প্রতীকী চিত্র
বাঙালির চিরকালই পায়ের তলায় সর্ষে! দু’দিন বাড়তি ছুটি পেলেই মন পালাই পালাই! যাঁরা পুজোয় কলকাতার ভিড়ভাট্টা পছন্দ করেন না, পুজোর ঢের আগে থেকেই এই ছুটিতে বেশ বড় বেড়ানোর প্ল্যান করেন তাঁদের অনেকেই। কেউ কেউ আবার পুজোর হুল্লোড়ও চান, বেড়াতেও যেতে চান। এ দিকে, অতিরিক্ত ভিড় না-পসন্দ! চিন্তা কী? পুজোর চারটে দিন কাটিয়ে হাতে আর দু-তিন দিনের ছুটি থাকলেই কলকাতা থেকে কাছের এই সমুদ্রসৈকতগুলি থেকে ঘুরে আসতে পারেন।
কলকাতার আশপাশেই রয়েছে একগুচ্ছ সমুদ্রসৈকত। এই জায়গাগুলোয় যেমন গাদাগাদি ভীড় নেই , তেমন কাঁড়ি টাকা খরচের ব্যাপারও নেই। পুজোর কেনাকাটা, ঘোরাঘুরির পরে পকেটে একটু টান তো পড়েই। সেই সময়ে বেড়াতে যেতে হলে এই জায়গাগুলো সব দিক থেকেই আদর্শ। বাড়ির কাছে, সাদামাটা জায়গা ভাববেন না তাই বলে! সমুদ্র, ম্যানগ্রোভ বনভূমি, নদী দ্বীপ, মৎস্যবন্দর, অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের সু্যোগ– এমন নানা বিশেষত্ব রয়েছে তাদের ভাঁড়ারে।
হেনরি দ্বীপ, দঃ ২৪ পরগনা: এই সমুদ্রসৈকতটি কলকাতা থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে। হেনরি দ্বীপ যেতে বকখালি থেকে লঞ্চে জেলিঘাট স্টপেজে নামতে হবে। বকখালি আগে ঘোরা না থাকলে এই সুযোগে সেখানেও ঘুরে নিতে পারেন। হেনরি আইল্যান্ডে সমুদ্রসৈকত আর নদীর সৌন্দর্য– দুয়ের এক অপূর্ব মেলবন্ধন। আর রয়েছে চোখ জুড়োনো সবুজ। এই দ্বীপ থেকে সূর্যাস্ত আর পাখিদের আনাগোনা ভালই লাগবে। এ ছাড়া, ওয়াচ টাওয়ার থেকে গোটা দ্বীপের একটা প্যানোরামিক ভিউ উপরি পাওনা।
তালসারি, ওড়িশা: ওড়িশার বালেশ্বর জেলায় এই সাগরতট। কলকাতা থেকে ১৯১ কিমি দূরে। দীঘা আর তালসারির মধ্যে দূরত্ব মাত্র ১০ কিমি। দীঘা পৌঁছে চন্দনেশ্বর মন্দিরের পাশ দিয়ে গাড়িতে চলে যান তালসারি। সমুদ্রের পাশাপাশি ধানক্ষেত, তাল-কাজু-নারকেল গাছের সারি, নদী, পাহাড়ে ঘেরা এই জায়গা আপনার মন কাড়বেই।
শঙ্করপুর, পূর্ব মেদিনীপুর: কলকাতা থেকে ১৭৬ কিমি দূরে এই সমুদ্রসৈকত। দীঘা থেকে দূরত্ব মাত্র ১৫ কিমি। যাঁরা সামুদ্রিক মাছ ভালবাসেন, শঙ্করপুর তাঁদের কাছে স্বর্গের চেয়ে কম নয়। এক দিকে ঝাউ- ইউক্যালিপটাস-কেয়া গাছে ঘেরা শান্ত, নিরিবিলি বিস্তীর্ণ সাগরতট। অন্য দিকে শঙ্করপুর ঢোকার মুখে ডান দিকে গেলে জমজমাট মৎস্যবন্দর। ঘোরার সঙ্গে কব্জি ডুবিয়ে সামুদ্রিক মাছের পদের আকর্ষণ এড়ানো কঠিন।
বাঁকিপুট, পূর্ব মেদিনীপুর: বাঁকিপুটের দূরত্ব কলকাতা থেকে ১৬৩ কিমি। কাঁথি থেকে মাত্র ১৬ কিমি দূরের এই সাগরতট ‘ভার্জিন বিচ’ নামে পরিচিত। কারণ, এখানে পর্যটকদের আনাগোনা খুবই কম। প্রকৃত অর্থেই একটি নিরিবিলি ‘অফবিট’ সমুদ্রসৈকত। বালির চরে দেখা মিলবে সারি সারি লাল কাঁকড়ার। অবশ্যই দেখতে হবে দরিয়াপুরের ৯৬ ফুট উঁচু বাতিঘর। উপর থেকে আপনার চোখে ধরা দেবে বাঁকিপুটের মোহনীয় রূপ। এখানকার বিশেষ একটি আকর্ষণ হল কপালকুণ্ডলা মন্দির। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস ‘কপালকুণ্ডলা’র প্রেরণা তিনি এখান থেকেই পেয়েছিলেন বলে জানা যায়।
চন্দ্রভাগা, ওড়িশা: কলকাতা থেকে চন্দ্রভাগার দূরত্ব ৪৯৯ কিমি। পুরী থেকে ৩ কিমি দূরে এই সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও কোলাহলমুক্ত পরিবেশ পর্যটকদের টানে। এটি ভারতের একমাত্র সমুদ্রসৈকত, যা বিশ্ব পরিবেশ দিবসে ‘ব্লু ফ্ল্যাগ সার্টিফিকেশন’ পেয়েছে। এখানেই রয়েছে কোণারক মন্দির। বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে গেলে বা একা বেড়াতে গেলে উটে চড়া, বোটে চড়া বা জলের অন্যান্য অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের মজা উপভোগ করতেই পারেন।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।