নাইনাতিভু নাগাপুসানি আম্মান মন্দির হল একটি প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক দেবী পার্বতীর মন্দির, যা শ্রীলঙ্কার জাফনা রাজ্যের প্রাচীন রাজধানী নাল্লুর থেকে ৩৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখানে দেবী নাগপুশানি বা ভুবনেশ্বরী নামে পরিচিত এবং শিবকে এখানে রাক্ষসেশ্বর (নয়নার) নামে অভিহিত করা হয়েছে।
কিংবদন্তি আছে, নয়নাতিভু নাগাপুশানি আম্মান মন্দিরটি প্রতি বছর হাজার হাজার ভক্তকে জাফনার ক্ষুদ্র নাগাদীপা দ্বীপে আকর্ষণ করে। জাফনার এই আম্মান মন্দিরটি বিশ্বের ৫১টি শক্তিপীঠের মধ্যে একটি। এখানে পড়েছিল দেবীর পায়ের মল।
কথিত আছে, ভগবান ইন্দ্র একটি অভিশাপ থেকে বাঁচতে নিজে এসে তপস্যা করেছিলেন এই শক্তিপীঠে।
ঋষি অগস্ত্যের স্ত্রী অহল্যার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন দেবরাজ ইন্দ্র। ইন্দ্রদেব ঋষি অগ্যস্তের ছদ্মবেশে অহল্যাকে প্ররোচিত করতে উদ্যত হন। ঘটনাটি জানতে পেরে দেবরাজ ইন্দ্রকে অভিশাপ দেন অগস্ত্য মুনি। এই অভিশাপে দেবরাজ ইন্দ্রের সমস্ত দেহ সহস্র যোনিতে পূর্ণ হয়ে যায়। লজ্জিত ইন্দ্রদেব পলায়ন করে নিভৃতবাস শুরু করেন নয়নাতিভু দ্বীপে।
এখানে তিনি স্বহস্তে গড়েন এক দেবী মূর্তি এবং শুরু করেন কঠোর তপস্যা। মহাবিশ্বের রানী, ভুবনেশ্বরী আম্মান, ইন্দ্রের সামনে উদ্ভাসিত হন। ইন্দ্রদেব চরম ভক্তি, অনুশোচনা এবং অনুতাপ প্রদর্শন করলে দেবী তাঁকে ক্ষমা করেন এবং শাপমুক্ত করেন। দেবী তাঁর দেহের যোনিগুলিকে চোখের বলয়ে রূপান্তরিত করেন এবং তখন থেকেই ইন্দ্রদেব "ইন্দ্রাক্ষী" নামে পরিচিত হন।
সাধারণ দ্রাবিড় শৈলীতে নির্মিত এই বিশাল মন্দিরটি ষোড়শ শতকে পর্তুগিজদের দ্বারা আংশিকভাবে ধ্বংস হয়েছিল। নতুন মন্দিরটি ১৭২০ সালে নির্মিত হয় এবং ১৭৯০ সাল পর্যন্ত এটি সম্প্রসারিত হতে থাকে।
নৈনাতিভু আসলে সেই দ্বীপের নাম যার উপর এই মন্দিরটি অবস্থিত। দ্বীপটির আরেকটি জনপ্রিয় নাম রয়েছে - নাগদীপা। এটি উত্তর শ্রীলঙ্কার জাফনার উপকূলে অবস্থিত।
নাগাদীপা দ্বীপটি শুধু নাগাপুশানি আম্মান মন্দিরের জন্য বিখ্যাত নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটির আরেকটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে, এখানে রয়েছে একটি বৌদ্ধ মন্দির, যাকে বলা হয় নাগদীপা পুরাণ বিহারায় । এই নাগদীপা বৌদ্ধ মন্দিরটি সেই ১৬টি স্থানের মধ্যে একটি যা ভগবান বুদ্ধ নিজে পরিদর্শন করেছেন। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।