বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের রিজার্ভ চুরির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। আগামী বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। রবিবার মন্ত্রীর কার্যালয়ে দি ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাত শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।
অর্থমন্ত্রী বলেছেন, “বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন আগামী বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। প্রতিবেদন আমার হাতে আছে। নির্ধারিত দিনে তা জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে।”
উল্লেখ্য, এর আগে বেশ কয়েক বার এই প্রতিবেদন জনসমক্ষে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। প্রতি বারই প্রতিশ্রুতি রাখতে ব্যর্থ হন তিনি। গত মাসেও একবার তিনি বলেছিলেন ২৪ সেপ্টেম্বরের আগেই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হবে।
গত মাসে সচিবালয়ে বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট সেলিমা আহমাদের নেতৃত্বে ব্যবসায়ী সংগঠনটির একটি প্রতিনিধিদল অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। তখন অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, “২৪ সেপ্টেম্বর আমি ওয়াশিংটন যাব। তার আগেই রিজার্ভ চুরির প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হবে। রিপোর্ট পাবলিকেশনে দেরির একটা কারণ হচ্ছে, কিছু অ্যাকশন পর্যবেক্ষণে আছে। এর আগে এটি বেরিয়ে গেলে কিছুটা সমস্যা তৈরি হতে পারে।”
গত ফেব্রুয়ারিতে সুইফ্ট মেসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশের রিজার্ভের আট কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপিন্সে সরিয়ে নেওয়া হয়। বিষয়টি চেপে রাখায় সমালোচনার মুখে গভর্নরের পদ ছাড়তে বাধ্য হন আতিউর রহমান। বড় ধরনের রদবদল হয় কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের শীর্ষ পর্যায়ে।
এরপর রিজার্ভ চুরির ঘটনা তদন্তে সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে গত ১৫ মার্চ তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে সরকার। ওই কমিটি ৩০ মে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করে। অর্থমন্ত্রী ওই সময় জানান, বাজেটের কারণে তিনি ব্যস্ত। বাজেটের পর প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। কিন্তু বাজেটের পর তা প্রকাশ করা হয়নি।
এর আগে তদন্ত কমিটির অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনে বলা হয়, রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক কর্মকর্তাদের দায়িত্বে গাফিলতি ছিল। গত ৪ ফেব্রুয়ারি যারা ডিলিং রুমে ছিলেন, তাঁদের দায়িত্বে অবহেলা রয়েছে। তাঁরা পেমেন্ট সিস্টেমে জটিলতার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাননি।
এমনকী ৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্বরত কর্মকর্তারা কম্পিউটার সচল করতে না পারার পরও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেননি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পরে টের পেলেও তা সরকারের কাছে গোপন করে। তাই অর্থ চুরিতে বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলা ছিল বলে মনে করছে তদন্ত কমিটি।
আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর ১৮ দিনের সরকারি সফরে বিদেশে যাবেন অর্থমন্ত্রী। তিনি সৌদি আরব থেকে নেদারল্যান্ডস হয়ে যুক্তরাষ্ট্র যাবেন। সেখানে আগামী ৮-৯ অক্টোবর বিশ্ব ব্যাঙ্কক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দেবেন তিনি। ১২ অক্টোবর অর্থমন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা রয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
আরও পড়ুন: Wondering which Kolkata Durga Puja pandals to see?
‘আইসিটি ফর ডেভেলপমেন্ট’ পুরস্কার পাচ্ছেন সজীব ওয়াজেদ জয়
চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৬৩,২৪,৯১,৬০৯ টাকা (তেষট্টি কোটি চব্বিশ লক্ষ একানব্বই হাজার ছয়শত নয় টাকা) ডিজিটাল পদ্ধতিতে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি করা হয়। বিপুল এই অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে গচ্ছিত ছিল।
রিজার্ভ চুরির ঘটনার অনেক পরে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে ফিলিপিন্সের কিছু সংবাদমাধ্যমের সূত্রে এই ঘটনাটি গণমাধ্যমের সামনে আসে। তখন জানা যায়, হ্যাকাররা ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক হিসাব থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ১ বিলিয়ন ডলার চুরির চেষ্ঠা করে। তাও যখন বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের কার্যালয় বন্ধ ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের সহজ পরিচালনা পদ্ধতি ও ব্যাঙ্কের কিছু কর্মকর্তার সহোযোগিতায় তারা সহজে হ্যাক করে বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের হয়ে ৩৫টি অর্থ স্থানান্তরের আবেদন জমা দেয়। এই আবেদনগুলির মধ্যে মাত্র ৫টি আবেদন কার্যকর করে অর্থ ফিলিপিন্স ও শ্রীলঙ্কায় নিয়ে যায়। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপিন্সের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাঙ্ক কর্পোরেশনের মাধ্যমে জালিয়াতি হয়েছে এবং পরে তা জুয়া বাজার ঘুরে হংকংয়ে স্থানান্তরিত হয়। বাকি ২০ মিলিয়ন ডলার শ্রীলঙ্কা থেকে উদ্ধার করে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
এই ঘটনার পর কেলেঙ্কারির জেরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান পদত্যাগ করেন। এরপর বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ নিউ ইয়র্ক ফেডারেল ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ইঙ্গিত ঘোষণা দেয়। অন্য দিকে ফেডারেল ব্যাঙ্ক জানায়, অর্থ স্থানান্তরের সব আবেদন বৈধ ছিল, সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ওই সব আবেদন করা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত নিউ ইয়র্ক ফেডারেল ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে মামলা করেনি বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক।