দুষ্টের দমনের মতোই তিনি কঠোর উন্নয়ন প্রশ্নেও, রামপালে বোঝালেন হাসিনা

বিরোধী বাঁধটা বালির। যুক্তির আঘাতে গুঁড়োতে সময় নিল না। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রমাণ করলেন, ঠুনকো কথায় শিল্পের ঠাঁই বদলের মতো নেত্রী তিনি নন। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়াটা অবধারিত।

Advertisement

অমিত বসু

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৩:৪৬
Share:

বিরোধী বাঁধটা বালির। যুক্তির আঘাতে গুঁড়োতে সময় নিল না। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রমাণ করলেন, ঠুনকো কথায় শিল্পের ঠাঁই বদলের মতো নেত্রী তিনি নন। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়াটা অবধারিত। তার বিশ বছরে উন্নত দেশের মর্যাদা। রুখতে চাইছে বামেরা। বামেদের দোসর দক্ষিণপন্থীরাও। হাসিনাকে বেকায়দায় ফেলে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার মতলব। হাসিনার বজ্রবাণে সব ছাই। ভারত বিদ্বেষকে কটাক্ষ করে হাসিনার মন্তব্য, ভারত বিরোধিতা করতে ওরা যা খুশি তাই বলে। ভারতের থেকে কিছু আদায়ের হিম্মৎ নেই। সেটা আমরাই করেছি। আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে সমুদ্রসীমায় বিজয় এনেছি। ভারতের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময় হয়েছে। বিরোধীদের মনভোমরা পড়ে আছে ১২শো মাইল দূরে পাকিস্তানে। তারা শুধু দেশে বসে ওপরে ওপরে ভারত বিরোধী, আবার ওদিকে গিয়ে ভারতের পা ধরছে।

Advertisement

সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে বাগেরহাটের রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। কয়লাতেই উৎপাদন। পাওয়া যাবে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এটি বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রকল্প। বাংলাদেশের সরকারি সংস্থা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড আর ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানির সমান মালিকানা। তাদের যৌথ কোম্পানির নাম বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি। সেটা বন্ধ করার বিরোধী প্রয়াসকে চ্যালেঞ্জ হাসিনার।

প্রকল্পে সুন্দরবন ধ্বংসের অভিযোগ উড়িয়ে বলা হয়েছে, পরিবেশ নষ্টের কোনও প্রশ্ন নেই। মানুষের ক্ষতি নয়, উন্নতিতেই এই নির্মাণ। এলাকায় কোনও স্থায়ী বসতি ছিল না। কাউকেই উচ্ছেদ করা হয়নি। বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বরাদ্দ ৯১৫ একর। ৪১৫ একরে মূল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বাকি জায়গায় সোলার প্যানেল বসবে, সবুজায়ন হবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল মানুষের আর চুরি করে গাছ কাটার দরকার হবে না। কোম্পানি থেকে বছরে ৩০ কোটি দেওয়া হবে তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে। লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান নিয়ে চিন্তা থাকবে না। আন্তর্জাতিকভাবে গভীর বনভূমির ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র না করার আইন আছে। এটা হচ্ছে ১৪ কিলোমিটার দূরে। অসুবিধে কোথায়!

Advertisement

বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা সরবরাহের জন্য প্রয়োজন সস্তা পরিবহণ ব্যবস্থা। সে কারণে প্রকল্পটি হওয়া দরকার কয়লাখনির কাছাকাছি, সমুদ্র উপকূল অথবা গভীর নদীর তীরে। সেটা মাথায় রেখেই জায়গাটা বাছা। কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরিতে আপত্তির কোনও কারণ নেই। আমেরিকা, ফ্রান্স, জার্মানি, চিন, জাপান, ভারতে কয়লাতেই বিদ্যুৎ হয় ৪০ থেকে ৯৮ শতাংশ। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার ব্যবহার এক শতাংশের সামান্য বেশি। কয়লা আসবে অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। তার গুণগত মান খুব বেশি।

বিদ্যুৎকেন্দ্রে শব্দ দূষণের সম্ভাবনা নেই। শব্দ ২০০ মিটারেই সীমাবদ্ধ থাকবে। নদী দূষণ অসম্ভব। পশুর নদীর দু’হাজারের ভাগের এক ভাগ জল দরকার হবে। নাব্যতা বজায় রাখতে ড্রেজিং চলবে নিয়মিত। নদীর জল ব্যবহারের পর শীতল করে নদীতে ফেলা হবে। পশুপক্ষীর ক্ষতি যাতে না হয়। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সব দিক থেকে নিরাপদ। আমেরিকার ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ায় কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র ন্যাশনাল পার্কের এক কিলোমিটারের মধ্যে। ভিয়েতনাম, জাপান, তাইওয়ান, জার্মানির বিদ্যুৎকেন্দ্র জনবসতির কাছাকাছি। তুলনায় রামপাল জনপদ থেকে অনেক দূরে। অরণ্যের জীবজন্তুর নাগালের বাইরে। অর্থের সমস্যাও কাটিয়ে ওঠা যাবে। এক্সিম ব্যাঙ্কের ৭০ শতাংশ টাকা দেওয়ার কথা। না দিলে নিজস্ব ক্ষমতায় অর্থায়ন। রামপাল চলবে নিজের চালে, কোনও বাধার তোয়াক্কা না করেই।

আরও পড়ুন

একাত্তরের ঘাতক মৃতদেহ হয়ে বেরোলেন জেল থেকে

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement