উদ্ধার হওয়া অস্ত্রশস্ত্র।
জলে মাছ নাই- আছে ভারী রকেট লঞ্চার, এসএমজি, রাইফেল, পিস্তল। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার পাশের জেলা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের একটি লেক থেকে উঠে আসা জিনিসপত্র দেখে সবারই চোখ কপালে। ডুবুরীরা তুলে এনেছেন বিপুলসংখ্যক অস্ত্র ও গোলাবারুদ। লেক সংলগ্ন একটি বাড়ি থেকেও প্রচুর অস্ত্র মিলেছে। বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। এই বিষয়ে পুলিশের আইজি বলছেন- 'বাংলাদেশকে নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই কোনও অপরাধীচক্র এই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোরাবারুদ এনে থাকতে পারে।'
নারায়নগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন শুক্রবার সকালে সংবাদমাধ্যমকে জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকে রূপগঞ্জের পূর্বাচল ৫ নম্বর সেক্টরে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। তিনি বলেন, ‘সেখান থেকে এখন পর্যন্ত ৬১টি রাইফেল, ৪০টি এসএমজি, দুটি রকেট লঞ্চার, পাঁচটি পিস্তল, ডেটোনেটর-সহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। একটি বাড়ি ও পাশের লেক থেকে এসব উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।’
সাজিয়ে রাখা হয়েছে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রশস্ত্র।
সকালে লেকের জলে নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরিরা তল্লাশির জন্য নেমেছেন। আর ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ সদস্যরা উদ্ধার করা অস্ত্র সাজিয়ে রাখছেন।
এ ঘটনার খবর পাওয়ার পরপরই ঢাকা থেকে পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ও স্থানীয় সংসদ সদস্য গাজি গোলাম দস্তগীর ঘটনাস্থলে পৌঁছান। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদেক বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি শহীদুল হক বলেছেন, সম্প্রতি ‘এক ব্যক্তি আমাদের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। ওই ব্যক্তির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। এই চক্রের হাতে আরও অস্ত্র ও গোলাবারুদ আছে কিনা খুঁজে দেখা হচ্ছে। কারা কী কারণে কী উদ্দেশ্যে এই গোলাবারুদ মজুদ করেছে, তা শিগগিরই জানা যাবে।’
আরও পড়ুন: জঙ্গি নিশানায় ফকিররা
মঙ্গলবার রাতে রূপগঞ্জ থানার এসআই শাজাহানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ দাউদপুর ইউনিয়নের বগলা গ্রামে শরিফুল ইসলাম নামের একজনের বাড়িতে অভিযান চালায়। সেখানে একটি এম সিক্সটিন রাইফেল উদ্ধার করা হয়। তবে শরিফুলকে গ্রেফতার করা যায়নি। পরে বৃহস্পতিবার শরিফুল তিনটি মাদক মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে যায়। ফেরার পথে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে জেলা গোয়েন্দা ও রূপগঞ্জ থানার পুলিশের দল তাকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে অস্ত্র লুকিয়ে রাখার কথা জানালে সেই তথ্য ধরে বৃহস্পতিবার রাত ১টা নাগাদ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারুক হোসেনের নেতৃত্বে অভিযান শুরু করে পুলিশ। রূপগঞ্জ উপশহরের ৩ নম্বর সেক্টরের ব্লু সিটি এলাকায় মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে খুঁড়ে দুটি এসএনজি উদ্ধার করা হয়। শরিফুল জানায়- ৫ নম্বর সেক্টরে প্রচুর অস্ত্র মজুদ রয়েছে।
এই লেক থেকেই উদ্ধার হয়েছে অস্ত্রশস্ত্র।
তার কথা অনুযায়ী ৫ নম্বর সেক্টরের একটি লেকে তল্লাশি চালানো হয়। লেক থেকে দড়ি দিয়ে গাছের সঙ্গে বাঁধা একটি ব্যাগ দেখতে পায় পুলিশ। সেই দড়ি টেনে একে একে আটটি প্লাস্টিকের ব্যাগ থেকে বিশেষভাবে মোড়ানো বাকি ৬০ এসএমজি উদ্ধার করে। রাতে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল এনে ওই লেকে তল্লাশি চালিয়ে বাকি গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।