আপনি পক্ষীপ্রেমী? নানা বিরল প্রজাতির পাখি দেখতে, দেশি-বিদেশি পাখিদের কুহুকলতাল শুনলে মন ভীষণ ভাল হয়ে যায় আপনার? সেই মনটা পুজোর মুখে আবার উস্কে যাচ্ছে?তা হলে পুজোর ছুটিতে আপনার আদর্শ বেড়ানোর জায়গা হতেই পারে লাটপাঞ্চার। পাখিদের স্বর্গরাজ্য। চিন্তা নেই, সঙ্গে সেখানে থাকছে দুর্গা দর্শনের সুযোগও!
লেপচা ভাষায় ‘লাট’ মানে বেত, আর পাঞ্চার-এর অর্থ জঙ্গল। লাটপাঞ্চারকে তাই বলা হয়ে থাকে বেতের বন। ‘মহানন্দা ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি’র সব চেয়ে উঁচু অঞ্চল হল লাটপাঞ্চার।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৫০০ ফুট উচুতে বেশ বড় এক নেপালি গ্রাম। ঝকঝকে সুন্দর রাস্তাঘাট। রাস্তার পাশেই রয়েছে মা দুর্গার মন্দির। শারদীয়ার পাঁচ দিন সেখানে আলাদা করে ধুমধামের সঙ্গে মায়ের পুজো হয়। অঞ্জলিও দিতে পারবেন।
দু’টি পাহাড়ের মাঝে দিয়ে জঙ্গলে মোড়া বিস্তীর্ণ তরাই সমতলে অবস্থিত পাহাড়িয়া গ্রাম লাটপাঞ্চারে গেলেই আপনার মন ভরে পাখি দেখার শখ নিশ্চিত পূরণ হয়ে যাবে।
তার সঙ্গে অবশ্যই লাটপাঞ্চারের উপর থেকে দেখা যায় খরস্রোতা তিস্তার এঁকেবেঁকে বয়ে চলার অপূর্ব দৃশ্য। গ্রাম জুড়ে ছোট-ছোট বাঁশ বনের অসংখ্য সারি, অর্কিড-সিঙ্কোনার বাগিচা ছাড়াও নানান চেনা-অচেনা পাহাড়ি ফুলের মেলা। এলাচ গাছের ভিড়, উচু-নীচু পাহাড়ি রাস্তায় ইচ্ছে মতো ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ।
অবশ্য আসল হল লাটপাঞ্চারে পাখির অবাধ বিচরণ! এখানকার জঙ্গলে ৩৬ রকমের বন্য প্রাণীর পাশাপাশি গোটা গ্রাম জুড়েও ২৪০ প্রজাতির দেশি-বিদেশি পাখি দেখতে পাওয়া যায়। তার মধ্যে অনেকগুলি রীতিমতো বিরল প্রজাতির পাখি।
লাল রঙের মাথার ট্রোগেন, স্কারলেট মিনিভেট, ধূসর কুনচ্যাট, ম্যাগপাই, লম্বা লেজের ব্রডবিল, রুফাস নেকড্ হর্নবিল বা ধনেশ পাখি অন্যতম। এছাড়াও জঙ্গলে পেতে পারেন বিশাল মালয়ান কাঠবিড়ালি, হিমালয়ের কালো ভল্লুক, চিতাবাঘ।
লাটপাঞ্চারের দু’কিলোমিটার দূরেই সিনসেরিদাড়া ভিউ পয়েন্ট। আকাশ পরিষ্কার থাকলে যেখান থেকে দেখা মিলবে তুষারাবৃত চির নতুন কাঞ্চনজঙ্ঘার। লাটপাঞ্চার থেকে ঘুরে আসতে পারেন আশপাশের অহলদাড়া, লাটকুঠি, পাঁচপোখরি, লেপচা মনাস্ট্রি-তেও।
কীভাবে যাবেন : ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি বা শিলিগুড়ি স্টেশনে নেমে, ভাড়া গাড়িতে সেবকের রাস্তা ধরে, কালিম্পং থেকে কালিঝোরা হয়ে বাঁদিকে ঘুরে ১৩ কিলোমিটার এগোলেই লাটপাঞ্চার। শিলিগুড়ি থেকে লাটপাঞ্চারের দূরত্ব ৪১ কিলোমিটার। গাড়ি ভাড়া প্রায় ৩০০০ টাকার আশেপাশে।
থাকার জায়গা : সাধারণ পাহাড়ি গ্রামের তুলনায় লাটপাঞ্চারে হোম স্টে-র সংখ্যা বেশি। থাকা-খাওয়া নিয়ে দৈনিক খরচা মোটামুটি ১১০০ টাকা থেকে শুরু। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।