নৌকাবদল: বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে পৌঁছতে শাহ্-পরির দ্বীপে এক নৌকা থেকে অন্য নৌকায় উঠছেন মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা। শনিবার। ছবি: রয়টার্স
রোহিঙ্গা প্রশ্নে উদ্বেগে ঢাকা-দিল্লি— দু’পক্ষই। সামনে বাংলাদেশে নির্বাচন। তাই রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায় সরাসরি মুখ না খুললেও, রোহিঙ্গা-জঙ্গি যোগাযোগ রুখতে একজোট হয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত ও বাংলাদেশের সরকার।
রোহিঙ্গা সমস্যা মেটাতে নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে সব ধরনের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে নয়াদিল্লি। বিমান ছাড়া জাহাজে করেও ইতিমধ্যেই একপ্রস্ত ত্রাণ চট্টগ্রামে পাঠিয়েছে ভারত। চলতি সপ্তাহেই আর একটি জাহাজে ত্রাণ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত যে পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী বাংলাদেশে যাচ্ছে, তার মধ্যে ভারতই সব চেয়ে বেশি পরিমাণ খাবার, পলিথিন ও শিশুখাদ্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অস্থায়ী আশ্রয়স্থল তৈরিতেও প্রয়োজনে সাহায্য করা হবে বলে ঢাকাকে জানিয়েছে ভারত। তবে মানবিকতার প্রশ্নে ত্রাণ পাঠালেও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনও রকম ঝুঁকি নিতে রাজি নয় নয়াদিল্লি। ভারতের স্পষ্ট যুক্তি, চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে যাতে রোহিঙ্গারা অন্য কোথাও চলে যেতে না পারে তা নিশ্চিত করুক ঢাকা। আর চট্টগ্রামে আশ্রয় নেওয়া ভারতের উত্তর-পূর্বের জঙ্গিদের সঙ্গেও যাতে রোহিঙ্গাদের যোগাযোগ তৈরি না হয়, সে দিকে সতর্ক নজর রাখতে হাসিনা সরকারকে অনুরোধ করেছে ভারত।
এ যাবৎ মায়ানমার থেকে অন্তত ৮ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। গত কাল বাংলাদেশের বিদেশসচিব শহিদুল হক জানান, ‘‘তিনি একাধিক বার শরণার্থীদের শিবিরে গেলেও, শরণার্থীদের মধ্যে জঙ্গিদের চিহ্ন পাননি।’’ তবে বাংলাদেশের কূটনীতিকরা বলছেন, তার আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। বিশেষ করে ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’ বা আরসা-র কিছু জঙ্গি শরণার্থীদের মধ্যে থাকতেই পারে। মায়ানমার নিরাপত্তা রক্ষীদের উপর এই আরসা-র হামলার পরেই পাল্টা অভিযানে নামে সে দেশের সু চি সরকার। শরণার্থী শিবিরে আরসা-র মতো জঙ্গি সংগঠন তথা মৌলবাদী শক্তিগুলি তৎপর হয়ে ওঠার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না কোনও পক্ষই।
ভারত ভাগের সময় থেকেই বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও রাখাইন প্রদেশ নিয়ে নিজেদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনের দাবিতে সরব রোহিঙ্গারা। দীর্ঘ দিন ধরে তাদের সশস্ত্র আন্দোলনকে মদত দিয়ে আসছে বাংলাদেশের জামাতে ইসলামির মতো মৌলবাদী সংগঠন ও পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। অর্থ সাহায্য আসছে সৌদি আরব থেকে। সম্প্রতি ভারতীয় গোয়েন্দারা বাংলাদেশকে জানিয়েছেন, আইএসআই নিয়মিত নির্দেশ দিয়ে চলেছে রাখাইনের রোহিঙ্গা জঙ্গিদের। কার্যত তাদের নির্দেশেই আরসা চলছে।
চট্টগ্রাম চত্বরে বহু দিন ধরেই রোহিঙ্গারা এসে আশ্রয় নিয়ে চলেছে। কিন্তু সম্প্রতি হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। সেই সুযোগে চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলে সক্রিয় বহু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ত্রাণ বিলিতে নেমেছিল। বাংলাদেশ সরকার জানতে পারে, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির মধ্যে বেশ কয়েকটি জামাত-বিএনপি-র মদতে চলা। তার পরে শুধু বাংলাদেশের সরকারি সংস্থাগুলিকেই ত্রাণ বিলির কাজে লাগানো হচ্ছে। ত্রাণ বিলির অছিলায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে ধর্মীয় ভাবাবেগ জাগানোর অপচেষ্টা রোখা হয়েছে, এ কথাও ঢাকা নয়াদিল্লিকে জানিয়েছে।