মুখোমুখি: বিক্ষোভকারীদের মোকাবিলায় ঢাকার রাস্তায় মোতায়েন পুলিশ। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণের হার কমানোর দাবিতে ছাত্রদের বিক্ষোভ রবিবার গভীর রাতে হিংসাত্মক হয়ে উঠল। পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধে বেশ কয়েক জন ছাত্র জখম হন। এক ছাত্র মারা গিয়েছেন বলে গুজব ছড়ানোর পরে বিক্ষোভকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালিয়ে আসবাবপত্র টেনে বার করে আগুন লাগিয়ে দেয়। সকালে বিক্ষোভ দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ার পরে দুপুরে শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। তার পরে দাবি বিবেচনার আশ্বাস পেয়ে ৭ মে পর্যন্ত বিক্ষোভ স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করেন আন্দোলনরত ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’-এর নেতারা।
বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ বাড়তে বাড়তে ৫৬%-এ পৌঁছেছে, যার মধ্যে ৩০%-ই মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য। সাধারণের জন্য চাকরিতে আবেদনের সর্বোচ্চ বয়ঃসীমা যেখানে ৩০, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে ৩২। সাধারণ ছাত্রদের বহু দিনের দাবি, মুক্তিযুদ্ধের সন্তানদের জন্য কোটা কমিয়ে ১০% করতে হবে। আবেদনের ক্ষেত্রে সকলের একই বয়ঃসীমা রাখতে হবে। এক শ্রেণির কোটায় প্রার্থী পাওয়া না-গেলে অন্য শ্রেণি থেকে তা পূরণ না-করে সাধারণ প্রার্থীদের সুযোগ দিতে হবে। পাঁচ দফা এই দাবি নিয়ে সাধারণ ছাত্ররা শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ও পোস্টার নিয়ে রবিবার সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে শাহবাগ চত্বরে অবস্থানে বসেন। তাঁদের দাবি ছিল, সে দিনই সংসদের অধিবেশনে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ঢাকার ব্যস্ত মোড়ে অবস্থানের কারণে শহরে যানজট ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ বেশ কয়েক বার তাঁদের সরাতে এলে ছাত্ররা পাল্টা গোলাপ ফুল তুলে দেন।
কিন্তু বেশি রাতে ছাত্ররা অনির্দিষ্ট কাল অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা করলে পুলিশ তাঁদের সরাতে লাঠি ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে। অভিযোগ, শাসক দলের সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীরাও পেছন থেকে হামলা চালায়। ছাত্রী নিবাসের কয়েকশো আবাসিক আন্দোলনকারীদের পাশে নেমে আসেন। পুলিশ এ বার রবারের বুলেট ছোড়ে। তাতে কয়েক জন ছাত্র জখম হওয়ার পরে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায়। কয়েক জন পুলিশও জখম হন। এই সময়েই এক ছাত্র মারা গিয়েছেন বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ায় কিছু বিক্ষোভকারী উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালান। কয়েকটি গাড়িও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
সকালে বিক্ষোভ গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন শহরে ছাত্ররা রাস্তা অবরোধ করেন। বিকেলে দলের কিছু নেতাকে নিয়ে আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। তাঁদের দাবি বিবেচনা করা হবে, এমন আশ্বাস পেয়ে ৭ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করা হয়।
সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে জানানো হয়, শেখ হাসিনা সংরক্ষণ নিয়ে অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। ওবায়দুল কাদের জানান, সরকার জখম ছাত্রদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিচ্ছে। কিন্তু উপাচার্যের বাড়িতে হামলাকারীদের কঠোর শাস্তি
পেতে হবে। বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ করে ছাত্রলীগের তিন জন নেতা সংগঠন থেকে
পদত্যাগ করেছেন।