রুপোলি শস্যের জোগানে ঢাকার চেয়ে অনেক পিছিয়ে কলকাতা। —ফাইল চিত্র।
সংস্কৃতে ইল্লীশ, বাংলায় ইলিশ। হদিশ মেলেনি গত বছরেও। গঙ্গাতে ভ্যানিশ, পদ্মা-মেঘনাতেও অদৃশ্য। জাল ফেলে জেলেরা নাকাল। হাপিত্যেশ ইলিশের জন্য। ইলিশ বংশ ধ্বংস করলে খোঁজ আর মিলবে কোথায়। মা-ইলিশকে বাঁচতে দেওয়া হয়নি। রেহাই পায়নি খোকা বা জাটকারা। আস্কারা মাছের আড়তদারদের। যা পাই, তাই খাই। সবুর সয় না। বয়সে ইলিশ স্বাদে বাড়ে, দামেও চড়ে। না ফোটা কুঁড়ি ছেঁড়া আর অপরিণত ইলিশ ধরা একই কথা। শোক অকারণ। এভাবে চললে ইলিশ চিরদিনের মতো ছবি হয়ে যাবে। কেঁদে কূল পাওয়া যাবে না। বাঙালি সেটা বুঝেছে, ঠেকে শিখেছে। বছরভর মাছ ধরা বন্ধ রেখেছে। হাতে হাতে ফল তাতেই। এবার এপারে ওপারে ইলিশের ঝাঁক। পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে অবশ্যই বেশি বাংলাদেশে। ইলিশের প্লাবনে ঢাকার বাজারে ৫০০ গ্রামের ইলিশ মাত্র দেড়শো টাকায়। একটায় মন ওঠে না। কম করে এক হালি মানে চারটে থলেয় না ভরে, দড়িতে ঝুলিয়ে দুলিয়ে দুলিয়ে ঘরে তোলা।
ঢাকায় ২০০ গ্রামের জাটকা ৩০ টাকায়। কেউ নেয় না। বড় পেলে ছোট নেবে কেন। এক কেজির ইলিশ ৫০০ টাকায়, কলকাতায় যার দাম হাজারের নীচে নয়। বরিশালের নদীর ঘূর্ণিতে ঘুরপাক ইলিশেরও। বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জাল ফেললেই উজ্জ্বল শস্যের উচ্ছ্বাস। দক্ষিণাঞ্চলও কম যায় না। চাঁদপুরে চাঁদের হাট রুপোলি ইলিশের। বাজারে সকাল সন্ধেয় ব্যস্ততা। বেচাকেনার বিরাম নেই। পনেরো দিন আগেও ছিল মরুভূমি। আড়তদাররা মৎস্যজীবীদের টাকা দেবে কোন দুঃখে। মাছ দাও টাকা নাও। সকাল থেকে বিকেল জাল ফেলে কায়ক্লেশে দুই থেকে তিন কিলো ইলিশ। কী হবে তাতে। এত পরিশ্রমে পরতা পোষায় না। তাদের মুখেই এখন হাসি। সকাল সাতটায় বেরিয়ে বেলা একটায় ফিরছে বিশ থেকে পঁচিশ কিলো মাছ নিয়ে।
ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের তুলাতলি মাছঘাটে প্রতি দিন ভিড়ছে ইলিশ বোঝাই আড়াইশো ট্রলার। খালাস করতে ঘাম ছুটছে। বসে যাওয়া খালাসিরা কাজ পাচ্ছে। আড়তদাররা নিলামে তুলছে ইলিশ। কিনছে মৎস্য ব্যবসায়ীরা। কেনাবেচা এক কোটি টাকার। সেখান থেকে বরফ দেওয়া বাক্স বোঝাই ইলিশ, ট্রাকে ট্রেনে ছুটছে বাজার থেকে বাজারে।
আরও পড়ুন: পায়রা বন্দর দিয়েই উন্নয়নের ঢেউ আসছে পিছিয়ে থাকা দক্ষিণ বাংলাদেশে
ইলিশ সরবরাহে সমস্যা বরফের। যত ইলিশ তত বরফ নেই। বরফ কলগুলোর দিনরাতের যোগান, চাহিদার চেয়ে অনেক কম। কোনও কল ২৪ ঘন্টায় ২২৫ চাঁইয়ের বেশি বরফ করতে পারে না। তাতে কী হবে। পরিমাণটা দ্বিগুণ হলে কিছুটা সুরাহা হতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যার জল সাগরে পড়লে সাগর ফুলবে। ইলিশ ঢেউয়ের মাথায় নাচতে নাচতে নদীর মোহনার দিকে ছুটবে। ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি নামলে তো কথাই নেই। আলস্য ছেড়ে ইলিশ মহা উল্লাসে স্বেচ্ছায় জালে লাফাবে। মাছের গন্ধে এখনই জেলেরা ছুটছে পটুয়াখালির আলিপুর, মহিপুরে। শিববাড়িয়া নদের দুপাড়ে হাজার হাজার মাছ ধরার ট্রলার ইলিশ উৎসবের মহড়া দিচ্ছে। ঋতুচক্রে সময়টা পাল্টেছে। হতো বর্ষায়, হচ্ছে শরতে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এবার হেমন্ত, শীতেও ইলিশের অভাব হবে না। বসন্তই বা বাদ যাবে কেন। ইলিশের দামও পাল্লা দিয়ে নামবে। পকেটের দুর্বলতায় কেনা আটকাবে না। বাংলাদেশের ইলিশ বাংলাদেশেই আটকে থাকবে। সীমান্ত পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকবে না। হাসিনা যে আগেই জানিয়ে রেখেছেন, তিস্তার জল দাও, ইলিশ নাও।