জুতো আবিষ্কার না হলে কী হত রবীন্দ্র রচনায় ‘বিবৃত’। যত দিন গেছে জুতোর আদর বেড়েছে। মুখের আগে জুতোয় নজর। মানুষের বিচার জুতোতে। উনবিংশ শতাব্দীতে কচি বাছুরের চামড়ার জুতো পরে নবাবি দেখাতেন বাঙালি বাবুরা। আজ বাঙালি নিজেরা শুধু বাহারি জুতো পরছে না, পরাচ্ছে দুনিয়াকে। বাংলাদেশের তৈরি জুতোর কদর কোথায় নেই। পায়ে গলিয়ে আহ্লাদ ইউরোপ, আমেরিকাতেও। জুতোর সাপ্লাই দিতে হিমসিম বাংলাদেশ। চাহিদার সঙ্গে উৎপাদনের সামঞ্জস্য রাখা দূরুহ। ১১৫টি কারখানায় দিবারাত্র উৎপাদন। তাও কম। আরও চাই।
চর্মশিল্পে রফতানি বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে বিনিয়োগ। বিদেশি বিনিয়োগও আসছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি আমদানিতে সুবিধে। ডলারেও টান পড়ছে না। সরকারি শুল্কে ছাড় যথেষ্ট। কাঁচামাল আমদানিতে খরচ বাঁচালে আরও অগ্রগতি সম্ভব। তারও ব্যবস্থা হচ্ছে। পরিকাঠামোর উন্নতি দরকার। ট্যানারি সাভারে স্থানান্তরিত করার তোড়জোড়। বছরে চামড়ার উৎপাদন ২২ কোটি বর্গফুট। তার সবটা কাজে লাগে না। ৫০ শতাংশ ব্যবহৃত জুতোয়। কিছুটা চামড়ার অন্যান্য পণ্যে। অনেকটা বেঁচে যায়। পুরোটাই উৎপাদনে ব্যবহার করা গেলে রফতানির চাহিদা অনেকটা মেটানো যাবে।
চামড়া ছাড়া সিন্থেটিকের জুতো বিদেশে খুবই জনপ্রিয়। বাংলাদেশে সিন্থেটিক জুতোর উৎপাদনও বাড়ছে। কাঁচামাল তৈরিতেও বিশেষ নজর। জুতোর বাক্স আগে আনা হত চিন, ভারত থেকে। তার দরকার হচ্ছে না। বাংলাদেশেই তৈরি করতে আর অসুবিধে নেই। রফতানির মুনাফার একটা অংশ মধ্যবর্তী এজেন্টরা খেয়ে নিচ্ছে। ব্যবসাটা সরাসরি হলে লাভ বাড়বে।
আরও পড়ুন: মাছ বাজারে দশ টাকা নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ৫০ জন
তিন বছর আগে জুতো রফতানিতে লাভ ছিল ৪১ কোটি ৯৩ লাখ ডলার। সেটা ক্রমশ বাড়তে বাড়তে পৌঁছেছে ৭১ কোটি ৪০ লাখ ডলারে। এবার অর্ডার বেড়েছে আরও দেড়গুণ। বিশ্ব বাজারের মন্দা কাটিয়ে জুতোর বাজারের অগ্রগতি অব্যাহত। কারখানায় শ্রমিকদের বিদেশে পাঠানো হচ্ছে প্রশিক্ষণে। টিমওয়ার্কে ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে। একটু সময়ের দরকার। সবকিছু ঠিকঠাক হলে রফতানি দশগুণ হবে।
আমেরিকা ছাড়াও বাংলাদেশের জুতো যাচ্ছে ইউরোপের জার্মানি, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, ইতালি, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, স্পেন, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়ামে। রাশিয়া, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপানেরও খুব পছন্দ। হবে না কেন। চামড়ার গুণগত মান যে তুলনাহীন। বিশ্বে দুষ্প্রাপ্য। বাংলাদেশে শ্রম সস্তা বলে দামও কম। ইউরোপের সব চেয়ে বড় জুতো বিক্রেতা ডাইচম্যানের তিন হাজার আটশোর বেশি শোরুম রয়েছে বাংলাদেশের পাদুকা। ক্রেতাদের খুবই কদরের। বাংলাদেশের চর্মশিল্পে উন্নতির ভিত সেটাই। অর্থনীতির শিরদাঁড়া শক্ত করতে বাংলাদেশে জুতোর জুড়ি নেই।