কথাতেই আছ ‘বিচিত্র এই ভারতবর্ষ’। আর সত্যিই তাই, ভারতবর্ষের চারিদিকে ছড়িয়ে আছে বিচিত্র সব বিষয়, যা দেখলে অবাক হতে হয় সকলকেই। যুক্তি খাটে না। শুধু ভারতীয়রা নন, ভারতের বাইরের মানুষজনও বেশ কৌতূহল প্রকাশ করে এই সব আজব বিষয় নিয়ে।
আপনি কি তন্ত্র সাধনা, আধ্যাত্মিকতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে খুবই আগ্রহী? তা হলে আপনার জন্য প্রিয় ডেস্টিনেশন হতে পারে, অসম রাজ্যের মায়ং গ্রাম। কারণ এই গ্রামকে ভারতের তন্ত্র সাধনার গ্রাম বলা হয়। এই গ্রামের প্রতিটি মানুষের জীবিকা তন্ত্র সাধনা।
ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে অবস্থিত মায়াং গ্রামটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা। গ্রামটি পাহাড় ও নদীর মাঝে এক সুন্দর পরিবেশে অবস্থিত, যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
বর্তমান সভ্য যুগেও এখানকার মানুষ অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের দুনিয়ায় বাস করেন। দেশ বিদেশ থেকে বহু মানুষ তন্ত্রসাধনা দেখতে ও শিখতে এই গ্রামে পাড়ি দেন।
মায়ং গ্রামের বাসিন্দারা যুগের পর যুগ ধরে তন্ত্র-মন্ত্র, কালো জাদু, ঝাড়ফুঁক নিয়েই বেঁচে আছেন এবং এটিই তাঁদের জীবিকা হিসাবে মান্যতা পেয়েছে।
ভারতের অসম রাজ্যের মরিগাঁও জেলায় অবস্থিত এটি একটি ঐতিহাসিক এবং রহস্যময় স্থান, যা ‘ভারতের জাদুর রাজধানী’ নামেও পরিচিত।
মায়ং গ্রামটি আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার জন্যও সুপরিচিত। প্রাচীন কালে এটি ছিল তন্ত্র সাধনা এবং জাদুবিদ্যার এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এখানে বহু তান্ত্রিক গুরু এবং সাধক তাঁদের ক্ষমতা প্রদর্শন করতেন বলে বিভিন্ন মত প্রচলিত আছে।
মায়ং সম্পর্কে বহু লোককাহিনি প্রচলিত আছে, এখানে তান্ত্রিকরা জাদুবিদ্যার মাধ্যমে মানুষকে প্রাণীতে পরিণত করতে পারত, অদৃশ্য করতে পারত, বা মানসিক ও শারীরিক ভাবে নিয়ন্ত্রণও করতে পারত।
প্রাচীন কামরূপ রাজ্যের অংশ হওয়ার কারণে, মায়ং ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা নিয়ে রয়েছে। কামরূপ রাজ্যে তন্ত্র-সাধনার চর্চা বহু আগে থেকেই প্রচলিত ছিল এবং পরে মায়ং সেই ঐতিহ্যের ধারক-বাহক রূপে পরিচিতি পায়।
এখানে বহু ভ্রমণার্থীর কথা ভেবে একটি মিউজিয়াম তৈরি করা হয়েছে। যেখানে কালো জাদু, তন্ত্র সাধনা এবং প্রাচীন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার বিভিন্ন জিনিস সংরক্ষণ করে রাখা আছে। এখানে তন্ত্র-মন্ত্রের প্রাচীন পুঁথি, যন্ত্র, এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক নিদর্শন দেখা যায়।
এখন মায়ং একটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত, যেখানে কালো জাদু ও তন্ত্র-মন্ত্রের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য দেখতে প্রচুর পর্যটক আসেন। তবে, আজকাল এখানে কালো জাদুর চর্চা প্রায় বিলুপ্তির পথে।