আমাদের দেশ তিন দিকে সমুদ্র আর মহাসাগরে ঘেরা। আরেকটি দিক আটকানো হিমালয় পর্বতমালায়। দেশের ভিতরেও বরফে ঢাকা নানা পর্বত এবং ভয়ঙ্কর গভীর সব জঙ্গল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আর বাকি যেটা থাকে, প্রকৃতির অসামান্য খেয়ালিপনায় সেটাও ভারতে বিদ্যমান। সুবিস্তৃত মরুভূমি।
উত্তর-পশ্চিম ভারতে বিশাল এলাকা জুড়ে থর মরুভূমি। যেখানে তাপমাত্রা পঞ্চাশ ডিগ্রি সেলসিয়াস উঠে অসহ্য দাবদাহে মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুললেও প্রতি বছর দু’লক্ষ পর্যটক থর মরুভূমি ভ্রমণে যান।
তার মধ্যে প্রচুর ধনবান পর্যটকও আছে। মোটা খরচে যাঁদের কোনও সমস্যাই নেই। আর এ জাতীয় বিত্তশালী পর্যটকদের মরুভূমিতেও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়ার কথা ভেবে থর মরুভূমিতে নয় নয় করে ছাব্বিশটি বিলাসবহুল তাঁবু খাটিয়েছে পর্যটন ব্যবসায়ীরা। অবশ্যই ব্যয়বহুল।
সে সব বলছি একটু বাদেই। কিন্তু তার আগে বলে নিই, মধ্যবিত্তদের বাজেট মতো যথেষ্ট ভাল তাঁবু আছে এখানে। তার সুযোগসুবিধে হয়তো তারকা-মার্কা নয়, কিন্তু যথেষ্ট ভাল এবং সরকার পরিচালিত।
শেষে তার খবর দিচ্ছি। তার আগে তারকা-মার্কা তাঁবুর গপ্পোটা বলে নিই। কী নেই সেই বিলাসবহুল তাঁবুতে? কার্যত পাঁচতারা হোটেলের সমস্ত সুযোগসুবিধে, নানান জিনিসপত্র মরুভূমির বুকে দাঁড়িয়ে থাকা এমন ক্যাম্পে রয়েছে। বিলাসবহুল তাঁবুতে বড় মাপের হোটেলের মান অনুযায়ী শোওয়ার ঘর, বসার রুম, শীতাতপ যন্ত্র, রেফ্রিজেরেটর, চব্বিশ ঘন্টা আলো-জল... সব, সব।
স্বভাবতই বিলাসবহুল তাঁবুর ভাড়া একটু বেশির দিকে। তবে এটি ঠিক রিসর্ট গোত্রের নয়, মরুভূমির ঐতিহ্য, তার স্বাদ, পরিবেশ অটুট রাখার চেষ্টার পাশাপাশি পর্যটকদের আরাম ও বিলাসের যাবতীয় বন্দোবস্ত রয়েছে এ ধরনের অভিনব ক্যাম্পে। মরুভূমিতে উটে চড়ে ঘোরা, মাইলের পর মাইল ল্যান্ড রোভার জিপ ছোটানো, এ রকম সমস্ত সুবিধেও রয়েছে বিলাসবহুল তাঁবুর পর্যটকদের জন্য সদা সর্বদা।
এই মুহূর্তে থর মরুভূমির ভেতরে রাজস্থান সরকারের পর্যটন দফতরের মোট আঠেরোটি তাঁবু আছে। দশটি বিশেষ টেন্ট। ভাড়া দিন পিছু তাঁবুতে থাকার খরচ পাঁচ হাজার টাকা। সেখানে চার জন থাকতে পারে। চার জন ছাড়া এই ভাড়ায় ৫ বছরের নীচে হলে একজন বাচ্চাকে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়।
আটটি সাধারণ তাঁবু। ভাড়া দিন পিছু চার হাজার টাকা। এখানে চার জন থাকতে পারে। পাঁচ বছরের নীচে হলে একজন বাচ্চা থাকার অনুমতি মেলে।
এবার খাবারের কথায়। ওঁরা জানাচ্ছেন, চারটি অখবা পাঁচটি করে তাঁবু পিছু একটি করে রেস্তরাঁ আছে। সেগুলি সরকার পরিচলিত। খাদ্য তালিকা অনুযায়ী দাম দিয়ে খেতে হয়।
রাজস্থান সরকারের পর্যটন দফতরের থর মরুভূমির মধ্যে এই তাঁবু শুরু হয়েছে ১৯৭৮ সাল থেকে। বেসরকারি সংস্থার (যেগুলি বেশিরভাগেরই মালিক ব্যবসায়ীরা) তাঁবু ’৯০ দশকের প্রায় শেষের দিকে চালু হয়।
এ রকম তাঁবু এই মুহূর্তে মোট ৬০টি আছে থর মরুভূমি ভেতরে। তার ভেতর ২৫-২৬টা বিলাসবহুল তাঁবু।
দিন পিছু ভাড়া ৩০ হাজার টাকা থেকে পঞ্চাশ থেকে পঞ্চান্ন হাজার টাকা। বেসরকারি সংস্থার সাধারণ তাঁবুর ভাড়াও দশ হাজার টাকা থেকে শুরু। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।