দুগ্গা ঠাকুরের বাহনের নাম বলতে বললে একশো জনের মধ্যে হয়তো একশো এক জন বলে দেবে সঠিক উত্তরটা। সিংহ! যার জন্য দুর্গার আরেক নাম সিংহবাহিনী।
কিন্তু যদি বলা হয়, মা দুর্গার বাহন থাকে কোথায়? তা’হলে চটজলদি ক'জন সঠিক উত্তরদাতা পাওয়া যাবে, নিশ্চিত করে বলা হয়তো মুশকিল।
আসুন, শুধু দুগ্গা ঠাকুরের বাহন কোথায় থাকে, তা বলার পাশাপাশি তার বাসস্থান ঘুরে আসার খবর দেওয়া যাক।
কোথায় থাকেন দুগ্গা ঠাকুরের বাহন সিংহ? গির অরণ্য। যার সরকারি নাম, গির জাতীয় উদ্যান এবং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। গুজরাত রাজ্যের মধ্যাঞ্চল ওরফে মধ্য গুজরাতের টালালা গিরে। সোমনাথ থেকে ৪৩ কিমি বা ২৭ মাইল উত্তর-পূর্বে এবং জুনাগড় থেকে ৬৫ কিমি বা ৪০ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে গির অরণ্য।
কী ভাবে যাবেন ট্রেনে: গির জাতীয় উদ্যান এবং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের নিকটতম দুটো রেল স্টেশন ভেরাভাল ও জুনাগড়। এ ছাড়া রাজকোট রেল স্টেশন ১৬৫ কিমি দূরে। দেশের সমস্ত প্রধান ট্রেনের সংযোগ রয়েছে এই স্টেশনগুলিতে।
প্লেনে গেলে: বিমানে গেলে নিকটতম দু’টি বিমানবন্দর হল রাজকোট এয়ারপোর্ট (১৬০ কিমি দূর) এবং কেশোদ (গির অরণ্য থেকে ৭০ কিমি দূরে)। তবে কেশোদ-এ সব এয়ারলাইন্সের বিমান ওঠা নামা করে না।
থাকার জায়গা: প্রচুর হোটেল, রিসর্ট ও অরণ্যের ভেতর স্টে-হোম-তে থাকার ব্যবস্থা আছে বিভিন্ন ধরনের অর্থমূল্যে।
কোন সময়ে যাবেন: এখানে বেড়াতে যাওয়ার বছরের সেরা সময় ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস। এপ্রিল-মে, এই দু'মাস এখানে খুবই গরম। যদিও বন্যজীব সমূহ দেখার এবং আলোক চিত্রের জন্য এটাই শ্রেষ্ঠ সময় গির অরণ্যে আসার। এ ছাড়া, প্রতি বছর ১৬ জুন থেকে ১৫ অক্টোবর গির জাতীয় উদ্যান এবং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য পর্যটকদের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে।
অরণ্য সাফারি: গির জাতীয় উদ্যান এবং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে জিপ সাফারি যেমন গা-ছমছমে দুর্দান্ত, তেমনই তুমুল জনপ্রিয়। সাফারি সংক্রান্ত খবরাখবর নিতে গুজরাত ট্যুরিজম-এ কথা বলে নিন। কিছু ওয়েবসাইটেও তথ্য পাওয়া যায়।
কত সিংহ আছে এখানে: ২০১৫ সালে ১৪তম এশিয়াটিক সিংহ গণনায় গির অরণ্যে মোট ৫২৩টা সিংহের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। পুরুষ-মহিলা-শাবক, তিন ধরনের সিংহ-সিংঘি মিলিয়ে। সব অরণ্যের মতোই গির অরণ্যেরও নিজস্ব আদিম চরিত্র আছে। গন্ধ, মাদকতা, রহস্যময়তার চরিত্র। আর সেই রুক্ষ, বন্য প্রাচীন আদিমতার সঙ্গে মুখোমুখি হতে হলে অবশ্যই গির অরণ্যে বেড়াতে যেতে হবে।
গভীর জঙ্গলের ভেতর অজগরের মতো এঁকে বেঁকে চলে যাওয়া কালো পিচের সরু রাস্তা দিয়ে জিপ-সাফারি করতে করতে মা দুর্গার বাহনের পাশাপাশি বিরাট পেখম তোলা বনময়ূরী এবং চঞ্চল হরিণীর দল যখন দেখতে পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।