প্রতিবাদ: স্কুল ইউনিফর্ম পরেই বিক্ষোভে শামিল ছাত্রেরা। নিজস্ব চিত্র
রাস্তায় ঝাঁকে ঝাঁকে পড়ুয়া। অনেকের পরনে স্কুলের ইউনিফর্ম। সকলের পিঠে স্কুলের ব্যাগ। দিনভর এই খুদেদের কাজকর্মে অস্তব্যস্ত হয়ে পড়ল ঢাকার জনজীবন। ব্যস্ত রাজধানীর অবাধ্য ট্রাফিক ব্যবস্থাকে বশে আনতে রাস্তায় নেমেছে স্কুলছাত্ররা। মন্ত্রীর গাড়ি উল্টোপথে আসায় আটকে ঘুরিয়ে দিয়েছে তারা। লাইসেন্স না-থাকায় পুলিশের গাড়িও থামিয়ে দিয়েছে। কাগজপত্র পরীক্ষা করে সন্তুষ্ট হতে না-পেরে চাবি কেড়ে নিয়েছে বেশ কিছু চালকের। চার দিন ধরে এই অবস্থা চলতে থাকায় বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার।
ঘটনার সূত্রপাত রবিবার। এই দিন বিমানবন্দর সড়কে তিনটি বেপরোয়া বাসের রেষারেষির জেরে প্রাণ হারায় দুই ছাত্রছাত্রী। ঢাকায় বেপরোয়া যান চলাচল নিয়ে অভিযোগ বহু দিনের। কিন্তু সাংবাদিক সম্মেলনে বাস শ্রমিক সংগঠনের নেতা নৌমন্ত্রী শাহজাহান খানকে দুর্ঘটনাটি নিয়ে প্রশ্ন করায় তিনি হাসতে হাসতে বলেন, ‘‘ভারতের মহারাষ্ট্রে তো দুর্ঘটনায় ৩৩ জন মারা গিয়েছেন!’’ এর পরেও তিনি হাসি মুখেই নানা কথা বলে চলেন, যার সারমর্ম— এমন দুর্ঘটনা হয়েই থাকে।
কিন্তু ক্ষিপ্ত স্কুলছাত্ররা পরের দিন থেকে রাস্তায় নেমে বাস ভাঙচুর করতে থাকে। তিন দিনে প্রায় ৩০০ বাস ছাত্রদের হাতে ভাঙচুর হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বও ছিনিয়ে নেয় ছাত্ররা। বাস ভাঙচুরের পরে তাদেরই দেখা গিয়েছে ঝাড়ু দিয়ে ভাঙা কাচ সরিয়ে দিতে। বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং নৌমন্ত্রীকে তিরস্কার করেন। মন্ত্রী হাসির জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন।
বুধবারেও শয়ে শয়ে ছাত্র ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করতে নামে। এর মধ্যেই একটি গাড়ি এক দল ছাত্রকে চাপা দিয়ে চলে যায়। বিক্ষোভের আঁচও উস্কে ওঠে। বিকেলে প্রবীণ মন্ত্রী তোফায়েল আহমদের গাড়ি বিধি ভেঙে ‘ওয়ান ওয়ে’ রাস্তার উল্টো মুখে যেতে গিয়ে ধরা পড়ে। মন্ত্রী গাড়ি থেকে নেমে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। ছাত্ররা বলতে থাকেন, মন্ত্রীর গাড়ি বিধি ভাঙলে বাকিরা কী শিক্ষা নেবেন? ছাত্ররা গাড়ি থামিয়ে লাইসেন্স ও গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা করতে থাকে। মেয়াদ ফুরোনো লাইসেন্স দেখানোয় রাস্তাতেই গাড়ি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশের একটি গাড়িও আটকে দেওয়া হয় চালক লাইসেন্স দেখাতে না-পারায়। সেটির গায়ে ‘লাইসেন্স নেই’ লিখে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
শাসক দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওয়ায়দুল কাদের ইতিমধ্যেই বিক্ষোভ ছেড়ে স্কুলে ফিরে যাওয়ার জন্য ছাত্রদের উদ্দেশে আবেদন করেছেন। কিন্তু কেউ কর্ণপাত করেনি। বুধবার সন্ধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, অরাজকতা নিয়ন্ত্রণে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকবে।