এর আগেও অনেক রাষ্ট্রীয় অতিথি এসেছেন বাংলাদেশ সফরে। পেয়েছেন প্রাণঢালা শুভেচ্ছাও। নানা দিক থেকে বাংলাদেশে সে সব নেতাদের সফর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে আছে ইতিহাসে। কিন্তু চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের এই ঢাকা সফর বোধ হয় ‘রাজনৈতিক কূটনীতির‘ পাশাপাশি চিনের শক্তিশালী ‘অর্থনৈতিক কূটনীতিক’ বার্তা দিয়ে অন্য সব কিছুকে ছাপিয়ে গেল। কারণ, সত্যিকার অর্থেই পরিসংখ্যান বলছে, এর আগে অন্য কোনও নেতার সফরের সময় এত বিপুল বিনিয়োগের ঘনঘটা ঘটেনি।এর আগে গত বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরে ২০০ কোটি ডলারের এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনোজা আবের সফরকে কেন্দ্র করে ৬০০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি পেয়েছিল শেখ হাসিনার সরকার। আর এবার বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির শক্তির নেতা জিনপিং ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোডের’ সম্প্রসারণের ভিত্তিতে সর্ম্পকের নতুন যুগের সূচনার যে ঘোষণা দিলেন তাতে প্রায় ২৪০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ বাণিজ্যের প্রতিশ্রুতি পেল ঢাকা। গতকাল শুক্রবার চিনা নেতার সফরের প্রথম দিনে করা ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষরের ফলেই আসবে এই অর্থ।
এই সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও চিন দুই দেশই নিজেদের গভীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে ‘কৌশলগত সহযোগিতা ও অংশীদারত্বের’ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে। এ ছাড়া দুই দেশ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একযোগে কাজ করার ব্যাপারেও একমত হয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মহঃ শহিদুল হক বলেছেন, “চিনের প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে কৌশলগত সহযোগিতা ও অংশীদারত্বের মাধ্যমে আরও গভীর এবং সম্প্রসারণ করার পাশাপাশি একে একটি নতুন অবয়ব প্রদানে একমত হয়েছেন।” এই সফরকে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও নবদিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে এগারেটা নাগাদ প্রায় ২৪ ঘণ্টার সফরে ঢাকা আসেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ঢাকা সফরের পুরো সময়টাই জিনপিংয়ের কেটেছে চরম ব্যস্ততার মধ্যে। আজ শনিবারও দিনের শুরু খুব সকালে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জিনপিং যান সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে। সেখানে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তিনি শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। সেখান থেকেই চলে যান হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। ভারতের গোয়ার উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। সেখানে তিনি ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন। বিমানবন্দরে জিনপিংকে বিদায় জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জিনপিং ২০১০-এ প্রথম বার ঢাকা সফরে এসেছিলেন, তখন তিনি ছিলেন চিনের ভাইস প্রেসিডেন্ট। এর আগে চিনের নেতাদের মধ্যে প্রাক্তন উপ-প্রধানমন্ত্রী লি শিয়েননিয়েন ১৯৭৮ সালে এক বার ঢাকা সফরে এসেছিলেন। এর পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ১৯৮৬ সালে আর এক বার বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন তিনি। এটাই ছিল সর্বশেষ কোনও চিনা রাষ্ট্রপ্রধানের বাংলাদেশ সফর।
অবশ্য স্বাধীনতার আগে পূর্ব পাকিস্তান আমলে এক বার ঢাকা সফরে এসেছিলেন চিনা প্রেসিডেন্ট লিউ শাওচি। এ সবের মধ্যে দিয়ে চিন-বাংলাদেশ একটি দীর্ঘ বন্ধুত্বের পথরেখা তৈরি হয়। যার মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী বাণিজ্যিক ভিত্তিও তৈরি হয়। চিনের বর্তমান প্রেসিডেন্টের সফরকে ঘিরে সেই বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ভিত্তিকেই আরও এগিয়ে নেওয়ার আশা দেখেছিল বাংলাদেশের রাজনীতি ও ব্যবসায়ী মহল।তার প্রভাব কতদূর পড়বে, তা ভবিষ্যতেই বলবে। বর্তমান পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশ প্রায় ৮০০ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য চিন থেকে আমদানি করে। অন্য দিকে বাংলাদেশ দেশটিতে রফতানি করে প্রায় ১০০ কোটি ডলারের পণ্য।
আরও পড়ুন