‘জনসনস্ বেবি’
ভারতীয় পরিবারে সদ্যোজাত শিশুকে তেল মালিশ করার রেওয়াজ আজকের নয়। প্রাচীনকাল থেকেই এমনটা হয়ে আসছে। স্নানের ঠিক আগে শিশুদের রোদে শুইয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত যত্ন নিয়ে মা-ঠাকুমারা তেল মালিশ করে দিতেন, এ কথা আমাদের সকলেরই জানা। তেল মালিশ করলে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। পাশাপশি তা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকেও ভাল রাখে এবং শিশুর ওজন বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।
সঠিক পদ্ধতিতে তেল মালিশ শিশুদের জন্যও বেশ আরামদায়ক এবং তা রক্ত সঞ্চালনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক সময়ে এবং সঠিক উপায়ে তেল মালিশ করলে শিশুর হাড় ও পেশী মজবুত হয়।
তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শিশুকে তেল মালিশ করার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করা দরকার। শিশুকে সবসময়ই মৃদুভাবে, কোনওরকম চাপ প্রয়োগ না করে তেল মালিশ করা উচিত।
প্রথমে, শিশুর মাথার উপরে অল্প ‘জনসনস্ বেবি অয়েল’ দিয়ে আলতো চাপ দিতে পারেন। তবে আপনার শিশুর মাথার নরম স্থানের দিকে বিশেষ নজর ও যত্ন দেবেন এবং এই অংশে চাপ প্রয়োগ করবেন না।
‘জনসনস্ বেবি অয়েল’
এরপর হাতে অল্প তেল নিয়ে আলতো ভাবে আপনার শিশুর কপাল থেকে কানের দিকে আস্তে আস্তে আপনার আঙুল সরান। পাশাপশি শিশুর ভ্রু, গাল, এবং নাকের উপরে মৃদু চাপ প্রয়োগ করতে পারেন।
এই বার ধীরে ধীরে বুক থেকে পেটের দিকে নামুন, পেটে তেল মালিশ করার পর আপনার শিশুর হাঁটুকে ধরে পেট পর্যন্ত ভাঁজ করুন এবং কোমল ভাবে চাপ প্রয়োগ করুন। প্রায় ৩০ সেকেন্ডের জন্য বেশ কয়েক বার ধরে এটি করতে পারেন। এরপর নাভির নীচের দিকে পেটে তেল মালিশ করুন। এটি শরীরে জমা গ্যাস বার করে দিতে সাহায্য করে।
শিশুর পিঠে তেল মালিশ করার সময়ে শিশুকে আগে আদর করে কোলে তুলে নিন। তারপর শিশুর মাথা আপনার কাঁধে রেখে আলতো হাতে ঘাড় থেকে শুরু করে নীচের দিকে ধীরে ধীরে হাত নামান। এইভাবেই বেশ কিছুক্ষণ মালিশ করুন। আপনার আঙুলের সঙ্গে একটি বৃত্তাকার গতিতে আপনার শিশুর মেরুদণ্ডে মৃদু চাপ প্রয়োগ করুন। তারপর শিশুকে উল্টোভাবে শুইয়ে দিয়েও এই পদ্ধতিতে কিছুক্ষণ তেল মালিশ করতে পারেন, আপনার শিশুও তাতে আরাম বোধ করবে।
এরপর হাতে অল্প তেল নিয়ে শিশুর পা দু’টি আলতোভাবে ধরুন এবং উরু থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত নীচের দিকে ধীরে ধীরে চাপ প্রয়োগ করুন। এবং বিপরীত দিকে হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নীচের দিকে নামিয়ে আনুন। মালিশ করার সময় আপনার শিশুর হাঁটুর চারপাশে বৃত্তাকার গতিতে মালিশ করুন।
শিশুকে তেল মালিশ করার সঠিক সময়:
শিশুকে তেল মালিশ করার সময়ে সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড় ব্যবহার করা উচিত। পাশাপশি হাত পরিষ্কার করে ধুয়ে নিন এবং নজর রাখুন তেল মালিশ করার সময় আপনার হাতে যেন কোনও গয়না না থাকে, তাতে তেল মালিশের সময় শিশুর ত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। এ ছাড়াও শিশুকে সবসময় খাওয়ার অন্তত ৪৫ মিনিট পর তেল মালিশ করা উচিত। কারণ এই সময়ে শিশুদের পেট ভরা থাকে না। এ ছাড়াও খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল শিশুকে তেল মালিশ করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন সম্পূর্ণভাবে ঘরে আলো প্রবেশ করতে পারে এবং শিশুর মুখ যেন স্পটভাবে দেখা যায়। তাই আলো বাতাস চলাচল করে সবসময় এমনই স্থানই শিশুর তেল মালিশের জন্যে শ্রেয়। সপ্তাহে দু’বার থেকে তিনবার নির্দিষ্ট সময় মেনে তেল মালিশ করা হলে শিশুও এই বিষয়টিতে অভ্যস্ত হয়ে যাবে।
শিশুর তেল মালিশ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সদ্য মা হওয়া মহিলাদের জন্যে সম্প্রতি একটি প্রচার কর্মসূচি চালিয়েছিল ‘জনসনস্ বেবি’,#firstmassagekitaiyari। সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে প্রায় ১ হাজার পোস্টের সূত্রে প্রায় ৯ হাজারেরও বেশি মায়েরা এই প্রচার কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সর্ষের তেল বা অলিভ অয়েল শিশুর মালিশে ব্যবহার করা উচিত নয়।
অলিভ অয়েল এবং সর্ষের তেলে অলিক অ্যাসিড বেশি থাকে। এই অলিক অ্যাসিড শিশুর ত্বকে প্রবেশ করলে শিশুর ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে উঠতে পারে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, শিশুদের জন্যে সব সময়েই ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ একটি হালকা তেলই নির্বাচন করা উচিত। ঐতিহ্য ও পরম্পরার নিরিখে অনেকেই সর্ষের তেল বা অলিভ অয়েল ব্যবহারের পক্ষে পরামর্শ দেন। কিন্তু নবজাতকের ত্বকের সুরক্ষার বিষয়ে এই তেলের কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।
এই সমীক্ষায় আরও জানা গিয়েছে যে, প্রায় ৪৪ শতাংশ মায়েরা তাঁদের শিশুর নিত্যদিনের তেল মালিশের জন্যে নারকেল তেলের মতো হালকা ধরনের তেলই পছন্দ করেন। তবে, ৩০ শতাংশ মা এখনও অলিভ অয়েল এবং সর্ষের তেল ব্যবহার করেন। এই তেলগুলি খুব ভারী হয়, যা শিশুর কোমল ত্বকের জন্যে ক্ষতিকারক হতে পারে। তাই শিশুদের কোমল ত্বকের যত্নের দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে বিশেষজ্ঞের পরামর্শকে অগ্রাধিকার দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুকে তেল মালিশ করলে কী কী উপকার পাবেন?
১. শিশুর স্বাস্থ্যের জন্যে তেল মালিশ অত্যন্ত উপকারী।
২. শিশুর গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ক্রিয়াকলাপের উন্নতিতে সাহায্য করে।
৩. স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত রাখে।
৪. শিশুর শ্বাসের উন্নতির মতো শারীরবৃত্তীয় উপকারিতা এনে দেয়।
৫. হাড় শক্ত করে।
৬. ত্বকের পুষ্টি প্রদান করে।
‘ফার্স্টক্রাই প্যারেন্টিং’ সমীক্ষার তথ্যের উপর ভিত্তি করে জানা গেছে যে, প্রায় ৪০ শতাংশ মায়েদের কাছে, সদ্যোজাত শিশুদের তেল মালিশ করার সঠিক পদ্ধতি শেখা তাঁদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করতেই ‘জনসনস্ বেবি’,#firstmassagekitaiyari এই পদক্ষেপ নিয়েছে। কারণ, সঠিক তেলে সঠিক উপায়ে তেল মালিশ আপনার শিশুর শারীরিক উন্নতির বিকাশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিশদে জানতে ভিজ়িট করুন: https://www.johnsonsbaby.in/protectfromdayone
এই প্রতিবেদনটি ‘জনসনস্ বেবি’—এর সঙ্গে আনন্দবাজার ব্র্যান্ড স্টুডিয়ো দ্বারা যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত।