হুসেইন মহম্মদ এরশাদ
প্রয়াত হলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও বর্তমানে বিরোধী দলনেতা হুসেইন মহম্মদ এরশাদ। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। রক্তের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন সেনাপ্রধান থেকে ক্ষমতা দখল করা বর্ণময় চরিত্রের এই নেতা। ফুসফুস ও কিডনিতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় ২৬ জুন তাঁকে ঢাকার কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রবিবার স্থানীয় সময় সকাল পৌনে আটটা নাগাদ মারা যান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ।
বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারের কুড়িগ্রামে ১৯৩০-এর ১ ফেব্রুয়ারি এরশাদের জন্ম। দিনহাটায় স্কুলজীবন কাটিয়ে রংপুর কলেজে ভর্তি হন তিনি। তার পরে ঢাকায় আইন পড়তে পড়তেই ১৯৫২-এ যোগ দেন তৎকালীন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে। বিভিন্ন সময়ে এরশাদ দাবি করেছেন, যুদ্ধের সময়ে পূর্ব পাকিস্তানে আসতে না পারলেও মনে-প্রাণে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন। ১৯৭৩-এ স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে তিনি সেনাবাহিনীতে বহাল হন। ১৯৭৫-এর ১৫ অগস্ট রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পরে জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করলে বাহিনীতে তাঁর গুরুত্ব বাড়তে থাকে। ১৯৭৯-তে তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে উন্নীত হয়ে পরে সেনাপ্রধান হন। ১৯৮১-র ৩০ মে চট্টগ্রামে কিছু সেনা সদস্য জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে। সেই অভ্যুত্থানের নেতা মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুরকে পুলিশ গ্রেফতার করার পরে তিনি খুন হয়ে যান। জিয়ার স্ত্রী এবং বিএনপি-র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার অভিযোগ, জিয়া হত্যার মূল হোতা ছিলেন আসলে এরশাদ। মঞ্জুরকে হত্যা করে তিনি প্রমাণ লোপাট করেন। আগামী অগস্টে মঞ্জুর হত্যা মামলার রায় বেরোনোর কথা।
জিয়ার হত্যাকাণ্ডের পরে ১৯৮২-র ২৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করেন সেনাপ্রধান এরশাদ। দেশে সামরিক আইন জারি করে সংবিধান স্থগিত করে দেন। প্রথমে আহসানুদ্দিনকে পুতুল রাষ্ট্রপতি করেন। এক বছর পরে তাঁকে সরিয়ে নিজেই রাষ্ট্রপতি হয়ে বসেন। এর পরে আওয়ামি লিগ, বিএনপি ও কমিউনিস্ট পার্টির দলছুট নেতাদের নিয়ে গড়েন জাতীয় পার্টি।
শাসক এরশাদের আমলে বাংলাদেশের রাস্তা, সেতু, পরিকাঠামোর যেমন বিপুল উন্নতি হয়, তেমনই প্রশাসনে অবাধ দুর্নীতি গেড়ে বসে বলে অভিযোগ। ভারতের সঙ্গে তিস্তা প্রকল্প রূপায়ণের সাফল্যও রয়েছে তাঁর মুকুটে। বাংলাদেশে যে উপজেলা পদ্ধতি প্রচলিত, সেটাও এরশাদ শুরু করেন। আবার সংবিধানে অষ্টম সংশোধনী এনে বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক চরিত্র বদলে রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে ইসলামকে যুক্ত করেন এরশাদ। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্বের দায়েও অভিযুক্ত তিনি। জাতীয় প্রেস ক্লাব তাঁকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে।
গণঅভ্যুত্থান হাতের বাইরে চলে গেলে ১৯৯০-এ ক্ষমতা ছেড়ে দেন এরশাদ। তাঁকে বন্দি করা হয়। এর পরে ১৯৯১-এর নির্বাচনে জেল থেকেই রংপুরের ৫টি আসনে লড়াই করে সব ক’টিতে তিনি জয়লাভ করেন। ১৯৯৬-এও এই ৫টি আসনে এরশাদ ফের জয়ী হন।
নিজের শহর রংপুর হয়ে তাঁর মরদেহ ঢাকায় ফিরিয়ে মঙ্গলবার শেযকৃত্য হবে এরশাদের।