পুলিশের বড়সড় সাফল্য।—প্রতীকী ছবি।
কী করবে ভেবে পাচ্ছে না জামাত। পা রাখার মাটি নেই। নড়াচড়া বন্ধ। লাফ দিয়ে এগোন দূরের কথা, আলতো করে পা ফেললেও ফ্লপ। শতকরা একশো সদস্যই নিরাপত্তা বাহিনীর ফোকাসে। চুনোপুঁটিরাও স্পটলাইটে। ঝকঝকে তরুণদের সামনে রেখে কাজ উদ্ধার করা যাচ্ছে না। পুলিশের খপ্পরে পড়ে সব ছক ফাঁস। এপার-ওপার করা যাচ্ছে না। সীমান্তে কড়া পাহারা। যেটুকুতে বেড়া নেই, সেখানেও এক বছরে হয়ে যাবে। প্রতিশ্রুতি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের।
মানুষকে একবার বোকা বানানো যায়, বারবার নয়। জামাত বাঙালিকে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখিয়েছিল। তারা বলেছিল, আমরা সব শেষ করতে চাই নতুন করে শুরু করতে। বিপথগামী সমাজকে পথে ফেরাব, দুর্বল দেশকে সবল করব। সব মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোয় টেনে আনব। তাদের কথায় বিশ্বাস করেছিল উচ্চবিত্তের একটা অংশ। যারা স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করে, তারা আরও সুখের আশা করেছিল। গরীবগুর্বোরাও ভরসা পেয়েছিল। ভেবেছিল, সুদিন আনবে জামাত। দারিদ্র থেকে মুক্তি পেয়ে তারাও স্বর্গরাজ্যের বাসিন্দা হবে। জামাতের স্তোকবাক্য থেকে একমাত্র দূরে ছিল মধ্যবিত্ত। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কেরিয়ার তৈরি করতে গিয়ে তারা বুঝেছিল, সাফল্য আকাশ থেকে পড়ে না। সন্ত্রাসীরা জন্নত নয়, সব ধ্বংস করে নরক গুলজার করতে চাইছে। যাতে গণতন্ত্র নির্বাসন দিয়ে তারা ক্ষমতা দখল করতে পারে। মধ্যবিত্ত শ্রেণি জাতিচেতনার বড় স্তম্ভ, সন্ত্রাসী আর সামরিক শাসকরা সেটা জানত। মধ্যবিত্ত শ্রেণি যাতে তৈরি হতে না পারে তার চেষ্টা ছিল বরাবরই। অবৈধ উপার্জনের রাস্তায় বিত্তবান গোষ্ঠী গড়েছে। বাকিরা ধুলোয় লুটোপুটি খেয়েছে। মৌলবাদকে প্রশ্রয় দিয়ে ধর্মীয় বিভাজনকে প্রকট করেছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট: মায়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ুক
সে দিন আর নেই। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ছবি বদলেছে। অস্থির রাজনীতি থেকে মুক্তি পেয়ে সোজা পথে হাঁটার সুযোগ এসেছে। হঠাৎ আঙুল ফুলে কলাগাছ নয়, ঐকান্তিক পরিশ্রমে ভবিষ্যত নির্মাণ। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে দেশকে চালানোর অঙ্গীকার। সরকারি উদ্যোগে অভাবনীয় উন্নয়ন। দেশে-বিদেশে বাংলাদেশি তরুণদের সাফল্য। বিদেশ থেকে পাঠানো বাংলাদেশিদের রেমিট্যান্সে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। রাজনীতিতে গণতন্ত্রের ভিত শক্ত।
এসব চক্ষুশূল জামাতের। সবাই কেন উপরে উঠবে। দু'চারজন আকাশ ছোঁবে, বাকিরা নীচে পড়ে থাকবে। হাতে গোনা লোকের স্বেচ্ছাচারিতায় দেশ চলবে। সাধারণের টুঁ শব্দ করার অধিকার থাকবে না। হাসিনার সর্বজনীন ভাবনা ভাঙতে ঢাকার গুলশনে ১ জুলাই হামলা জামাতের। নিরীহ প্রাণ হত্যার প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে দেশ। সরকারের সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানে ছিন্নভিন্ন জামাতের জঙ্গিরা। এ ভাবে চললে জামাত তো উঠে যাবে। নাশকতায় ফিরতে জামাতের মহিলারা দলের হাল ধরেছে। গোপন বৈঠক করছে। যদি কোনও হামলা চালানো যায়। তারও শেষ রক্ষা হল না। পুলিশের জালে ধরা পড়ল জামাতের ২৮ নারী সদস্য। ঢাকার মোহম্মদপুরে ১১/৭ তাজমহল রোডের বাড়ির দোতলার ফ্লাটে তারা জড়ো হয়েছিল হামলার নতুন ছক কষতে। এসেছিল বাড্ডা, আদাবর, তেজগাঁও, শেরেবাংলা থেকে। কাউকেই অশিক্ষিত বলা যাবে না। তাদের বেশিরভাগই স্কুল-কলেজের শিক্ষক নয়ত চিকিৎসক।
শিক্ষিত হয়েও অন্ধকার বয়ে আনার দায়িত্ব নিচ্ছে কেন সেটাই আশ্চর্যের। কারওরই টাকাপয়সার অভাব নেই। বিত্তশালী পরিবারের সদস্য সবাই। সমস্যা একটাই, কেউই মধ্যবিত্ত পরিবারের নয়। মাটিতে পা রেখে চলতে চায় না। উড়তে চায় স্বপ্নের নেশায়। পরিণতি না জেনেই অপরিণত উড়ান। নিশ্চিত জীবন থেকে পতন। এবার রুট বদলের সময় এসেছে। নতুন ছাঁচে নিজেদের গড়ে উন্নয়নের শরিক হলে ক্ষতি কী!