প্রতীকী ছবি।
ডেডলাইন ২০১৭-র জুন। হাতে মাত্র আট মাস। তার মধ্যে ঢাকা ফ্লাইওভারের কাজ শেষ না হলে আসামীর কাঠগড়ায় উঠবে ভারত-চিন। উড়ালপুল তারাই করছে। দেরি হলে দায় তাদের। এখনও পর্যন্ত সময় ধরে এগোচ্ছে। পিছলতে কতক্ষণ! ১ জুলাই গুলশান হামলার পর সংশয় জেগেছিল। যদি প্রকল্পে প্রভাব পড়ে। সে সব কিছুই হয়নি। নির্মাণে ছন্দ হারায় নি। মাথার উপরের পথটা পুরাণের ডেড-সি আপেলের মতো করে হয়নি। যে ফলটা দেখতে অপূর্ব, ছুঁলেই অদৃশ্য। একটু একটু করে উড়াল পুলে যান চলতে শুরু করেছে। যতটুকু তৈরি হচ্ছে, ততটুকুই খুলে দেওয়া হচ্ছে। যানজট মুক্ত যাতায়াত। দুর্গতি পেরিয়ে গতি। ৩০ মার্চ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কিছুটা উদ্বোধন করেন। তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে রমনা যাওয়ার হোলি ফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট। ২.১১ কিলোমিটার হুস করে উড়ে যাওয়া। সেপ্টেম্বরে খুলল আরও কিছুটা। এক কিলোমিটার। ইস্কাটন থেকে মগবাজার ওয়্যারলেস গেট। তিন কিলোমিটারের বেশি রাস্তায় আপাতত বিরামহীন যাত্রা। চলার পথে দোকান বাজার মানুষের ভিড় নেই। পায়ে হেঁটে পার হওয়ার চেষ্টা করলে শাস্তি। গাড়িতেও নিদিষ্ট গতিবেগ বজায় রাখতে হবে। খুব আস্তে নয়, আবার জোরেও নয়। পিছন থেকে আর সামনের গাড়ির ব্যবধান যেন ঠিক থাকে।
উড়ালপুলের গাড়ির যাত্রীরা ভাবতে পারছে না, ঢাকায় সত্যিই এত দ্রুত যাতায়াত কী ভাবে সম্ভব। যেখানে গাড়ি ফার্স্ট গিয়ার থেকে সেকেন্ড গিয়ারের বেশি চলে না। যেখানে টপ গিয়ার ছাড়া কথা নেই। জোরে ছোটা মানে জ্বালানির সাশ্রয়। বন্ধ শ্রমশক্তির অপচয়। মন্থর মানে সব জমে পাথর। রাস্তাতেই যদি দিন কাটে কাজটা হবে কখন। কর্মসংস্কৃতি চুলোয়। ঢাকা একটু ফাঁকা ভোররাতে বা মাঝরাতে। তখন তো ঘুমোনোর সময়। অফিসের তালা খোলার প্রশ্ন নেই। একমাত্র মিডিয়া জেগে থাকে। টিভির নিউজ চ্যানেলে চলে টক শো। শুরু রাত বারোটায় জিরো আওয়ারে। ডিনার সেরে ঘুমনোর আগে চোখ মেলে থাকা টিভি স্ক্রিনে। সে সময় ফ্লাইওভারে গাড়ির চাকাও গড়ায় না।
আরও পড়ুন
সুন্দরবনে এখন বাঘের সংখ্যা ১০৬, দাবি বাংলাদেশের বনমন্ত্রীর
অপরাজিতা ফুল আজও আমার কথা মনে করায় কি?
তিন বছর আগে ২০১৩-র ১৬ ফেব্রুয়ারিতে এই ফ্লাইওভার নির্মাণ শুরু। দায়িত্বে ভারতের ‘সিমপ্লেক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড’ আর নাভাসার যৌথ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠান ‘সিমপ্লেক্স নাভাসা জেভি’। ভারতের সঙ্গে আছে চিনের প্রতিষ্ঠান ‘দ্য নাম্বার ফর মেটালোজিক্যাল কনস্ট্রাকশন ওভারসিজ কোম্পানি’। পাশে ‘তমা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড’। তত্ত্বাবধানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর বা এলজিইডি। সমন্বয়ের অভাব নেই। কাজ চলছে পুরোদমে। এটা রাজনীতির জায়গা নয়। ভারত-চিন সম্পর্ক যেমনই হোক এখানে মৈত্রীতে বাঁধা। যে কোনও অসুবিধেতেই সাহায্যের হাত একে অন্যের দিকে। তাদের মাথায় এখন একটাই চিন্তা, শেষ করতে বিলম্ব যেন না হয়।
ফ্লাইওভারটা যথেষ্ট লম্বা। দৈর্ঘ ৮.৭ কিলোমিটার। খরচ ১ হাজার ২১৮ কোটি টাকা। সরকার অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রকল্পটি হাতে নেয়। উপায় ছিল না। চাকা সচল রাখতে উড়ালপুল ছাড়া গতি নেই। এটা হলেই জ্যামজট মিটবে এমন নয়। অনেকটা যে কমবে সেটা ঠিক। বেশি ভরসা পাতাল রেলের ওপর। সঙ্গে সার্কুলার রেল। সেখানেই শেষ নয়। রয়েছে মাস্টার প্লান। একে একে রূপায়ণে ঢাকা দেখে চমকাবে বিদেশিরা। ভাববে, ঢাকা এত সুন্দর হল কী করে।
ছবি: সংগৃহীত।