আদালতে ছুটতে হবে না। আদালতই এসে দাঁড়াবে দরজায়। বিচার করবে, শাস্তি দেবে, চলে যাবে। ভ্রাম্যমান আদালতের দৌলতে মামলার নিষ্পত্তি হবে দ্রুত। দূরে দৌড়াদৌড়ি নেই, সবটাই নাগালে। ভ্রাম্যমান আদালত নতুন নয়। আগেও ছিল, এখনও আছে, তবে খুব কম। এবার বাড়বে পরিষেবার পরিধি। আগে তেমন দেখা যেত না। খুঁজতে হত। তার আর দরকার নেই। না চাইতেই বৃষ্টির মতো হাজিরা দেবে সর্বত্র। মান্ধাতার আমলের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসবে নতুন সাজে। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিতে কাজ নিমেষে। পরিচয়ে অভিনব সংযোজন ‘ই’। ই-ভ্রাম্যমান আদালত। বিচারের শকট সেকেলে নয়, একালের হালফিল মডেল। যাতে প্রয়োজনে সব পাওয়ার সুবিধে। নিরাপত্তায় সাত সদস্যের পুলিশবাহিনী।
শাস্তি হবে আরও কড়া। অপরাধী অল্প সাজায় পার পাবে না। সংশোধনে বাধ্য হবে। একই অন্যায় দ্বিতীয়বার করার সাহস পাবে না। ভ্রাম্যমান আদালতের আপীল এলাকা সীমাবদ্ধ। শুধুমাত্র খুচরো মামলার ফয়সালা। গুরুতর অপরাধ বড় আদালতে। ছোট বলে ছেঁটে দেওয়া যায় না। তিল থেকেই তাল হয়। ছোট অপরাধে সহজে মুক্তি পেলে, বড় অন্যায়ের স্পর্ধা বাড়ে। এবার একটু অপরাধেও কড়া শাস্তি।
আপাতত ভ্রাম্যমান আদালতে ১১৩টি অপরাধের বিচার হয়। বিচার মাত্র ১২টি আইনে। তার বাইরে যাওয়ার উপায় নেই। ১০০ বছরের পুরোন আইনে অপরাধীদের ধরাই মুশকিল। এবার এসব আইনে সংশোধনী আনা হচ্ছে। সব ফাঁক বুজিয়ে আরও কঠোর হবে। আসামীরাও অল্পে বাঁচবে না। মনে রাখার মতো শাস্তি পেয়ে নিজেদের শোধরাবে।
সংশোধনের তালিকায় যানবাহন আইন ১৯৮৩, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ, ভবন নির্মাণ আইন ১৯৫২, বিনোদন আইন ১৯৩৩, বাল্যবিবাহ রোধ আইন ১৯২৯, অরণ্য সংরক্ষণ আইন ১৯২৭, সিনেমা আইন ১৯১৮, বিদ্যুৎ আইন ১৯১০, রেলওয়ে আইন ১৮১০, জুয়া রোধ আইন ১৮৬৭, দালালি আইন ১৮৭৯, পাসপোর্ট আইন ১৯২০।
এ সব আইনের অধিকাংশই প্রণীত পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ শাসনে। ভবন নির্মাণ আইন পাকিস্তান আমলের। একাত্তরে বাংলাদেশ মুক্তির পর কোনও আইন তৈরি হয়নি। সময় পাল্টেছে, শাসন বদলেছে, আইন সেই একই থেকেছে। অপরাধের ধারাতেও তারতম্য অনেক। অপরাধের কৌশল আধুনিক। আইনের ফাঁক গলে বেরনোর সুযোগ। শাস্তি কম বলে বিচারের তোয়াক্কা নেই। আর্থ-সামাজিক বিবর্তনে অপরাধীদের আর্থিক সামর্থ বেড়েছে। শাস্তির জরিমানা এক নিমেষে পকেট থেকে বার করে ছুঁড়ে ফেলতে পারে। ফলে অপরাধের পুনরাবৃত্তিতেও হয়ে ওঠে বেপরোয়া।
সবচেয়ে কম শাস্তি সিনেমায়। জরিমানা মাত্র ৫০ টাকা। বিনোদন আইন ভাঙলে জরিমানা এক হাজার। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইনেও জরিমানা একই। দুই অপরাধ কী এক হল। শিশু বিবাহ সমাজের অশনি সংকেত। এতে এমন শাস্তি হওয়া উচিত যাতে কোনও অভিভাবক বিষয়টা উল্লেখ করার সাহস না পায়। জুয়া রোধ, দালালি, পাসপোর্ট আইনে শাস্তির ফারাক সামান্য। কারাদণ্ড এক মাস থেকে তিন মাস। খাদ্যপণ্য মজুত করে যারা কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করে যথেচ্ছ দাম বাড়ায়, সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস ওঠে, সেই কালোবাজারিদের শাস্তি কঠোর না হলে তারা বাগে আসবে কেন। এখনও পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইনে শাস্তি খুবই কম। দু’বছরের কারাদণ্ড, জরিমানা মাত্র পাঁচ হাজার। যারা কালো ব্যবসায় কোটি কোটি কামাচ্ছে, তাদের কাছে এ শাস্তি নিতান্তই তুচ্ছ। এবার সব শাস্তি দ্বিগুণ হচ্ছে। যাতে অপরাধীরা ভয় পায়, সচেতন হয়।