তামিলনাড়ু রাজ্যে এই জেলাটির দক্ষিণে একটি বিশেষ স্থানের দিকে পিছন ফিরে উত্তর দিকে কখনও তাকিয়ে দেখেছেন কি? দেখে থাকলে নিশ্চয়ই মনে পড়ছে সেই মুহূর্তে মনের মধ্যে জাগা অনির্বচনীয় অনুভূতির কথা! আর যদি না দেখে থাকেন, তা হলে আপনার পরের ভ্রমণে অবশ্যই রাখুন, সমুদ্রের বুকে ভারতের সর্ব দক্ষিণের শেষ বিন্দুকে!
হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন! কন্যাকুমারী। তামিলনাড়ু রাজ্যের কন্যাকুমারী জেলার অন্তর্গত সমুদ্রের বুকে দেবী কন্যাকুমারীর মন্দিরই ভারতের মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণতম শেষ বিন্দু।
যেখান থেকে দক্ষিণে ভারত মহাসাগরের দিকে পিছন ফিরে উত্তর দিকে তাকালে মনের মধ্যে স্বর্গীয় অনুভূতি জাগবেই। কারণ, সেই মুহূর্তে আপনি দাঁড়িয়ে আছেন গোটা ভূ-ভারতের একদম পাদদেশে। এর পর কোন ভারতবাসীর মন শ্রদ্ধা ও আবেগে না ভরে থাকতে পারে?
তিন সাগরের সঙ্গম স্থল হল কন্যাকুমারিকা। আর সেই মিলনক্ষেত্রেই দেবী কন্যাকুমারীর মন্দির। সাগর পাড়ে দাঁড়ালে সামনে শান্ত ঘন নীল ভারত মহাসাগর। একটু বাঁদিকে ফিকে ও ঘোলাটে নীল বঙ্গোপসাগর। ডান দিকে পান্না সবুজ আরব সাগর।
কন্যাকুমারী ভারতের এক মাত্র সৈকত, যেখানে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে সমুদ্রে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখা যায়। দূরের সমুদ্রে জলবিভাজিকাও দেখা যায় কন্যাকুমারী ঘাট থেকে।
বাঙালির চির গর্বের শহর কন্যাকুমারী। এখানেই স্বামী বিবেকানন্দ সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেছিলেন।
তিন সমুদ্রের মাঝে যে শিলাখন্ডের উপর বসে স্বামীজি ধ্যান করেছিলেন, সেই শিলা আজ বিবেকানন্দ রক নামে জগদ্বিখ্যাত! তাঁকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বিবেকানন্দ স্মারক ভবন।
আছে কুমারী মাতার মন্দির। সতীর অন্যতম পীঠস্থান। স্থানীয় নাম কুমারী আম্মান।
আছে প্রাচীন তামিল মহাকবি তিরুবল্লুবরো, ওরফে থিরুভাল্লুভারের ১৩৩ ফুটের বিশালাকায় মূর্তি। আছে গান্ধীমন্ডপম। ভারত মহাসাগরের জলে মহাত্মা গান্ধীর চিতাভস্ম বিসর্জনের আগে এই জায়গায় রাখা হয়েছিল।
প্রাচীনকালেও কন্যাকুমারী ছিল তামিলাকাম বা প্রাচীন তামিল দেশের দক্ষিণতম সর্বশেষ অঞ্চল। হিন্দু দেবী কন্যাকুমারী নাম থেকেই কন্যাকুমারিকা হয়েছে।
ব্রিটিশ যুগে কন্যাকুমারীর অপর নাম ছিল কেপ কমোরিন। ইংরেজি নামটা এখনও সেখানকার কোনও কোনও প্রাচীন রাস্তাঘাটে দেখা যায়।
তিনটি কারণে কন্যাকুমারীর তাৎপর্য আলাদা। প্রথমত, এটাই ভারতের শেষ বিন্দু বা মূল ভূখণ্ডের শেষ প্রান্ত। দ্বিতীয়ত, তিন সাগরের মিলনস্থল হওয়ায় সর্বদা উত্তাল সমুদ্র।
তৃতীয়ত, বিবেকানন্দ রক। এবং স্বামী বিবেকানন্দ স্মৃতি মন্দির ভবন। ফলে কন্যাকুমারী না ঘুরলে বাঙালির ভ্রমণই হয়তো অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
কীভাবে যাবেন - হাওড়া স্টেশন থেকে সরাসরি কন্যাকুমারী যাওয়ার একটিই ট্রেন আছে। হাওড়া-কন্যাকুমারী সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। প্রতি শনিবার হাওড়া থেকে ছেড়ে কন্যাকুমারী পৌঁছায় সোমবার। এ ছাড়া, অন্য ট্রেনে চেন্নাই বা তিরুবন্তপুরম গিয়ে সেখান থেকেও কন্যাকুমারী পৌঁছনো যায়।
তা ছাড়া, দক্ষিণ ভারতে বাস পরিষেবা অত্যন্ত ভাল। প্রায় সব বড় শহর থেকেই লাক্সারি বাস পাবেন কন্যাকুমারী যাওয়ার।
থাকার জায়গা - কন্যাকুমারীতে অনেক বড়-ছোট হোটেল ও গেস্ট হাউস পাবেন।