ঢাকায় হত জঙ্গিদের এক জন সেই নিবরাসের বন্ধু এবং মার্কিন নাগরিক

ঢাকা কল্যাণপুরের ডেরায় নিহত জঙ্গিদের অধিকাংশের শরীরেই গুলি লেগেছে পিছন দিক থেকে। জানিয়েছেনময়নাতদন্তকারী দলের প্রধান, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, “নিহতদের প্রত্যেকের শরীরে ৬-৭টি করে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঢাকা শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৬ ১৮:৫০
Share:

এই সেই বাড়ি, যেখানে অভিযান চালিয়ে ৯ জঙ্গিকে মেরেছে বাংলাদেশের বাহিনী। ছবি: এএফপি।

ঢাকা কল্যাণপুরের ডেরায় নিহত জঙ্গিদের অধিকাংশের শরীরেই গুলি লেগেছে পিছন দিক থেকে। জানিয়েছেনময়নাতদন্তকারী দলের প্রধান, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, “নিহতদের প্রত্যেকের শরীরে ৬-৭টি করে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও মাথায় আঘাত লেগেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। নিহতের অধিকাংশের শরীরে বুলেট ঢুকেছে পেছন দিক দিয়ে।”

Advertisement

বুধবার বেলা সওয়া ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নয় নিহত জঙ্গির দেহের ময়নাতদন্ত করেন চিকিৎসকরা। চারজনের শরীর থেকে সাতটি করে, একজনের শরীর থেকে তিনটি, একজনের শরীর থেকে দুটি এবং বাকিদের শরীর থেকে একটি করে বুলেট বের হয়েছে।

কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কে তাজ মঞ্জিল নামের ছ’তলা একটি বাড়িতে ঘাঁটি গাড়া জঙ্গিদের বিরুদ্ধে গত সোমবার রাতে অভিযান চালায় বাংলাদেশ পুলিশ। পাঁচ তলায় ডেরা বেঁধেছে জঙ্গিরা, খবর পেয়েছিল পুলিশ। অভিযানে নেমেই পড়তে হয় হামলার মুখে। মঙ্গলবার ভোরে অভিযানে যোগ দেয় বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সশস্ত্র বাহিনী সোয়াট। শুরু হয় চূড়ান্ত অভিযান। গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালানোর চেষ্টা করেছিল জঙ্গিরা। এক ঘণ্টার এই চূড়ান্ত অভিযানে নিহত হয় নয় জঙ্গি। ওই বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র, বিস্ফোরক।

Advertisement

নিহতেরা কোনও ধরনের নেশা করে ছিল কি না তাও জানতে চেয়েছে পুলিশ। সে অনুযায়ী ডোপ টেস্টের জন্য মৃতদেহের চুল, রক্ত ও মূত্রের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা হয়েছে থাই মাসল। এছাড়া ভিসেরা পরীক্ষার জন্যও প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর আগে গুলশানে জঙ্গি হামলার পর কমান্ডো অভিযানে নিহত হামলাকারীদের ক্ষেত্রেও ডোপ টেস্টের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। আইএস জঙ্গিদের মত বাংলাদেশের এই জঙ্গিরাও ক্যাপ্টাগন নামের বিশেষ ধরনের মাদকে আসক্ত কি না, তা জানতেই এ পরীক্ষা।

গুলশানের হামলার পর আইএস তার দায় স্বীকার করে হামলাকারীদের ছবি প্রকাশ করেছিল। মঙ্গলবার কল্যাণপুরের ওই বাড়িতে অভিযানের পর সেখানেও আইএস এর পতাকা পাওয়া গেছে। অবশ্য বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহিদুল হক বলছেন, নিহতরা সবাই বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি দল জেএমবির সদস্য এবং গুলশানের হামলাকারীরাও ‘একই গ্রুপের’ বলে তাদের ধারণা।

জঙ্গি আস্তানায় নিহতদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় এখনও পর্যন্ত পাওয়া গেছে। এদের একজন সেজাত রউফ অর্ক ওরফে মরক্কো। অর্ক নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর ছাত্র ছিল। গুলশান হামলায় নিহত জঙ্গি নিবরাসের বন্ধু ছিল অর্ক। তাঁর বাবার নাম তৌহিদ রউফ। থাকেন বসুন্ধরা এলাকায়। তারা দুজনেই মালয়েশিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটিতে পড়েছে। শাহবাগ থানার একটি মামলায় দুজনই একসঙ্গে আসামি ছিল। রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকার বাড়ি থেকে সেজাদ গত ৬ ফেব্রুয়ারি বেরিয়ে যাওয়ার পর আর ফেরেনি। সেজাদ আমেরিকার নাগরিক। নিরুদ্দেশের কথা জানিয়ে তার বাবা ভাটারা থানায় জিডি করেছিলেন। নিবরাসও তার তিন দিন আগে অর্থাত্ ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে নিখোঁজ হয়। গুলশানের কাফেতে হামলা চালিয়ে নিহত হওয়ার পর জানা যায়, নিবরাস ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ঝিনাইদহের একটি মেসে ছিল। ওই মেসে ছিল নিবরাসের আর এক সঙ্গী আবির রহমানও। আবির ৭ জুলাই ইদের দিন শোলাকিয়ায় পুলিশের উপর হামলা চালানোর পর গুলিতে নিহত হয়। সেজাদ আমেরিকার নাগরিক হওয়ার কারণে ঢাকা মেডিকেলে লাশ শনাক্ত করার সময় তার বাবার সঙ্গে মার্কিন দূতাবাসের এক কর্মকর্তাও ছিলেন।

পরিচয় পাওয়া আর এক নিহত জঙ্গির নাম জুবায়ের হাসান (২০)। জুবায়ের নোয়াখালি সরকারি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল সে। বাবার নাম আবদুল কাইয়ুম। তিনি নোয়াখালিতে ভ্যানচালকের কাজ করেন। দু’মাস আগে জুবায়ের বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। এ ব্যাপারে নোয়াখালির সুধারামপুর থানায় গত ২৫ মে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।

পরিচয় উদ্ধার হওয়া তৃতীয় নিহত জঙ্গি চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাব্বিরুল হক কনিক। বাবার নাম আজিজুল হক। বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারায়। সাব্বিরুল ছয় মাস আগে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। এ ব্যাপারে তাঁর পরিবার অবশ্য থানায় কোনও জিডি করেনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement