয়মিত ব্যায়াম। তা হলেই এই অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির সমস্যার পাশাপাশি মানসিক অবসাদ থেকেও সহজে মুক্তি মিলবে।