Bangladesh News

১০ হাজার কোটি ডলারে ভোল বদলে যাবে ঢাকার

জন বিস্ফোরণ ঢাকা-কলকাতায়। রাস্তা কম গাড়ি বেশি। আন্তর্জাতিক শহরে সড়ক থাকে ২৫ শতাংশ। এ দুই মহানগরীতে ১০ শতাংশও নয়। মানুষই বা চলবে কোথায়। ফুটপাথ হকারদের। কলকাতার ভরসা মেট্রো রেল। তিন বছরে ঢাকাতেও মাটির নীচে ছুটবে ট্রেন।

Advertisement

অমিত বসু

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৬ ১৩:৩৬
Share:

জন বিস্ফোরণ ঢাকা-কলকাতায়। রাস্তা কম গাড়ি বেশি। আন্তর্জাতিক শহরে সড়ক থাকে ২৫ শতাংশ। এ দুই মহানগরীতে ১০ শতাংশও নয়। মানুষই বা চলবে কোথায়। ফুটপাথ হকারদের। কলকাতার ভরসা মেট্রো রেল। তিন বছরে ঢাকাতেও মাটির নীচে ছুটবে ট্রেন। উড়ালপুলের কাজও শেষের দিকে। মাথার ওপর দিয়ে দৌড়বে গাড়ি। তাতে কিছুটা সুরাহা হবে, সবটা নয়। রাষ্ট্রপুঞ্জ, বিশ্বব্যাঙ্কের চিন্তা অন্য। তারা ঢাকাকে নতুন রূপে দেখতে চায়। জোড়া তাপ্পিতে সাময়িক সামাল দেওয়া নয়। একবারে ঝাঁ চকচকে গতিময়। পাল্লা দেবে বিশ্বের যে কোনও আধুনিক শহরের সঙ্গে।

Advertisement

দুনিয়ার কোনও শহরই এক দিনের নির্মাণ নয়। ধাপে ধাপে রূপান্তরিত। ইউরোপ, আমেরিকা বা মধ্যপ্রাচ্যের শহরগুলো সাজাতে সুবিধে হয়েছে মানুষের চাপ কম ছিল বলেই। ঢাকায় লোক, সার্কের অনেক দেশের থেকে বেশি। প্রায় শ্রীলঙ্কার সমান। ঢাকার মতিঝিলে যত লোক মলদ্বীপ, ভুটানের গোটা দেশেও তা নেই। কলকাতার বিবাদী বাগ, এসপ্ল্যানেডের মতো মতিঝিল অফিস পাড়া। অধিকাংশ বাণিজ্যিক সংস্থার সদর দফতর সেখানেই। কলকাতার অফিস পাড়ার চাপ অনেকটা কমেছে। বহু দফতর স্থানান্তরিত। সচিবালয় মহাকরণ থেকে সাময়িকভাবে হলেও অনেকটা দূরে নবান্নে সরেছে। চাপ কিছুটা হাল্কা করেছে দুই উপনগরী সল্টলেক, নিউটাউন। ঢাকার পাশেও উপনগরী গড়ে তোলার প্ল্যান। সেটা হলে চাপ কমবে।

চার দশকে ঢাকার লোক বেড়েছে দশগুণ। ১৯৭৪-এ ছিল ১৭ লাখ। এখন ১ কোটি ৭০ লাখ। সবাইকে নাগরিক সুবিধে দিতে ঢাকা কর্পোরেশনের নাভিশ্বাস। ৬৪ জেলার লোক আছড়ে পড়ছে ঢাকায়। শিক্ষা, চিকিৎসা, কর্মসংস্থানের তাগিদে। একমাত্র ইদের সময় ঢাকা ফাঁকা। শহর ছেড়ে মানুষ পাড়ি দেয় নিজের ঘরে।

Advertisement

ঢাকার চাপ চট্টগ্রাম অনেকটাই নিতে পারে। দূরত্ব বেশি নয়, ঢাকা থেকে মাত্র ২৬৪ কিলোমিটার। এখন চার লেনের রাস্তায় সাঁই সাঁই করে ছুটছে গাড়ি। প্রধান সরকারি দফতরের ভাগ স্বচ্ছন্দে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে বড় বাণিজ্যিক সংস্থা, সদর দফতর নিয়ে যেতে পারে সেখানে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রাম কর্ণফুলি নদীর পাড়ে। তার নীচে টানেল করে রাস্তা হচ্ছে। কাছেই প্রাচীন পর্তুগিজ অঞ্চল। শহরের শাহি জামা-ই মসজিদ আর কাদাম মুবারক মসজিদ স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। এখানকার এথনোলজিক্যাল মিউজিয়ামে জাতি-উপজাতিদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে। উত্তর-পশ্চিমে ব্রিটিশ সিটির ফেয়ারি হিল থেকে দেখলে, স্বর্গের শহর মনে হয়। চট্টগ্রাম বন্দর বাদ দিয়ে বাংলাদেশকে তো ভাবাই যায় না। শহরটাকে প্রাপ্য গুরুত্ব না দেওয়ায় সেখানকার মানুষের ক্ষোভ কম নয়। তারা বলে, যত ভাবনা ঢাকাকে নিয়ে। চট্টগ্রামের সমৃদ্ধির চাকা গর্তে আটকে।

বিশ্বব্যাঙ্কের অর্থনীতিবিদ ইয়ং ওয়াং জানিয়েছেন, অন্য শহরের দিকে নজর দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকাকে নতুন করে তুলতে হবে পরিকল্পিতভাবে। পরিকল্পনার মেয়াদ ২০ বছর। খরচ ১০ হাজার কোটি ডলার বা ৮ লাখ কোটি টাকা। বিশাল অর্থের সংস্থান বিদেশি ঋণ ছাড়া সম্ভব নয়। অর্থায়নের অনেকটা দায়িত্ব সরকারকেও নিতে হবে। সবচেয়ে বেশি ব্যয় পরিবহণ ব্যবস্থা সংস্কারে। সেটা চার হাজার কোটি ডলারের কমে হবে না। নিষ্কাশন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন দরকার। বস্তি সংস্কারও অবশ্য কর্তব্য। পাশাপাশি জেলা শহরগুলোকে উন্নত করতে হবে। বড় হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জেলায় স্থাপন করা হলে আকর্ষণ বাড়বে। বাংলাদেশ সরকার পরিকল্পনার সব দিক খতিয়ে দেখছে। উন্নয়নের রাস্তা প্রশস্ত করাটাই তাদের লক্ষ্য। কোনও কিছুতেই পিছিয়ে পড়া যাবে না। এগোতে হবে সব বাধা ডিঙিয়ে। টাকা যোগাড়ের চিন্তা ভাবনা চলছে। সরকার আশাবাদী। তারা জানে, ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়।

আরও পড়ুন: গুলশনের হোলি আর্টিজান তুলে দেওয়া হল মালিকের হাতে

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement