এক পরিবারেই ৫০০ ভোট, জমছে মজলিশ

শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রতিবাদে পাকিস্তানি পুলিশবাহিনী থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরেই রাজরোষে পড়েছিলেন বাদশা খান। তাঁর পাঁচ ভাইয়ের এক জনই বেঁচে। সেই খন্দকার আব্দুল রশিদ প্রায় ঘরবন্দি হলেও পরের দুই প্রজন্ম বঙ্গবন্ধু পরিবারের জন্য একই রকম জান-হাজির।   

Advertisement

অগ্নি রায়

ঢাকা শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:১৬
Share:

আগামী শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশের পড়ুয়াদের হাতে বিনামূল্য পাঠ্যপুস্তক বিতরণের সূচনায় এক আদিবাসী ছাত্রীর হাতে বই তুলে দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। নিজস্ব চিত্র

এখানে এলেই জলদগম্ভীর গলায় হাঁক পাড়তেন শেখ মুজিব, ‘বাদশা মিয়াঁ কই গেল রে? ডাইকা আন!’

Advertisement

ঢাকার দক্ষিণে পুরনো জনপদ এই হাজারিবাগ। এখানকার বড়সড় পার্কটিতে জনসভা করতে প্রায়ই আসতেন মুজিবুর রহমান। এসেই যাঁর খোঁজ করতেন, সেই বাদশা মিয়াঁ ওরফে ঢাকা মহমেডান ক্লাবের প্রাক্তন সচিব কে খালেক দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেই মারা গিয়েছেন খানসেনার বেয়নেটের আঘাত ঘাড়ে নিয়ে।

শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রতিবাদে পাকিস্তানি পুলিশবাহিনী থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরেই রাজরোষে পড়েছিলেন বাদশা খান। তাঁর পাঁচ ভাইয়ের এক জনই বেঁচে। সেই খন্দকার আব্দুল রশিদ প্রায় ঘরবন্দি হলেও পরের দুই প্রজন্ম বঙ্গবন্ধু পরিবারের জন্য একই রকম জান-হাজির।

Advertisement

ধানমন্ডি কেন্দ্রের এই এলাকাটি পুরনো দিল্লির মতো ঘিঞ্জি। ৭০ সালে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ ভাবে জিতে এই পার্কেই মুজিব প্রথম গণসংবর্ধনা নিতে এসেছিলেন। এলাকার তরফে বাদশা খান তাঁর হাতে তুলে দিয়েছিলেন সাড়ে সাত কিলোগ্রামের একটি স্বর্ণনৌকা, আওয়ামি লিগের প্রতীক।

আরও পড়ুন: সীমান্তে জামাত, উদ্বেগে ভারত

তিরিশ তারিখ ভোটের আগে সাউন্ড বক্স লাগানো রিকশা-প্রচারে ছয়লাপ এই মহল্লা। তারস্বরে বিভিন্ন জনপ্রিয় গানের ভোট-সংস্করণ! আওয়ামি লিগ প্রার্থী ফজলুল হক তাপস শেখ হাসিনার পিসতুতো ভাই শেখ ফজলুল হক মণির ছেলে। খুবই জনপ্রিয়।

যিনি গলি চিনিয়ে বাদশা খানের বাড়ি নিয়ে গেলেন, সেই দর্জির দোকানের মাস্টার মজনুর মিয়াঁ জানাচ্ছেন, “পাঁচ সাত বছর আগেও মোটেই নিরাপদ ছিল না এই এলাকা। মাদক বাণিজ্য, তার জেরে খুন, অস্ত্র ব্যবসা, সব ছিল। জনবসতির মধ্যেই ছিল বিষাক্ত ট্যানারি। এখন সব বদলে গিয়েছে। ট্যানারি তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে প্রান্তিক অঞ্চলে।”

প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে পঞ্চাশ বছর শেখ মুজিব এবং তার কন্যার সঙ্গে সুখে দুঃখে জুড়ে থাকা এই তিন প্রজন্ম এলাকায় ভাসিয়ে রেখেছেন নৌকা। “ছোটবেলায় ভাবতাম রাজনীতি করব না। কিন্তু এখন আব্বা-চাচা-নানাদের সঙ্গে বেরিয়ে ক্যানভাসিং করছি,” বলছেন এ বার প্রথম ভোটাধিকার পাওয়া ছাত্র রিজভি খন্দকার নিলয়। “ছোট বেলায় কোনও দিন আমাদের সরকারি স্কুলে বছরের প্রথম দিনে নতুন বই আসতে দেখিনি। চেয়েচিন্তে পুরনো বই নিয়ে পড়তে হতো। কিন্তু আপা (দিদি) আসার পর থেকে পয়লা জানুয়ারি নতুন বই এসে যায়। দশ বছরে এর নড়চড় হয়নি,” সরল এবং সপাট যুক্তি নিলয়ের।

নিলয়ের আগের প্রজন্মের খন্দকার জামালুদ্দিন লাবু ভীষণ ব্যস্ত প্রতিদিনের পারিবারিক মিটিং নিয়ে। এ’টি আসলে রাজনৈতিক মিটিং। এই একটি পরিবার থেকেই পাঁচশোর উপর ভোট রয়েছে আওয়ামি লিগের। তাদের একত্র করা, এলাকায় ক্যানভাসিং, প্রতিবেশী-কুটুম্বদের সঙ্গে পান-দোক্তা-ঠান্ডা পানীয় খেতে খেতে ভোট মজলিশ— প্রচারের এ এক অভিনব কৌশল।

বাদশা খানের ভাই বছর পঁচাশির রশিদ সাহেব এখন প্রায় শুয়েই থাকেন। “খানসেনাদের অত্যাচার আমার উপরও কম হয়নি। এখন আর নড়তে পারি না। তবে ভোটটা দিয়ে আসব,” জড়ানো স্বরে জানাচ্ছেন রশিদ সাহেব। সেনাবাহিনীর আনাগোনার খবর জোগাড় করে মুক্তিযোদ্ধাদের দিতেন তিনি। “মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল, প্রাণে বেঁচে গিয়েছি,” মাথা নিচু করে দাগ দেখালেন।

এই সব পুরনো দাগের হিসাব চোকাতে ৩০ ডিসেম্বরের দিকে তাকিয়ে এই বিরাট পরিবারটি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement