ভাঙা হচ্ছে সেই বাড়ি।—নিজস্ব চিত্র
বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের অন্যতম পাণ্ডা এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের ঢাকার বাড়ির দখল নিল সরকার। রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানীতে পাঁচ বিঘা জমির উপর ওই বাড়িটি একাত্তরে মুক্তিবাহিনীর হাতে নিহত মোনায়েম খানের উত্তরাধিকাররা ভোগ-দখল করে আসছিলেন।
বুধবার ওই বনানীর বাড়িটির বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন। গত ৩ নভেম্বর ওই বাড়িতে অবৈধ দখল উচ্ছেদ হয়। সে সময় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক এই বাড়ির বরাদ্দ বাতিলের জন্য সরকারকে আহ্বান জানিয়েছিলেন।
মন্ত্রী মোশাররফ হোসেনও তার পরে জানিয়েছিলেন, “যে স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে তার প্লট বাতিল হবে। সেটা গণপূর্তের প্লটই হোক আর রাজউকেরই হোক। সেটা বাতিল।”
বনানীর ২৭ নম্বর সড়কের ১১০ নম্বর প্লটের ওই বাড়িটি পাঁচ বিঘা ১৫ ছটাক প্লটের উপর। পাকিস্তান সরকারের গভর্নর থাকার সময় ওই প্লটটি বরাদ্দ করা হয়েছিল মোনায়েম খানের নামে। রাজধানী উন্নয়ন কতৃপক্ষের সূত্রে জানা গেছে, প্লটটি তৎকালীন ডিআইটি থেকে ১৯৬৬ সালে মোনায়েম খানের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়। ১৯৬৭ সালে লিজ দলিল তৈরি হয় ও রেজিস্ট্রি করা হয়। মোনায়েম খানের মৃত্যুর পর মোনায়েম খানের ছেলে এএইচএম কামারুজ্জামান খানের নামে সেটি বরাদ্দ দেয় তৎকালিন সরকার।
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে জন্ম নেওয়া মোনায়েম খান ছিলেন পাকিস্তান আমলের মুসলিম লিগ নেতা। তিনি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লিগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও নিখিল পাকিস্তান মুসলিম লিগের কাউন্সিলর ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৩ অক্টোবর বনানীর বাড়িতেই মুক্তি বাহিনীর গেরিলাদের গুলিতে আহত হন তিনি। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এর আগে ১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের দায়িত্ব পেয়ে বাংলার মানুষের স্বাধিকার আন্দোলন দমনে আইয়ুব খানের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছেন।
সম্প্রতি মোনায়েম খানের এক নাতির লাশ উদ্ধার হয়েছিল ঢাকার কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় পুলিশ অভিযানে নিহতদের মধ্যে। তাজ মঞ্জিলে অভিযানে নিহত ন’জন যুবকের মধ্যে আকিফুজ্জামান খান (২৪) মোনায়েম খানের নাতি বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন গোয়েন্দা কর্তা মনিরুল ইসলাম।