নোভা আইভিএফ ফার্টিলিটি সেন্টার
ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন অথবা আইভিএফ হল এক ধরনের ফার্টিলিটি ট্রিটমেন্ট। কোনও মহিলা স্বাভাবিক ভাবে গর্ভধারণে অপারক হলে, এই চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে তাঁর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার সম্ভাবনা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। আজ থেকে ৪০ বছর আগে আইভিএফ পদ্ধতির মাধ্যমে প্রথম কোনও শিশুর জন্ম হয়। পরবর্তী কালে প্রজনন সংক্রান্ত চিকিৎসা প্রযুক্তি আরও আধুনিক হয়েছে। বন্ধ্যত্বের কারণে যাঁরা সন্তানের জন্ম দিতে পারেন না, তাঁদের জন্যে আইভিএফ খুবই সফল এক উপায় হয়ে উঠেছে। এই পদ্ধতিতে সাফল্যের হার বেশি হওয়ার কারণে আইভিএফ খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। প্রতি দিন আরও বেশি সংখ্যক দম্পতি এই চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে জানতে আগ্রহী হচ্ছেন। দুর্ভাগ্যবশত আইভিএফ-এর এই জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কিছু ভ্রান্ত ধারণাও তৈরি হয়েছে তা নিয়ে।
কী সেই সব ভুল ধারণা? সেই বিষয়েই কথা বললেন নোভা আইভিএফ ফার্টিলিটির মেডিক্যাল ডিরেক্টর, চিকিৎসক রোহিত গুটগুটিয়া
কী সেই সব ভুল ধারণা? এক বার দেখে নেওয়া যাক—
ধারণা ১: IVF করালে একাধিক সন্তানের জন্ম হয়
বাস্তব: এটা ঠিক যে স্বাভাবিক সন্তান ধারণের তুলনায় IVF-এর ক্ষেত্রে ‘মাল্টিপল প্রেগন্যান্সি’র সম্ভাবনা বেশি থাকে। তবে সব সময়ে যে একাধিক সন্তানের জন্ম হবেই, তার কোনও মানে নেই। সন্তান ধারণের সম্ভাবনা বাড়ানোর লক্ষ্যে IVF পদ্ধতিতে জরায়ুতে দুই থেকে তিনটি ভ্রুণ স্থানান্তরিত করা হয়, সেই কারণেই মাল্টিপল প্রেগন্যান্সির সম্ভাবনা খানিকটা বেশি থাকে।
সন্তানের জন্ম দেওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে আগে IVF চিকিৎসায় একাধিক সুস্থ ভ্রুণ প্রতিস্থাপন করা হতো। কিন্তু এখন প্রযুক্তি আরও আধুনিক হয়েছে। একাধিক ভ্রুণ স্থানান্তকরণ গর্ভপাত এবং নির্ধারিত সময়ের আগেই সন্তান জন্মের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। আপনি আলাদা করে কিছু না বলে দিলে ইদানীং সাধারণত এক বারে একটিই সুস্থ ভ্রুণ স্থানান্তকরণের জন্য বেছে নেওয়া হয়। এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, IVF-এর মাধ্যমে ‘মাল্টিপল প্রেগন্যান্সি’ হওয়ার সম্ভাবনা মাত্র ১০ শতাংশ। জরায়ুতে কেবল মাত্র একটা ভ্রুণ স্থানান্তরের পন্থা বেছে নিলে সেই সম্ভাবনা একেবারেই থাকে না।
ধারণা ২: IVF যে কোনও বয়সে করা যেতে পারে
বাস্তব: কথায় আছে, বয়স স্রেফ সংখ্যা মাত্র। ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশনের ক্ষেত্রে এ কথা বলা ঠিক হবে না। অনেক দম্পতিই বিশ্বাস করেন, যে কোনও বয়সে তাঁরা IVF পদ্ধতির সাহায্য নিতে পারেন। কিন্তু তা মোটেই নয়। IVF ট্রিটমেন্ট সফল হওয়ার ক্ষেত্রে বয়স অবশ্যই একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সন্তান ধারণের ক্ষমতাও কমতে থাকে। IVF-এর সফল হওয়ার ক্ষেত্রেও সেই একই কথা বলা যায়।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এক জন মহিলার প্রজনন ক্ষমতার অবনতি হতে থাকে। তাই IVF পদ্ধতির সাহায্য নিয়েও তিনি যে একটি সুস্থ ভ্রুণ তৈরির জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ডিম্বাণু উৎপাদন করতে পারবেন, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। এমনকি, সেই মহিলার জরায়ু সন্তান বহনের জন্য সবল না-ও হতে পারে। কিছু কিছু দম্পতির ক্ষেত্রে একাধিক বার IVF পদ্ধতির দ্বারস্থ হওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। স্বাভাবিক নিয়মে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার যেমন কোনও নিশ্চয়তা নেই, IVF-এর ক্ষেত্রেও তা-ই। আপনার বয়স এবং আপনার সঙ্গীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে আপনাদের ক্ষেত্রে IVF-এর সফল হওয়ার সম্ভাবনা কতটা, সে বিষয়ে একমাত্র চিকিৎসকই জানাতে পারবেন।
ধারণা ৩: IVF শুধুমাত্র বন্ধ্যাত্বের সমস্যায় ভোগা দম্পতিদের জন্য
বাস্তব: এ কথা ঠিক যে, সেই সব মহিলাকেই IVF-এর মাধ্যমে সাহায্য করা হয়, যাঁরা সাধারণ ভাবে অন্তঃসত্ত্বা হতে পারেন না। তবে তার মানে এই নয় যে, শুধুমাত্র বন্ধ্যত্বের সমস্যা থাকলেই আপনি IVF-এর সাহায্য নিতে পারেন। যদি আপনার অথবা আপনার সঙ্গীর কোনও জিনগত সমস্যা থাকে, যার দরুন আপনাদের সন্তানের স্বাস্থ্য বিঘ্নিত হতে পারে, তা হলেও আপনারা IVF-এর কথা ভাবতে পারেন। সমকামী যুগলও সন্তানের জন্ম দিতে চাইলে দু’জনের মধ্যে কোনও এক জন DNA ব্যবহার করে IVF-এর সাহায্য নিতে পারেন। এর জন্য আপনাদের কোনও এক জনকে শুক্রাণু বা ডিম্বাণুদাতা হতে হবে।
ধারণা ৪: বন্ধ্যত্বের সমস্যায় ভুগলে IVF-ই সন্তানের জন্ম দেওয়ার একমাত্র উপায়
বাস্তব: আপনার অথবা আপনার সঙ্গীর জিনগত সমস্যা না থাকলে কিংবা আপনারা সমকামী যুগল না হলে, স্বাস্থ্যকর সন্তানের জন্মের জন্য IVF-এর দ্বারস্থ না-ই হতে পারেন। আপনার এবং আপনার সঙ্গীর পুঙ্খানপুঙ্খভাবে ফার্টিলিটি মূল্যায়নের পরেই IVF-এর দ্বারস্থ হোন, তা ছাড়া নয়। IVF-এর চেয়ে অনেক সহজ পদ্ধতিও আছে। যেমন শারীরিক গঠনে কোনও সমস্যা থাকলে অস্ত্রোপচার, হরমোনের ভারসাম্যে গণ্ডগোল থাকলে সেই অনুযায়ী ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমেও সুরাহা মিলতে পারে। কৃত্রিম ভাবে শুক্রাণু রোপণ বা আর্টিফিশিয়াল ইনসেমিনেশনও করাতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কোনও যৌন সংযোগ ছাড়াই ডোনার অথবা সঙ্গীর শুক্রাণু জরায়ুতে প্রবেশ করানো হয়।
ধারণা ৫: গর্ভধারণের জন্য ওষুধ খেলে ক্যানসার হয়
বাস্তব: IVF কিংবা অন্যান্য ফার্টিলিটি চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করলে আপনার স্তন ক্যানসার অথবা জরায়ুর ক্যানসার হতে পারে– এমন ধারণার সাপেক্ষে কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। পরিপক্ক ডিম্বাণু তৈরি জন্য যে ওযুধ দেওয়া হয়, তার জেরে প্রোজেস্টেরন কিংবা ইস্ট্রোজেনের মাত্রার ওঠাপড়া হতে পারে। এটা সত্যি যে আপনার শরীরে ‘ফিমেল ফ্যাক্টর ইনফার্টিলিটি’ থাকলে আপনার জরায়ুর ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়, কিন্তু তার সঙ্গে ফার্টিলিটি চিকিৎসার কোনও সম্পর্ক নেই। বর্তমানে প্রজন্মের ক্ষেত্রে যে জিনগত কারণে বন্ধ্যাত্ব হয়, তার থেকেই জরায়ুর ক্যানসারের আশঙ্কা বাড়ে বলে মনে করা হয়।
এই প্রতিবেদনটি ‘নোভা আইভিএফ ফার্টিলিটি সেন্টার’-এর সঙ্গে আনন্দবাজার ব্র্যান্ড স্টুডিয়ো দ্বারা যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত।