তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
শেখ হাসিনা সরকার বাংলাদেশে ফের একটি সাজানো নির্বাচন করতে চায় বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিরোধী বিএনপি। নির্বাচনের জন্য পক্ষপাতহীন সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি কখনওই গণতন্ত্রের পরিপন্থী নয় বলে মন্তব্য করেছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভি। তাঁর যুক্তি— এই ব্যবস্থা সংবিধানেই ছিল, যা আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় এসে বাতিল করেছে।
সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু আনন্দবাজারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া নির্বাচন বানচালের যড়যন্ত্র করছেন। ইনু বলেন, ‘‘খালেদা যত ক্ষণ না সহায়ক সরকারের নামে ভূতের সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি ছাড়ছেন, বলতে হবে গণতন্ত্রে তাঁর বিন্দুমাত্র আন্তরিকতা নেই।’’ বিএনপি নেতা রিজভি বলেন, ‘‘আসলে ইনু সাহেব নিজেই ভোটারহীন নির্বাচনে ক্ষমতায় আসা ভূতের সরকারের মন্ত্রী। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এই সরকারের কেউই যে জিতবেন না, সেটা বুঝেই এই আক্রমণ।’’ তাঁর কথায়, আরও একটি বিতর্কিত নির্বাচনের ব্যবস্থা করে ক্ষমতা ধরে রাখতে চায় এই সরকার। কিন্তু এ বার মানুষ আর সে’টি করতে দেবে না।
রিজভির কথায়, আওয়ামি লিগ বাংলাদেশে যে একদলীয় ‘বাকশাল’ ব্যবস্থা কায়েম করেছিল, বিএনপি-র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান তা বাতিল করে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেছিলেন। আর ইনুর দল ‘জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল’ (জাসদ) যে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেছিলেন— এটা ঐতিহাসিক তথ্য। সুতরাং ইনুর কাছ থেকে খালেদাকে গণতন্ত্রের শিক্ষা নিতে হবে না। রিজভি বলেন, ‘‘উনি বিএনপি নেত্রীকে জঙ্গিবাদের মদতদাতা বলেছেন। অথচ ওঁর দলের তথাকথিত গণবাহিনী যে সব কাজ করেছিল, এখন তা জঙ্গিদের করতে দেখা যায়।’’
রিজভির দাবি, শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে মানুষের যোগ নেই বলেই বিরোধীদের পুলিশি নির্যাতন করে, তাদের সভা সমিতি করতে না-দিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখতে হচ্ছে তাদের। তিনি বলেন, ‘‘এই নয় বছরে বিএনপি-র কয়েকশো নেতাকর্মীকে গুম করেছে পুলিশ। খুনও হয়েছেন বহু। সাজানো মামলায় হেনস্থা করা হচ্ছে নেতা-নেত্রী থেকে সাধারণ কর্মী— সকলকেই। বহু কর্মী মাসের পর মাস বাড়িতে ফিরতে পারেন না।’’ বিএনপি মুখপাত্রের দাবি, সন্ত্রাসের রাজত্ব থেকে নির্বাচনের মাধ্যমে পরিত্রাণ পেতে চাইছেন বাংলাদেশের মানুষ।
আওয়ামি লিগের বক্তব্য, সব দেশেই নির্বাচিত সরকারকে রেখে নির্বাচন কমিশনের নেতৃত্বে ভোট হয়। বাংলাদেশেও তাই হবে। তিনি জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে দায়িত্ব তুলে দিলে বেআইনি ভাবে ক্ষমতা দখলের আশঙ্কা থেকে যায়। বাংলাদেশে সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার সেই কাজটাই করেছিল। কাজেই আর কোনও অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রশ্ন নেই। শাসক দলের এক বর্ষীয়ান নেতা বলেন, ভোট বয়কট করে বিএনপি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে চলে গিয়েছে। আন্দোলনের নামে ‘জ্বালাও-পোড়াও’ অভিযান করে বহু মানুষকে খুন করেছে। সন্ত্রাসের রাজত্ব তারাই কায়েম করতে চায়। তাদের হাত থেকে দেশ ও মানুষকে রক্ষা করতে যা করা প্রয়োজন, প্রশাসন সেই দায়িত্বই পালন করছে।