জামাত নেতা মির কাসেম আলির ফাঁসির আদেশ বহাল থাকল বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টে।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ মঙ্গলবার এই রায় দিয়েছেন। মিরের ফাঁসির আদেশ বহাল থাকার প্রতিবাদে বুধবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে জামাত।
’৭১-এর মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর জামাত-ই-ইসলামির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মির কাসেমকে ফাঁসির আদেশ দেয় দু’নম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মিরের বিরুদ্ধে যে ১৪টি অভিযোগ আনা হয়েছে, তার মধ্যে ট্রাইব্যুনালে ১০টি প্রমাণিত হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছিলেন মির কাসেম। গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে তার শুনানি শুরু হয়, শেষ হয় ২৪ ফেব্রুয়ারি। পরে রায় ঘোষণার জন্য ৮ মার্চ তারিখ ধার্য করেছিলেন আদালত।
২০১২ সালের ১৭ জুন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মির কাসেমকে গ্রেফতার করা হয়।
আরও পড়ুন- বড় রায়ের আগে মন্ত্রীদের দাবড়ানি হাসিনার
যে অভিযোগের ভিত্তিতে মিরের ফাঁসির রায় বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট, তাতে বলা হয়েছে, ’৭১-এ ঈদ উৎসবের পর এক দিন মির কাসেমের নির্দেশে আল-বদররা মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে অপহরণ করে। এর পর তাঁকে ডালিম হোটেলে বন্দি রেখে নির্যাতন ও পরে তাঁকে হত্যা করা হয়। পরে ডালিম হোটেলে নির্যাতনে নিহত আরও পাঁচ জনের সঙ্গে জসিমের লাশ কর্ণফুলি নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।
কী ভাবে উত্থান হয়েছিল ওই জামাত নেতা মিরের?
মুক্তিযুদ্ধের কট্টর বিরোধী জামাতের শীর্ষস্থানীয় নেতা মির কাসেম একাত্তরে ছিলেন দলটির ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্র সংঘের চট্টগ্রাম শহর শাখার সভাপতি। একই সঙ্গে তিনি একাত্তরের কুখ্যাত গুপ্ত ঘাতক আল-বদর বাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধানও ছিলেন। মিরের নেতৃত্বেই মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম শহরের আন্দর কিল্লা এলাকার ডালিম হোটেলে গড়ে ওঠে আল-বদর বাহিনীর ক্যাম্প ও নির্যাতন কেন্দ্র। মুক্তিযুদ্ধের সময় নৃশংসতার জন্য মির কাসেমের নাম দেওয়া হয় ‘বাঙালি খান’।
মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৭ সালে ইসলামি ছাত্র সংঘ নাম বদল করে হয় ছাত্র শিবির। মির কাসেম ছিলেন ইসলামি ছাত্র শিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ওই সময় থেকে তিনি জামাতের রাজনীতিকে শক্তিশালী করতে দলটির অর্থনৈতিক ভিত্তি শক্ত করার জন্য উদ্যোগ নিতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে তিনি জামাতের অর্থের অন্যতম জোগানদার হয়ে ওঠেন।