১. মিমবস্তি: নির্ভেজাল সৌন্দর্যে ঘেরা ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম মিমবস্তি। স্বল্প চেনা দার্জিলিংয়ের জায়গা গুলির মধ্যে এটি বেশ নাম করে ফেলেছে। শিলিগুড়ি থেকে দূরত্ব প্রায় ৭৫ কিলোমিটার। পৌঁছানোর সময় দার্জিলিংয়ের রাস্তা ধরলে একটু কাছাকাছি হয়। মিমবস্তির ওপর চা বাগানের সৌন্দর্যর সঙ্গে অদূরে কাঞ্চনজঙ্ঘার হাতছানি যে কোনও ভ্রমণপ্রিয় মানুষকে পাকড়ে ধরে। চারিদিকে বাহারি ফুলের সুবাস এবং নাম না জানা পাখির কাকলি আপনাকে নিঃসন্দেহে মুগ্ধ করবে। থাকা ও খাওয়ার খরচ মাথাপিছু রোজ ১৮০০/২২০০ টাকা। নিউ জলপাইগুড়ি অথবা শিলিগুড়ি ৮৭ কিলোমিটার রাস্তা, গাড়ি ভাড়া পরে প্রায় ৩৬০০/৪০০০ টাকা।
২. ফিকালেগাঁও: ফিকালেগাঁও পাহাড়ের কোলে থাকা একটি ছোট্ট অজানা গ্রাম। সাংসে খাস মহলের মধ্যে এই গ্রামে থেকে আপনি কাঞ্চনজঙ্ঘার অনাবিল আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন। উত্তর বঙ্গের একমাত্র আপেল বাগান এখানেই আছে। এখান থেকে আপনি খুব সহজেই মনসুন, তিস্তা, বার্মিক, সাংসের, গ্যাংটক বা সিল্ক রুট যেতেই পারেন। প্রকৃতির অনাবিল আনন্দকে উপভোগ করতে হলে এখানে অবশ্যই একবার আসতে হবে। নিউ জলপাইগুড়ি বা শিলিগুড়ি থেকে ৭৮ কিলোমিটার রাস্তা, গাড়ি ভাড়া ৩৫০০/৪০০০ টাকা। থাকা ও খাওয়া খরচ ১৩০০ টাকা মাথা পিছু রোজ।
৩. মিসনতার: কয়েকটি নেপালি পরিবার নিয়ে কালিম্পঙে গড়ে উঠেছে একটি ছোট গ্রাম মিসনতার। এই লেপচা গ্রামের মূল সৌন্দর্য হল চারিদিক জঙ্গল ঘেরা। সঙ্গে খরস্রোতা নদী। এই নদীতে বারো মাস জল থাকে। পাশাপাশি এই নদীতে যেমন মাছ দেখতে পাবেন তেমনই ধরতেও পারবেন। লেপচা পরিবারগুলি এই গ্রামকে তাঁদের নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছে। চাইলে এখান থেকেই আপনি চাইলে কালিম্পং শহরের পার্শ্ববর্তী দর্শনীয় স্থানগুলি ঘুরে দেখতে পারেন। শিলিগুড়ি বা নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দূরত্ব ৮৫ কিলোমিটার। এখানে থাকা ও খাওয়ার দিন প্রতি মাথা পিছু ১৬৫০ টাকা।
৪. রিশিহাট: নিউ জলপাইগুড়ি বা শিলিগুড়ি থেকে কার্শিয়াং সোনাদা ঘুম হয়ে পৌঁছে যেতে হয় এই ছোট্ট নেপালি গ্রামে। দার্জিলিং শহর থেকে মাত্র ২২ কিলোমিটার দূরত্বে ছোট পাহাড়ি গ্রাম রিশিহাট। বিভিন্ন ফুলের রঙিন সমারোহ সঙ্গে নাম না জানা বিভিন্ন পাখির কলরব শোনা যায় এই গ্রামের সর্বত্রই। এই গ্রামে গেলেই পেতে পারেন শান্তির ছোঁয়া। শিলিগুড়ি/নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ছোট গাড়ি ভাড়া করলে ৩৮০০ টাকা পড়ে। বড় গাড়ি ভাড়া করে গেলে ৪২০০ টাকা পড়বে। এখানে থাকা ও খাওয়ার ১৫০০ টাকা মাথা পিছু।
৫. খারকাগাও: নিস্তব্ধতা, কোলাহল মুক্ত জীবন আজকের দিনে কে না চায়! তাই সপ্তাহান্তে যদি পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে চান, তা হলে যেতে পারেন পাহাড়ের কোলে লুকিয়ে থাকা ছোট্ট আস্তানা খারকাগাও গ্রামে। যেখানে ঘুমন্ত বুদ্ধর ভোরের রঙে চোখ মন শান্তিতে ভ’রে যায়। মাথা পিছু দিন প্রতি থাকা খাওয়া ১৪০০ টাকা। শিলিগুড়ি ও নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দূরত্ব ৮৩ কিলোমিটার। গাড়ির খরচ ৩৫০০ টাকা।
৬. ঝেঁপি: জনবসতি থেকে একটু দূরে নির্জনে এক টুকরো শান্তির ছোঁয়া পাবেন এই গ্রামে। ঝেঁপি গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে। এখানে সকালের ঘুম ভাঙ্গে অজানা পাখির কুঁজনে ও ফুলের গন্ধে। থাকা খাওয়া্র খরচ একজনের মাথাপিছু ১৬০০ টাকা। নিউ জলপাইগুড়ি বা শিলিগুড়ি থেকে এই ঝেঁপি গ্রামের দূরত্ব ৮৭ কিলোমিটারের মতো।
৭. জামুনি: চারিদিকে গাঢ় সবুজ চা বাগানে ঘেরা মনমাতানো একটা গ্রাম জামুনি। গ্রামে কিছু লেপচা, গুরুং জাতির বসবাস। এখানে মানুষেক জীবিকা বলতে চা, বিভিন্ন চাষ ও পশুপালন। নাম না জানা বিভিন্ন ফুল আর অর্কিডে ভরে উঠেছে গোটা গ্রাম। সঙ্গে রয়েছে পাখিদের কলতান। অন্য রকম অনুভুতির সাক্ষী থাকতে চাইলে অবশ্যই একবার ঘুরে আসুন এই জামুনি গ্রামে। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ৮০ কিলোমিটার। থাকা খাওয়া খরচ একজনের মাথাপিছু ১৮০০ টাকা।
৮. চিবো: হিমালয়ের কোলে মেঘে ঢাকা একটা ছোট্ট গ্রাম চিবো। যদি হাতে মাত্র চার দিনও সময় থাকে, ঘুরে আসতে পারেন। কালিম্পং থেকে চার কিলোমিটারের কিছুটা বেশি দূরত্বে, ৪১০০ ফুট উচ্চতায় এই গ্রামটির সঙ্গে এখনও টুরিস্টদের বেশি জানাশোনা হয়নি। চিবোতে থাকার জায়গা একটিই রিসর্ট, ‘চিবো ইন’। পাহাড়ের ঢালে ছড়ানো ছোট-ছোট কাঠের কটেজ। তাতে বহু বিদেশি সমাগমের কারণে আধুনিক অনেক সুবিধেই পাবেন। নিউ জলপাইগুড়ি/শিলিগুড়ি থেকে ৭৬ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই গ্রাম। থাকা খাওয়ার খরচ মাত্র ১৪০০ টাকা।
৯. বিজনবাড়ি: ছোট রঙ্গিত নদীর তীরে ছোট একটা গ্রাম বিজন বাড়ি। রয়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এই গ্রামের আসল আকর্ষণ রঙ্গিত নদী। গ্রামের গা ঘেঁষে বয়ে গিয়েছে খরস্রোতা নদীটি। আর সেই নদীর ধারেই গড়ে উঠেছে ছোট ছোট হোম স্টে। পাহাড় ঘেরা গ্রামের মাঝে নীল জলে ডুব দিতে কিন্তু বেশ লাগে।
১০. লেপচাজগৎ: দার্জিলিং থেকে মাত্র ১৯ কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে লেপচাজগৎ। লেপচাজগতে ‘মেঘ গাভীর মতো চরে’। পাইনে ঘেরা এই পাহাড়ি জনপদে মাঝে মাঝে ঢাকা পড়ে যায় একরাশ কুয়াশায়। মূলত লেপচা অধিবাসিত গ্রাম, তাই নাম লেপচাজগৎ। গ্রামকে ঘিরে রয়েছে ওক, পাইন, রডোডেনড্রনের সমাহার। দার্জিলিং থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে অবস্থিত জায়গাটি সত্যিই অতুলনীয়। এখানে সহজেই হারিয়ে যাওয়া যায় কুয়াশা মাখা প্রকৃতির কোলে।
১১. ছোটা মাঙ্গোয়া: দার্জিলিং পাহাড়ের একেবারে আনকোরা জায়গা ছোটা মাঙ্গোয়া। মাঙ্গোয়া পাহাড়ের চূ়ড়ায় ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম ছোট মাঙ্গোয়া। এখানে এলে আপনি চা বাগান, কাঞ্চনজঙ্ঘা, কমলালেবু বাগান, পাহাড়ি নদী, ফুলে ঢাকা রাস্তা, সবটাই পাবেন। আর পাবেন একরাশ নির্জনতা, অপার ভালো লাগা। ছোট মাঙ্গোয়া এলে আপনি খুব কাছ থেকে দেখতে পাবেন পাহাড়ি জীবনকে। তাঁদের সহজ সরল মানসিকতাকে।
১২. বেনদা: কালিম্পং-এর কাছেই স্বল্প চেনা একটি জায়গার নাম বেনদা। ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম। পাহাড়ের কোলে ছোট্ট একটা উপত্যকায় তৈরি হয়েছে এই গ্রামটি। ছোট ছোট কটেজ রয়েছে এই হোমস্টে। ছোট্ট এই গ্রামে ফুলগাছের অভাব নেই। বেনদায় খুব একটা পর্যটকদের সমাগম হয় না। তাই এখানে আসতে হলে আগে থেকে হোমস্টে বুক করে আসাই ভাল। কালিম্পং থেকে গাড়ি করেও আসা যায়। তবে হোম স্টের গাড়িতে এলে সুবিধা হবে বেশি। এনজেপি থেকে শেয়ার গাড়িতে পৌঁছে যান কালিম্পং সেখান থেকে আবার গাড়িতে বেনদা।