আবহাওয়া দফতর মন খারাপ করে দিয়েছে তো আপনার? আকাশে বাতাসে কী সব কথা উড়ছে! শোনা যাচ্ছে, নিশ্চিন্তে মহাষ্ঠমী পর্যন্ত ঠাকুর দেখা চললেও, নবমী থেকে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়তে পারে প্যান্ডেলে-প্যান্ডেলে হামলে পড়া মানুষজনের। মহা নবমী-বিজয়া দশমী ভাসতে পারে বৃষ্টিতে। দুয়ারে নাকি নিম্নচাপ! বোঝো! সত্যি? রক্ষা করো মা!
দেখুন কী হবে, কী না হবে ভেবে লাভ নেই। ঠাকুর দেখার ষোলো আনা আনন্দ অন্য ভাবে ঘুরে-বেড়িয়ে উপভোগ করার খোঁজ দিচ্ছে এই প্রতিবেদন। সঙ্গে গাড়ি আছে তো? চার চাকার! বা অন্তত একটা ভাল বাইক? ব্যস, তা হলেই আপনার মন খারাপকে এক লহমায় আনন্দে ভরিয়ে তুলতে পারে একটা দু'দিনের 'রোড ট্রিপ'!
কাছেই! কলকাতা থেকে সড়কপথে মোটামুটি আড়াইশো কিলোমিটারের দূরত্বে। পড়শি রাজ্যেই এক অপরূপ জায়গা! এক সঙ্গে নদী-পাহাড়-অরণ্য-ঝর্না-হ্রদ-আদিবাসী জনজাতি-হস্তশিল্প, এত কিছু যদি আপনি ভালোবাসেন, তা হলেও এ সব কিছু চেটেপুটে উপভোগ করার আদর্শ গন্তব্য রয়েছে আপনার জন্য।
ওড়িশার বাংরিপোসি। মহাষ্ঠমী অবধি শুকনোয় শুকনোয় চুটিয়ে ঠাকুর দেখে নবমীতে ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে প্রিয় সঙ্গীকে পাশে বসিয়ে গাড়িতে হুশ করে রওনা দিন। বাইকেও সঙ্গীকে পিছনে নিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন ওড়িশার এই অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের গন্তব্যে। মন খারাপ? ঘচাং ফু!
মাত্র দু'দিনের 'রোড ট্রিপে' আপনি কত কিছুই দেখতে পাবেন বাংরিপোসিতে। পুজোতে মানুষের মনটা এমনিতেই কাব্যিক থাকে। চলুন বাংরিপোসি। কাব্য ফল্গুধারার মতো বইবে। অদ্ভুত কাব্যিক-প্রেমজ সব নাম এখানকার পর্বতশৃঙ্গ, নদী, লেক, অরণ্যের!
জায়গাটার চারপাশ ঘেরা বিদ্যাভান্ডার, অর্ধেশ্বর, বুড়াবুড়ি নামের পাহাড়চুড়োয়। দাঁড়ান, দাঁড়ান, এখানেই শেষ নয়। কাছেই পাবেন বরেহিপানি ঝর্না, বাঁকাবল হ্রদ, ঠাকুরানি পাহাড়।
আর দেখা পাবেন এ দেশের আদি জনজাতির মানুষের। কত রকমেরই না আদিবাসীর বাস বাংরিপোসিতে। সাঁওতাল, ভিল, মুন্ডা, লোধা! ইচ্ছে হলে কাছেই সিমলিপাল জাতীয় উদ্যান, তেমনই কাছাকাছির মধ্যে পড়া কেওনঝড় জঙ্গল, শতাব্দী-প্রাচীন সিমলেশ্বরী শিবমন্দির, শনিবারের হাট ঘুরে-দেখে-শুনে আসতে পারেন।
এমনকি আপনি হস্তশিল্প-পিপাসু হলেও নিরাশ হবেন না। বাংরিপোসি থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে কুলিয়ানা গ্রাম, ডোকরা শিল্পের জন্য যে জনপদ পৃথিবী বিখ্যাত। আপনি নিখাদ প্রকৃতিপ্রেমী হলেও বাংরিপোসি আপনার মন খারাপের সময় তাকে চাঙ্গা করতে আদর্শ গন্তব্যস্থল।
খান থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরে শাল-সেগুন-মহুয়া-শিমুল-পলাশে ছাঁওয়া কানচিন্ডা-র মোহময়ী রূপ আপনার প্রকৃতিপ্রেমে লাবডুব তুলে দেবে। বাঘা যতীন-খ্যাত বুড়িবালামের শাখা নদী কালাচাঁদের পাড়ে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত, দু ই-ই দেখার সৌন্দর্য আপনার মন কাড়বেই।
লেক ও বাঁধ, তা’ও পাবেন বাংরিপোসিতে। বাঁকাবল লেক ও বাঁধ দেখতে যেন ভুলবেন না!
কীভাবে যাবেন - সড়কপথে গাড়িতে কলকাতা থেকে বাংরিপোশি আড়াইশো কিলোমিটারের আশপাশে। ট্রেনে গেলে হাওড়া থেকে বালেশ্বর স্টেশনে নেমে সেখান থেকে ভাড়াগাড়িতে ৯৫ কিলোমিটার গেলে বাংরিপোশি। বাংরিপোশিতেই বেশ কয়েকটা খাওয়া-থাকার হোটেল আছে। মধ্যবিত্তর বাজেটের মধ্যেই। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।