পুজোর ভিড় ভাল লাগে না অনেকেরই। পালাতে চান শহর ছেড়ে। এদিকে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা মানেই তো এখন অন্তত তিন-চার মাস আগে উঠে পড়ে লাগা। পুজোর সময় হলে তো আরও চাপ।
অফিস-ব্যবসা সামলে অত আগে অনেকেই ভেবেই উঠতে পারেন না, কী করবেন, কোথায় যাবেন। ফলে শেষ মুহূর্তে ট্রেন বা প্লেনের টিকিট না পেয়ে বেড়ানোটাই মাঠে মারা যায়। মন খারাপ নয়। নিজের গাড়ি বা ভাড়া গাড়িতে চড়ে বসুন। আর নীচে বলে দেওয়া কোনও একটা জায়গায় চলে যান। স্বল্প চেনা। নিরালা ঠাঁই।
১. ভালুখোপ- কালিম্পঙের কাছে প্রায় ৫ হাজার ৩০০ ফুট উচ্চতায় এই জায়গা এক্কেবারে স্বল্প চেনা। আপনি যদি পাহাড় ঘুরতে ভালবাসেন আর ভিড় এড়িয়ে নিরিবিলিতে ছুটি কাটাতে চান, নিঃসন্দেহে চলে যেতে পারেন কাঞ্চনঞ্জঙ্ঘার দৃশ্যে ঘেরা ছোট্ট এই গ্রামে। কলকাতা থেকে দূরত্ব প্রায় ৬২৪ কিলোমিটার। নিজের গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়তে পারেন উত্তরবঙ্গের পথে, নিউ জলপাইগুড়ি অবধি গিয়ে সেখান কালিম্পঙের দিকে ভালুখোপ গ্রামের দিকে চলে আসতে পারেন। চাইলে এই গ্রামে এখান থেকে যেতে পারেন ডেলো পাহাড়, ডেলো পার্ক বুদ্ধমূর্তি ও হনুমান মন্দিরে। গাড়িতে সঙ্গে নিন স্হানীয় কাউকে, তিনিই রাস্তা চিনিয়ে দেবেন। এছাড়া গ্রামের চারপাশে ও জঙ্গলের রাস্তায় হেঁটে সময় কাটাতে পারেন।
২. গনগনি- পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার কাছে জনবসতি গনগনি। সোজা চলে যেতে পারেন এখানে। অফুরন্ত প্রাকৃতিক শোভা চারদিকে। অনেকেই গনগনির সঙ্গে গড়বেতা আর বিষ্ণুপুরে ঘুরে নেওয়া সম্ভব। বলে রাখি, কলকাতা থেকে ১৩৬ কিলোমিটার দূরের এই জায়গায় বৃষ্টি নামলে কিন্তু প্রায় স্বর্গ! শহর কলকাতা থেকে চন্দ্রকোণা রোড ধরে গড়বেতা অবধি গিয়ে, সেখান থেকে জাতীয় সড়ক ধরে পৌঁছে যান গনগনি। গড়বেতার কাছাকাছি অনেক পুরনো মন্দির আছে। যেমন, কামেশ্বরী মন্দির, রাধাব্ললভ মন্দির, রঘুনাথজি মন্দির। চাইলে ঘুরে নিতে পারেন এমন অনেক জায়গাতেই।
৩. মুরগুমা- পুরুলিয়ার আশেপাশে অনেকেই ঘুরতে যাবার জায়গা আছে। তবে ঝাড়খণ্ড-পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তের মুরগুমা জায়গাটির কথা অনেকে জানেন না। কলকাতা থেকে ৩৩০ কিমি দূরত্বে হ্রদের চারপাশ ঘিরে এই আদিবাসী গ্রামটি ভারী অপূর্ব! সবুজের অন্ত নেই। আকাশে মেঘের খেলা। পাহাড়িয়া পথ। শান্ত, নির্জন। বলে রাখি, এখানে ঘুরতে যাবার সেরা সময় হল হালকা শীত। অযোধ্যা পাহাড়ের কাছে জঙ্গল ঘেরা এই গ্রামে গাড়ি করে অনায়াসে পৌঁছে যাওয়া যায়।
৪. তাবাকোশি- আপনি যদি চা বাগানের মাঝে সবুজে ঘেরা শান্তির সময় কাটাতে চান তাহলে গোপালধারা টি এস্টেটের কাছে ৮ কিমি দুরত্বে তাবাকোশি আপনার জন্য আদর্শ জায়গা। রংভাঙ নদীর পাশে। কলকাতা থেকে ৬০১ কিমি দুরত্বের এই জায়গায় পৌঁছনো খুবই সহজ। শিলিগুড়ি থেকে মিরিক। সেখান থেকে সোজা তাবাকোশি। এখানে এলে প্রকৃতির মাঝে অবসর কাটাতে গোপালধারা, থার্বো, সাংমার মতো নানা চা বাগান ঘুরে দেখতে পারেন। এখানে কমলালেবু, ভুট্টা, এলাচ আর আদার ক্ষেত অহরহ। তাবাকোশির খুব কাছে টারজাম জনবসতি। ঘুরে আসতে পারেন ওখানেও।
৫. বড়ন্তি- পুরুলিয়ার নিরিবিলিতে ছুটি কাটানোর জন্য এক দিকে বিহারীনাথ পাহাড় ও অন্য দিকে পঞ্চকোট পাহাড়। তার মাঝে বড়ন্তি। লাল মাটির কাঁচা সড়ক, ফুটফুটে একটা লেক। গাঁয়ের পথে গাড়ি নিয়ে ঘুরলে মন সাফা হয়ে যায়। কলকাতা থেকে মাত্র ২৬৫ কিমি দূরে এই বড়ন্তি। আসানসোল থেকে মাত্র ৪০ কিমি। হৃদে পাশে দাঁড়িয়ে পড়ন্ত বিকেলে অস্তগামী সূর্ষের লালাভ আলোয় সন্ধে নামা দেখাটা বড় মনোরম।
৬. বাংরিপোশি- শুধু পশ্চিমবঙ্গের এদিক সেদিক কেন, ওড়িশা ঠাকুরানি রেঞ্জের মাঝে বাংরিপোশি, নদী, জঙ্গল ও পাহাড় নিয়ে এক দরাজ ঠাঁই। কলকাতা থেকে ২২০ কিমি দূরত্বে এই জায়গায় সারা বছর যে কোনও সময় যাওয়া যেতে পারে। এনএইচ-৬ ধরে সোজা গাড়ি চালিয়ে বাহারাগোরা চেক পোস্ট ও জামসোলা পেরিয়ে পড়ে বাংরিপোশি। বুড়িবালাম ঝরনা, ডোকরা গ্রাম, কনকদেবীর মন্দির ঘুরে দেখতে পারেন এখান থেকে।
৭. বগুরান জলপাই- পূর্ব মেদিনীপুরের বগুরান জলপাই কলকাতা থেকে মাত্র ৪ ঘন্টা দূরে এক না-জানা গন্তব্য। যারা সমুদ্রের পাড়ে একলা বসে সময় কাটাতে পছন্দ করেন, তাঁদের খুব পছন্দ হতে পাড়ে এই জায়গা। স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ীদের গ্রাম ছাড়া মানুষজনের ভিড় প্রায় নেই বললেই চলে, লম্বা সমুদ্রতীর ধরে হেঁটে সূর্যাস্ত দেখা উপভোগ করতে চলে যেতে পারেন বগুরান জলপাই।
৮. পারেন- শিলিগুড়ি থেকে ১০৫ কিমি দূরত্ব পেরোলেই পারেন। ডুয়ার্সের এক নিরিবিলি নির্জন পাহাড়ি গ্রাম। জঙ্গলের কোলে দু’তিনদিন কাটাতে চাইলে একদম না ভেবে চলে যেতে পারেন এখানে। ভুটান সীমান্তের একদম কাছে এই জনবসতির গা ঘেঁষে চলে গিয়েছে জলঢাকা নদী। এর কাছেই বিন্দু জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও গোদাক, তোদে গ্রামে ঘুরে আসতে পারেন চাইলে। এছাড়া পাহাড়ি জঙ্গল ঘেরা রাস্তায় হেঁটে সূর্যোদয় দেখার শখ থাকলে ভীষণ পছন্দ হতে পারে এই জায়গাটি।