প্রতীকী চিত্র।
ছিল দুই হল তিন। রূপপুরে বাংলাদেশ আর রাশিয়ার পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিশাল প্রকল্পে উড়ে এসে জুড়ে বসল ভারত। বাংলাদেশ বলছে না-না জুড়ে বসা হবে কেন। যে দেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়, স্বাভাবিক নিয়মে তার পাশের দেশ স্টেকহোল্ডার বা অংশীদার হয়। সে ভাবইে ভারত সহযোগী শক্তি। তাদের উটকো ভাবার কোনও কারণ নেই। এখন প্রশ্ন, তিনটি দেশ মানিয়ে চলতে পারবে তো। একে অন্যের ওপর খবরদারি বা কেরামতি ফলাতে চাইলে কী হবে। অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট হওয়ার শঙ্কা থাকেই। সে ভয় নেই বাংলাদেশের। তারা বলছে, এখানে সেটা হওয়ার নয়। তিনটি দেশ অভিন্ন হৃদয়ে লড়াই করে বহু দুর্যোগ সামলেছে। একাত্তরে বাংলাদেশ মুক্তি যুদ্ধে ভারত-রাশিয়া যৌথভাবে পাশে না দাঁড়ালে বাংলাদেশের কী অবস্থা হত।
ভারত-রাশিয়া এই প্রথম তৃতীয় কোনও দেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করছে তাও তো নয়। ২০১৪-র ১১ ডিসেম্বর দুটি দেশ এ বিষয়ে কৌশলগত অবস্থানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যাতে রাশিয়ার ডিজাইন করা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অন্য কোনও দেশে স্থাপনে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা অটুট থাকে। বাংলাদশের বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে ভারত-রাশিয়া সেই শর্তেই কাজ করবে। দু'দেশের ঝগড়া বিপদের কোনও কারণ নেই। একাজে রাশিয়াই চেয়েছে ভারতকে।
শান্তিপূর্ণ কাজে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারে আগেই মউ স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ-ভারত। গত বছর ভারত বাংলাদেশিদের বেসামরিক পারমাণবিক শক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণও দিয়েছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের অভিজ্ঞতা ভারতের অনেক বেশি। নিজেদের দেশে অনেক আগেই তারা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করেছে। বাংলাদেশের প্রকল্পে তাদের সহযোগিতা কাজে লাগবে। কোথাও আটকালে পরামর্শ দিয়ে সংকট কাটানোর দায়িত্ব নেবে। ত্রিদেশীয় সহযোগিতার মধ্যে আছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিরাপদ রাখা, কর্মীদের দক্ষতা বাড়াতে জ্ঞান, অভিজ্ঞতা বিনিময়। কারিগরি সহায়তা, সম্পদ সরবরাহ, পরামর্শ-অভিজ্ঞতা দিয়ে সাহায্য করাটাও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সির সদস্য তিনটি দেশই। এই আন্তর্জাতিক সংস্থার নিয়ম মেনেই চলবে বাংলাদেশ, ভারত, রাশিয়া। খসড়ার ৬ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সমঝোতার মেয়াদ ১৫ বছর। ইচ্ছে করলে ছ'মাস আগে নোটিশ দিয়ে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে যে কোনও দেশ। সমঝোতা নবীকরণের বিষয়ে চিন্তা করা হবে ১৪ বছরের মাথায়। তিনটি দেশ আলোচনা করে সেটা ঠিক করবে। বাংলাদেশ-রাশিয়া চুক্তি, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষায় যাতে কোনও ব্যাঘাত সৃষ্টি না করে সে দিকে লক্ষ্য থাকবে। ২০১১-তে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ মউ স্বাক্ষর করলেও চুক্তি সম্পাদন ২০১৫-র ২৫ ডিসেম্বর।
প্রকল্পের খরচ ১ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা। রাশিয়া ঋণ দেবে ১৩ হাজার কোটি। বাকি অর্থ সংস্থানের দায়িত্ব বাংলাদেশের। এটা হলে বিদ্যুৎ নিয়ে আর কোনও চিন্তা নেই। বিদ্যুতের অভাবে বিদেশি বিনিয়োগ আটকাবে না। ৫০ বছর ধরে লাগাতার বিদ্যুৎ উৎপাদন করে যাবে কেন্দ্রটি। প্রতি দিন পাওয়া যাবে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। উৎপাদন শুরু সাত বছর পর, ২০২৩-এ। এক সঙ্গে সব ইউনিট চালু করা যাবে না। প্রথম ইউনিট কাজ শুরু করার এক বছর পর ২০২৪-এ চালু হবে দ্বিতীয় ইউনিট। সে বছরই অক্টোবরে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার কথা। ২০২৫-এ পুরো কাজের শুরু।
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের ব্যবহার বেশি। কলকারখানাতেও গ্যাসের চাহিদা প্রচুর। অনেক সময় সব দিকের দাবি মেটাতে গ্যাসে টান পড়ে। গ্যাস বাঁচাতে কয়লায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ান হচ্ছে। তার জন্য কয়লা আমদানি করতেও অসুবিধে নেই। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সিংহভাগ কয়লায়। তাতেই সুবিধে। তার পোড়া ছাইও কাজে লাগে। সিমেন্ট উৎপাদনে ব্যবহার করা যায়। সবচেয়ে শক্তিশালী নিঃসন্দেহে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। শিল্পোন্নয়নের জ্বালানি হিসেবে যার জুড়ি নেই। বাংলাদেশ সেই রাস্তায় হাঁটছে। পরমাণু শক্তি ব্যবহার করতে চাইছে বিনাশ নয় বিকাশের তাগিদে।
আরও পড়ুন:
১০ হাজার কোটি ডলারে ভোল বদলে যাবে ঢাকার