বসুন্ধরার এই সাত তলা আবাসনের ছ’তলায় এক মাস ধরে থাকছিল গুলশনের হামলাকারীরা। ছবি সৌজন্যে: বাংলা ট্রিবিউন।
গুলশনে হামলাকারী জঙ্গিদের তালিকায় ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের নাম। ঢাকার নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটির নাম আরও এক বার জড়িয়ে গেল গুলশন হামলার সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক গিয়াসুদ্দিন আহসান গ্রেফতার হলেন নিজের অ্যাপার্টমেন্টে জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে। গ্রেফতার করা হয়েছে সহ-উপাচার্যের ভাগ্নে এবং অ্যাপার্টমেন্টের ম্যানেজারকেও।
ঢাকা মহানগর পুলিশের পদস্থ কর্তা মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন, শনিবার বিকেলে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে। কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স-ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের একটি দল তাঁদের গ্রেফতার করে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ৬ নম্বর রোডে ই ব্লকের টেনামেন্ট-থ্রি-তে এ-৬ ফ্ল্যাটটির মালিক অধ্যাপক গিয়াসুদ্দিন আহসান। ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রের খবর, ওই ফ্ল্যাটই ভাড়া দেওয়া হয়েছিল গুলশনের হামলাকারীদের। চলতি বছরের মে মাসে ওই ফ্ল্যাটটি জঙ্গিরা ভাড়া নিয়েছিল। জুন থেকে তারা ফ্ল্যাটটিতে থাকতে শুরু করেছিল। গুলশনের হোলি আর্টিজান বেকারিতে যে সাত জন হামলা চালাতে গিয়েছিল, তারা ছাড়াও বেশ কয়েকজন ওই ফ্ল্যাটে ছিল বলে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সূত্রের খবর। গুলশনে হামলা হওয়ার পর তারা ওই ফ্ল্যাট ছেড়ে পালিয়ে যায় বলে জানা গিয়েছে।
নর্থ-সাউথের সহ-উপাচার্য। ছবি: বাংলা ট্রিবিউন।
প্রশাসনিক নির্দেশিকা অনুযায়ী, বাড়ি ভাড়া দেওয়ার আগে বাড়ির মালিককে ভাড়াটের পরিচয় সংক্রান্ত তথ্য বিশদে সংগ্রহ করতে হবে। পুলিশকেও ভাড়াটে সম্পর্কে সব তথ্য জানিয়ে রাখতে হবে। কিন্তু নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য বসুন্ধরার ফ্ল্যাটটি ভাড়া দেওয়ার পর, ভাড়াটেদের সম্পর্কে কোনও তথ্য পুলিশকে জানাননি। এমনকী গুলশনের হামলার পরও বিষয়টি নিয়ে কোনও তথ্য অধ্যাপক আহসান পুলিশকে জানতে দেননি। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বসুন্ধরার ওই আবাসনে অভিযান চালায় কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। ফ্ল্যাটটি থেকে জঙ্গিদের ব্যবহৃত পোশাক, বালিভর্তি কার্টন এবং জঙ্গিদের ব্যবহত নানা সরঞ্জাম উদ্ধার হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
আরও পড়ুন: ওরা কাফের, হত্যা করাই যাবে: দেখুন ফেসবুকে জঙ্গির সঙ্গে কথোপকথন!
গোটা ঘটনায় অধ্যাপক আহসানকে তাঁর ভাগ্নে আলম চৌধুরী সহযোগিতা করেছিলেন বলেও পুলিশ মনে করছে। অ্যাপার্টমেন্টের ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান তুহিনও বিষয়টি গোপন করেছিলেন। গুলশনের হামলায় জঙ্গিরা নিহত হওয়ার পর তাদের ছবিও প্রকাশ্যে এসে গিয়েছিল। ছবি দেখেও অ্যাপার্টমেন্টের ম্যানেজার চিনতে পারেননি যে এই জঙ্গিরা এত দিন বসুন্ধরার ওই আবাসনেই থাকছিল, তা পুলিশ ও গোয়েন্দারা মানতে পারছেন না। তাই ম্যানেজারের ভূমিকা মোটেই সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয় বলে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট মনে করছে।
নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য আতিকুল ইসলাম রবিবার বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। প্রথমে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের নাম উঠে এসেছে হামলাকারী জঙ্গিদের তালিকায়। তার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্যের বিরুদ্ধে জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়া বা তথ্য গোপন করার অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একেবারে অন্দরমহল পর্যন্ত সন্ত্রাসবাদ যে ভাবে শিকড় ছড়িয়েছে, তাকে ‘ক্যানসার আখ্যা দিয়েছেন উপাচার্য। তবে তাঁর আশ্বাস, ‘‘এই ক্যানসার আমরা দ্রুত অপারেশন করে ফেলব।’’