উত্তরাখণ্ডকে বলা হয় দেবভূমি। কথিত আছে স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেবের বাসস্থান এখানেই। আরও দেবদেবীদের আনাগোনা উত্তরাখন্ডের তুষারাবৃত নানান দুর্গম শৃঙ্গে। অত্যাশ্চর্য প্রাকৃতিক শোভায় মোড়া এখানকার ভূখন্ডগুলি!
পুরাণের বর্ণনা অনুযায়ী মানুষের বিশ্বাস, এই পাহাড়িয়া গ্রামেই ভগবান শিব বিয়ে করেছিলেন সতীকে! পুরান, ইতিহাস, স্থাপত্য, বিজ্ঞান, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ব্যবসা— সব যেন পাশাপাশি হাত ধরাধরি করে বয়ে চলেছে গোয়ালদামে।
ভৌগলিক ভাবে গাড়োয়াল আর কুমায়ুন পর্বতমালার মাঝখানে অবস্থিত গোয়ালদাম আদতে এক পাহাড়ি গাঁ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নিরিখে যে জায়গাটা রূপকথাকেও হার মানায়।
তুষারাবৃত পর্বত শৃঙ্গ, রৌদ্রজ্জ্বল নীল আকাশের নীচে এঁকেবেঁকে যাওয়া পাহাড়ি পথ, বনভূমি, ছোট-বড় নানা ধরনের হ্রদ মিলেমিশে গোয়ালদাম এক শান্ত নিরিবিলি জনপদ। অভিযান-প্রিয় পর্যটকেরাও এখানে এলে নিরাশ হবেন না। প্রচুর ট্রেকিংয়ের সুবন্দোবস্ত আছে এখানে।
সব চেয়ে বড় কথা, জলবায়ু সারা বছর মনোরম। তুষারাবৃত শৃঙ্গের উপস্থিতি সত্ত্বেও শীতে হাড়কাঁপানো ঠান্ডা নেই, গ্রীষ্মে আবার তেমন গরম পড়ে না গোয়ালদামে। জৈব পদার্থের প্রাচুর্য এত বেশি যে, গোটা গ্রাম বছরভর সতেজ থাকে। সব সময় বুক ভরে তাজা শ্বাস নেওয়ার জন্য এর চেয়ে ভাল ভূখন্ড সত্যিই বিরল।
ইতিহাসের দিকে থেকেও এ এক বিচিত্র এলাকা। ইতিহাসবিদদের মতে, গাড়োয়াল সেনা আর কুমায়ুন চাঁদ রাজবংশের সৈন্যদের মধ্যে ১৫৯০ সালে যে লড়াই হয়েছিল, তার পটভূমি এই গোয়ালদাম। নানা বংশের শাসনাধীনও থেকেছে এই গ্রাম। চাঁদ, গোর্খার পরে ব্রিটিশ শাসন। স্বাধীন ভারতে গোয়ালদাম পড়ে উত্তরাখণ্ডর রাজ্যের চামেলি জেলায়।
কৌশানি থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে বৈজনাথ মন্দির এখানকার অন্যতম সেরা দ্রষ্টব্যস্থান। ছোট-বড়-মাঝারি নানা মন্দিরের সমাহার বৈজনাথ মন্দির। এখানকারই গড়ুর গঙ্গা এবং গোমতী নদীর সঙ্গমস্থলে ভগবান শিব আর সতীর বিবাহ হয় বলে মানুষের বিশ্বাস।
অল্প দূরের কৌশানি টি এস্টেট এখানে আরও একটি দেখার জায়গা! ২০৮ হেক্টর চরাচরব্যাপি এলাকা জুড়ে জৈব চায়ের ক্ষেত। প্রকৃতিপ্রেমী এবং চা-ভক্ত দুই শ্রেণির মানুষই এখানে এলে মুগ্ধ হয়ে যাবেন। তবে এই চা-বাগিচা ট্যুরিস্টদের জন্য নভেম্বর থেকে মার্চ, বছরে চার মাস বন্ধ থাকে।
স্থানীয় মহিলারা অজস্র ধরনের নানা হস্তশিল্পে পটু। হাতে বানানো নানা দ্রব্যাদি গোয়ালদামের বাজারে কিনতে পাওয়া যায়।
কীভাবে যাবেন : বিমানে নিকটতম বিমানবন্দর পন্তনগর। ওখান থেকে ২০০-২৫০ কিলোমিটার সড়ক পথে গোয়ালদাম। ট্রেনে কাঠগোদাম স্টেশনে নেমে সেখান থেকে বাস বা জিপে যেতে হয়। সড়কপথে দিল্লি থেকে যাওয়া ভাল। থাকার জায়গা : গোয়ালদামের বাইরে অনেকগুলি হোটেল ও রেস্তোরাঁ পাবেন। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।