তস্কররা রেহাই পেল কোথায়। বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের রিজার্ভ লুটে পগার পার হতে গিয়েও পারল কই। একে একে ধরা পড়ল তদন্তের জালে। চালে চালাকি কম ছিল না। এমন ভাবে সুইফট কোড জালিয়াতি করেছিল হয়ত অধরাই থেকে যেত। চুরি ধরতেই অনেক দেরি হয়ে যায়। সময়ে দুষ্কৃতীদের নিষ্কৃতির সুযোগও বাড়ে। না না করে ন'মাস পর আসামিরা ফাঁদে। আস্তে আস্তে ফেরত দিচ্ছে হাতানো অর্থ। লম্বা-চওড়া র্যাকেট। এশিয়া থেকে আফ্রিকা। সামনে দাবার বোড়ে। পেছনে রাজা-মন্ত্রী। বোড়ে ধরেই কেল্লাফতে। অপরাধীর অপরাধ স্বীকার। অর্থ ফেরতের গ্যারান্টি।
আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব নিউইয়র্কে যে অ্যাকাউন্ট আছে বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের তাতেই নজর পড়েছিল হ্যাকারদের। তারা ছড়িয়ে ছিল দুনিয়ার কোণে কোণে। সুতোর টানে সময় মতো এক হত। নিবিড় যোগাযোগ রেখে চলত। আটঘাট বেঁধে অপারেশনটা চালায় ফেব্রুয়ারিতে। তুলে নেয় ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার। সুক্ষ কাজ। এতগুলো ডলার চলে গেল, টের পেল না কেউ। বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের গভর্নর পর্যন্ত অন্ধকারে। রুটিন চেকআপে হিসেবের কড়ি হিসেব করতে গিয়েই চক্ষু চড়কগাছ। বিস্ময়ের ঘোর কাটতেই অনেকটা সময়। প্রথম চিন্তা, ফাঁকটা পূরণ হবে কী করে। কষ্টার্জিত বিদেশিমুদ্রা অদৃশ্য হলে তো সংকট অনিবার্য। গোটা ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার ওপর তার প্রভাব পড়তে বাধ্য। সে সময় দৃঢ়তা দেখালেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংসদে ঘোষণা করলেন, চিন্তার কিছু নেই। শূন্যতা ঢাকা যাবে অচিরেই। কী ভাবে সম্ভব বলেননি। সমাধানের প্রধান সূত্র যে রফতানি বাড়ানো, বুঝতে অসুবিধে হয়নি। সেটা বাড়ছিল সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই। তাতেই অনেকটা ফাঁক ভর্তি। তাই বলে, চুরির তদন্ত থামেনি। বরং সেটা আরও জোরদার করা হল। বাংলাদেশের তদন্তকারীরা ছুটলেন এদেশ থেকে সেদেশে। হদিশ মিলল হ্যাকারদের।
তদন্তে স্পষ্ট হল, চুরির শিকড় ফিলিপিন্সে। জুয়াড়ি কিম অং তার পান্ডা। তার দেশ চিন, ব্যবসা ফিলিপিন্সে। অবৈধ কাজে সিদ্ধহস্ত। চুরির সঙ্গে জড়িয়ে নেয় ফিলিপিন্সের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাঙ্ককে। ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার জমা পড়ে ওই ব্যাঙ্কেই। সঙ্গে সঙ্গে সব ডলার ফিলিপিন্সের দেশীয় মুদ্রা পেসোতে পাল্টে ফেলা হয়। ধরা পড়ে কিম জানিয়েছে, ধীরে ধীরে আত্মসাৎ করা অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। প্রথম দফায় কিম ফেরত দিয়েছে ৪৮ কোটি ৮২ লাখ পেসো। যেটা ডলারে এক কোটি। সেই সঙ্গে ডলারে পাওয়া গেছে ৪৬ লাখ ৩০ হাজার। সব মিলিয়ে মোট ১ কোটি ৪৬ লাখ ডলার বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে। আরও বাড়বে। একটু সময় লাগবে। ফিলিপিন্সের ক্যাসিনোতে ঢুকেছে ২ কোটি ৯০ লাখ ডলার। মানি এক্সচেঞ্জ সংস্থা ফিলরেমে রয়েছে এক কোটি ৭০ লাখ ডলার। ফিলিপিন্স অ্যামুজমেন্ট অ্যান্ড গেমিং কর্পোরেশন 'প্যাগকর'-এ আছে ২৪ লাখ ডলার। এসব অর্থ ফিরে পাওয়া যাবে অবিলম্বে। বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল নিয়ে ফিলিপিন্স সফর করেছেন। কথা বলেছেন বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। ফিলিপিন্স সরকার সম্পূর্ণভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। অর্থ ফেরত পেতে কী আইনী ব্যবস্থা নেওয়া যায় সে নিয়েও কথা হয়েছে। শ্রীলঙ্কা সরকার জানিয়েছে, তাদের প্যান এশিয়ান ব্যাঙ্কে যে দু'কোটি ডলার জমা পড়েছিল তা ফেরত দেওয়ার পর আরও কিছু করার থাকলে তারা করতে রাজি। অর্থ ফেরতের সঙ্গে আসামিদের আদালতে তোলার ব্যবস্থা হচ্ছে। সবই চলছে দ্রুতগতিতে। সময় নষ্ট করার সময় নেই।
আরও পড়ুন: শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে সাব্বির, আল আমিনকে রেকর্ড অর্থদণ্ড