Educaton

ডিজিটাল এইচআর টুলের হাত ধরে বিপ্লব ঘটাচ্ছে এল এইচআর ৪.০

এই বিপ্লবের অবিচ্ছেদ্য অংশ হল এইচআর ৪.০। মূলত এটি ম্যানুয়াল, ব্যুরোক্র্যাটিক এবং এইচআর কর্মীদের সময়সাপেক্ষে স্ট্র্যাটেজি থেকে ডিজিটাল এইচআর অ্যাকশনে পরিবর্তন করে।

অধ্যাপক কঙ্কনা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৩ ১২:২৬
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় প্রতিনিয়ত বিপ্লব ঘটছে ডিজিটাল দুনিয়ায়। তৈরি হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস।

যে সমস্ত পেশাদাররা এই নতুন ক্ষেত্রটিতে উন্নতি করতে চান, তাঁদের ডোমেইনে প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে একই পর্যায়ে থাকতে হবে। কারণ প্রতিযোগিতার মধ্যে লড়াই জারি রাখা অত্যন্ত জরুরি।

আর এই বিপ্লবের অবিচ্ছেদ্য অংশ হল এইচআর ৪.০। মূলত এটি ম্যানুয়াল, ব্যুরোক্র্যাটিক এবং এইচআর কর্মীদের সময়সাপেক্ষে স্ট্র্যাটেজি থেকে ডিজিটাল এইচআর অ্যাকশনে পরিবর্তন করে। বিভিন্ন উদ্ভাবনী প্রযুক্তির মাধ্যমে এই পরিবর্তনকে সক্রিয় করে তোলা হয়। যেমন, ইন্টারনেট অফ থিংস (আইওটি), বিগ ডেটা, ব্লকচেইন, আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স, মেশিন লার্নিং ইত্যাদি।

এইচআর ৪.০ –এর প্রাথমিক ধারণা হল ওয়ার্কফ্লো বা কর্মপ্রবাহকে ডিজিটাইজ অর্থাৎ প্রযুক্তি নির্ভর করে তোলা। সুতরাং, কাগজ বিহীন, প্রযুক্তি চালিত, কর্মযোগ্য এবং পরিমাপযোগ্য প্রক্রিয়া তুলে ধরাই মূল উদ্দেশ্য। আর এটি স্ম্যাক (এসএমএসি) অর্থাৎ সামাজিক, মোবাইল, বিশ্লেষণ ও ক্লাউডের ব্যবহারে সম্ভবপর হয়েছে।

বর্তমানে এইচআর ডোমেইন অনলাইনেই পরিচালিত হয়। নেপথ্যে বিভিন্ন ডিজিটাল টুল। গতানুগতিক কাঠামোগত কাজ থেকে বেরিয়ে এবং কাজের পুনরাবৃত্তি রুখে দিয়ে উৎপাদনশীলতা আরও উন্নত করে তোলার কাজ করা হয়। অতএব, এইচআর কর্মীদের জরুরি সময় বরং স্ট্র্যাটেজি বা কৌশলগত কাজে বিনিয়োগ করা যেতে পারে।

এই পুরো বিষয়টিকে ডেভিড আলরিচের ‘এইচআর মডেল’–এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ মনে করা হয়। যেখানে প্রযুক্তির সঙ্গে এইচআর ডোমেইনকে ‘স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার’ হিসাবে তুলে ধরা হয়। অন্য ভাবে বলা যায়, পুরনো এইচআর সিস্টেম, যা কখনও কর্মীদের মতামতকে খুব একটা গুরুত্ব দেয় না বা কর্মচারীদের অভিজ্ঞতা বাড়াতে সক্ষম নয়, তেমন সিস্টেম থেকে দূরে সরে যাওয়া।

মার্কিন সংস্থাগুলির মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ, শূন্যপদ পূরণ করতে অটোমেশনের মাধ্যমে এআই সফটওয়্যারের দ্বারা পদপ্রার্থী খোঁজা থেকে শুরু করে সাক্ষাৎকার, প্রার্থীদের সম্পর্কিত তথ্য নিষ্কাশন ইত্যাদি করে থাকে। প্রায় ৪০ শতাংশ চিনা সংস্থা চ্যাটবটের মাধ্যমেই অনলাইনে সাক্ষাৎকার নিয়ে থাকে। এআই টুল ব্যবহারের মাধ্যমে নিয়োগকর্তারা উপযুক্ত প্রার্থী নির্বাচনের জন্য ভয়েস মডুলেশন, অভিব্যক্তির নির্ভুলতা, প্রসঙ্গের সমৃদ্ধতা, মুখের অভিব্যক্তি, অঙ্গভঙ্গি এবং সাক্ষাৎকারের বাইরের আলোচিত বিষয় ইত্যাদি ট্র্যাক করতে পারে যাতে ভবিষ্যতে চাকরি সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর আচরণের পূর্বাভাস পাওয়া যায়। এবং এর ফলে আদর্শ প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া আরও সহজ হয়ে উঠবে।

বর্তমানে সংস্থাগুলি এক্সেল ফাইলে কর্মীদের রেকর্ড রাখার বদলে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স এবং মেশিন লার্নিং চালিত সিস্টেমে রেকর্ড রাখে। এমনকী কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি মতো জটিল সমস্যাগুলিও বট দ্বারা পরিচালিত হয়। এইচআরএমএস–এ চ্যাটজিপিটি–এর আবির্ভাবের কারণে এটা আশা করা যায় যে এইচআরএম অপারেটিভ ফাংশনগুলির বহুমুখীতা আরও বেড়ে যাবে।

অ্যানালিটিক্স দ্বারা চালিত ডিজিটাল এইচআর কর্মীদের তাদের খোঁজার পরিবর্তে সুপারিশ করতে পারে।

উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, এলএমএস -এ শেখার সুপারিশ রয়েছে যা কর্মীদের কর্মজীবনের আকাঙ্খাগুলিকে তাঁদের বর্তমান দক্ষতা এবং কর্মক্ষমতার সঙ্গে সারিবদ্ধ করে তোলে। এলএমএস অর্থাৎ লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ব্যবহারের মাধ্যমে কর্পোরেট ট্রেনিং পরিচালনা পদ্ধতি আরও সহজ হয়ে উঠেছে।

অনবোর্ডিং গেমিফিকেশন ব্যবহার করে নতুন নিযুক্ত করা প্রার্থীদের অবস্থান পরিমাপ ও ট্র্যাকিংয়ের ফলে শুধুমাত্র ড্রপআউটের পূর্বাভাসই দেয় তা নয়, পাশাপাশি প্রতিভাবান প্রার্থীদের কার্যকরভাবে নিযুক্ত করতে পারে।

কর্মচারীদের মনোবল বোঝার জন্য প্রযুক্তির মাধ্যমে কর্মীদের কথা শুনতে উন্নত ধরনের টুল ব্যবহার করা হয়। যেমন আইবিএম –এ সোশ্যাল পালস ইউনিলিভারে ওপিএ অর্থাৎ অর্গানাইজেশন পিপল অ্যানালিটিক্স।

ডিজিটাল এইচআর টুলস দ্বারা চালিত এইচআর ৪.০ সংস্থাগুলি ডিজিটাল নেতৃত্বের বিকাশ, প্রক্রিয়াগুলির সঙ্গে প্রযুক্তি পরিচালনা, কর্মচারী এবং স্টেকহোল্ডারদের অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি, সক্রিয় ও ব্যক্তিগত শিক্ষার প্রয়াস গড়ে তোলা যায়। এর পাশাপাশি সিস্টেমে বৈচিত্র্য অ্যানা যায়।

সম্প্রতি হাভার্ড বিজনেস স্কুলের গবেষণায়, গবেষকরা কর্মীদের খুঁজে বের করার জন্য এআই এবং এমএল–এর উপর জোর দিয়েছেন। আমেরিকা, ইউকে এবং জার্মানির মতো দেশে অনেক সম্ভাব্য চাকরিপ্রার্থীরা চাকরির সুযোগ শনাক্ত করতে পারছে না। সেই প্রতিভাগুলি খোঁজার জন্য কাঠামোগত প্রক্রিয়ার প্রয়োজন। এবং চাকরিপ্রার্থীরা কী ভাবে এই প্রক্রিয়াগুলি অনুভব করছে বা সেগুলি কী ভাবে আরও উন্নত করা যায়, তার জন্য মূল্যায়ন প্রয়োজন।

যাই হোক, কিছু পরিস্থিতিতে এআই নেতিবাচক ফিল্টার হিসাবেও কাজ করে। সংস্থাগুলি কোনও চাকরিপ্রার্থীর কর্মজীবনে ৬ মাস বা তার বেশি ব্যবধান থাকলে সেই প্রার্থীদের বাদ দেওয়ার মতো ভেরিয়েবলগুলি নির্দিষ্ট করে অথবা নির্দিষ্ট যোগ্যতা না থাকলে প্রার্থীদের বাদ দেওয়া হয়, যাঁরা হয়ত সংস্থার জন্য উপযুক্ত হতে পারত। এই বিষয়গুলি সঠিকভাবে ফিল্টার করা যায় না।

নির্দেশ অনুযায়ী প্যাটার্নের খোঁজ করে এআই। সমালোচনামূলক নিয়োগের সিদ্ধান্ত এবং অন্যান্য এইচআর সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য ব্যবসা পরিচালকদের বিষয়ভিত্তিক রায়কে এআই–এর অন্তর্দৃষ্টির সঙ্গে পরিপূরক হতে হবে। এইচআর পেশাদারদের জন্য এটা বড় সুযোগ। ডিজিটাল এইচআর সলিউশনের মাধ্যমে বর্তমান ব্যবসায়িক অনুশীলনের মূল্যায়ন, নির্দিষ্ট দক্ষতার ঘাটতি চিহ্নিত করা ইত্যাদি সমস্যার সমাধান করে সংস্থার ডিজিটাল এইচআরের দুনিয়ায় অবদান রাখতে পারবে।

ডিজিটাল মানসিকতা, ডিজিটাল দক্ষতা এবং ডিজিটাল ঝুঁকির প্রবৃত্তিসহ ডিজিটাল এইচআর পেশাদারদের হিউম্যান রিসোর্সের সঙ্গে বিভিন্ন স্ট্র্যাটেজিতে অবদান রাখতে হবে যা আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসবে। আর এগুলি করতে হবে এম্বেডেড প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল উদ্ভাবন ব্যবহারের মাধ্যমে। সংস্থার লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তাদের কর্মজীবনের প্রয়োজনীয়তা পূরণের মাধ্যমে তারা কর্মচারীদের অভিজ্ঞতাকে ডিজিটাইজ করবে। উদ্দেশ্য একটাই, আরওআই এবং রিটেনশন উন্নত করা।

কঙ্কনা মুখোপাধ্যায় প্র্যাক্সিস বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক। প্র্যাক্সিস বিজনেস স্কুলে দুই বছরের পিজিডিএম প্রোগ্রামে ডিজিটাল এইচআর–এর উপরে স্পেশালাইজেশন কোর্স করানো হয়। এখানে এইচআর বিভাগে পেশাদার তৈরির উপর জোর দেওয়া হয়, যাঁরা প্রযুক্তির মাধ্যমে ডিজিটাল দুনিয়ার জন্য নতুন যুগের সমাধান নিয়ে আসতে পারেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন