এমআই-১০-এ রয়েছে কোয়ালকমের স্ন্যাপড্রাগন-৮৬৫ প্রসেসর। ছবি সৌজন্য: সোশ্যাল মিডিয়া।
প্রযুক্তির বাজারে কে এগিয়ে তা বুঝতে অনেক সময়ে নানা সংস্থার ফ্ল্যাগশিপ পণ্যের মধ্যে তুলনা করা হয়। তাই ফ্ল্যাগশিপ পণ্যটি যাতে বাজার সেরা হয় সে দিকে সংস্থাগুলি নজর রাখে। শাওমি, অর্থাৎ ‘এমআই’-ও ব্যতিক্রম নয়। ‘এমআই’-এর নতুন ফ্ল্যাগশিপ ফোন ‘এমআই-১০’। এটি এই সংস্থার আনা প্রথম ‘ফাইভ-জি’ ফোন।
ভারতের স্মার্টফোনের বাজারের বড় অংশ ‘এমআই’-এর দখলে। এর বড় কারণ, ‘এমআই’-এর তৈরি জিনিসপত্রের দাম। মধ্যবিত্তের সাধ্যের মধ্যে ভাল মানের স্মার্টফোন তৈরিতে ‘এমআই’-এর সুনাম রয়েছে। চিনের সংস্থা হলেও ‘এমআই’ অধিকাংশ ফোনই ভারতে তৈরি হয় বলে দাবি সংস্থাটির। ‘এমআই-১০’-এর দাম অবশ্য মধ্যবিত্তের সাধ্যের কিছুটা উপরের দিকেই। তবে খরচ করলে ঠকতে হবে না বলে দাবি সংস্থাটির। প্রসেসর, র্যাম, ক্যামেরা, ব্যাটারি, ডিসপ্লে আর আকার— একটি ফোন কেমন তা বুঝতে গেলে প্রধানত এই পাঁচটি বিষয়ের দিকে নজর দিতে হয়।
ফোনটির সামনে পিছনে কার্ভড গ্লাসে ঢাকা। ফোনটির ওজন প্রায় ২০৮ গ্রাম। একটু ভারীর দিকেই। তবে হাতে নিলে তেমন ভারী মনে হবে না। কারণ, ফোনটি বেশ সরু। ফোনটি প্রায় ৯ মিলিমিটারের মতো পুরু। ফোনের দু’টি বাটন— পাওয়ার বাটন ও সাউন্ড বাটন, ঠিকমতো হাতের নাগালে পাওয়া যায়। এই ফোনে কোনও হেডফোন জ্যাক নেই। তবে সংস্থাটি ফোনের সঙ্গে একটি অ্যাডাপ্টরও দিচ্ছে। ফোনটির ডুয়াল সিমের ট্রে-টি দেওয়া আছে। পাশেই আছে টাইপ-সি পোর্ট আর স্পিকার। একই ক্ষমতার আরও একটি স্পিকার ফোনটির উপরের দিকে রয়েছে। সংস্থার মত, ফোনের শব্দে ‘স্টিরিয়ো এফেক্ট’-এ ভারসাম্য আনার জন্য এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন : নিজের সমস্যা নিজেই বলবে ‘স্মার্ট ডায়াগনসিস’এই ফ্রিজ, দামও সাধ্যের মধ্যেই
শুরু করা যাক প্রসেসর দিয়ে। এমআই-১০-এ রয়েছে কোয়ালকমের স্ন্যাপড্রাগন-৮৬৫ প্রসেসর। এটি এই মুহূর্তে বাজারের অন্যতম সেরা প্রসেসর। সঙ্গে আছে অ্যাড্রেনো-৬৫০ জিপিইউ। আর রয়েছে ৮ জিবি র্যাম। এই র্যামটি এলপিডিডিআর-৫ শ্রেণির। এই ফোনের স্টোরেজ ১২৮ জিবি ও ২৫৬ জিবি। এখানে ওয়াইফাই-৬ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। ফোনটি ‘ফাইভ-জি’ প্রযুক্তিও ব্যবহার করতে পারবে।
সংস্থার দাবি, এই ফোনে গেম খেলা সহজ হবে। গেম খেলার সময়ে ফোন গরম হয়ে যাওয়ার সমস্যা হয়। ফোন গরম হলে প্রসেসর-সহ ফোনের কার্যক্ষমতা কমে যায়। ‘এমআই’-এর দাবি, তারা এ ক্ষেত্রে বিশেষ প্রযুক্তির ব্যবহার করেছে যাতে ফোন গরম হয়ে না যায়।
আরও পড়ুন : গ্রিল-বেকিং সহজে, বিদ্যুৎ খরচ সামান্য, কোন মাইক্রোওভেনে কী কী সুবিধা
‘এমআই-১০’-এর ডিসপ্লে-তে থাকবে অন স্ক্রিন ফিঙ্গার-প্রিন্ট সেন্সর। ছবি: টুইটার।
এই ফোনটির ৬.৬৭ ইঞ্চির ফুল এইচডি প্লাস ডিসপ্লে (১০৮০X২৩৪০)। এর সর্বোচ্চ ব্রাইটনেস ১,১২০ এনআইটিএস। এর আমোলেড স্ক্রিনের রিফ্রেশিং রেট ৯০ গিগাহাৎর্জ। কাছাকাছি দামের অন্য ফোনের থেকে রিফ্রেশিং রেট কম হলেও ভালই কাজ চলে যায়। এখানে ফিঙ্গার-প্রিন্ট সেন্সরটি আলাদা ভাবে দেওয়া নেই। ডিসপ্লে-তেই অন স্ক্রিন ফিঙ্গার-প্রিন্ট সেন্সর দেওয়া আছে।
অনেকেই ফোনের ক্যামেরাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। এই ফোনের অন্যতম আকর্ষণ হল ক্যামেরা। এই ফোনের পিছনে চারটি ক্যামেরা রয়েছে। মূল ক্যামেরাটি ১০৮ মেগাপিক্সেলের। এর অ্যাপারচার এফ/১.৭। অন্য একটি ক্যামেরা ১৩ মেগাপিক্সেলের। এই ক্যামেরা আল্ট্রা ওয়াইড অ্যাঙ্গেলের। এর অ্যাপারচার এফ/২.৪। অন্য একটি ক্যামেরা ২ মেগাপিক্সেলের। এটি ম্যাক্রো লেন্সের। এর অ্যাপারচার-ও এফ/২.৪। চতুর্থ ক্যামেরাটি ২ মেগাপিক্সেলের ডেপ্থ সেন্সর যুক্ত এবং এর অ্যাপারচার-ও এফ/২.৪। পিছনের ক্যামেরা দিয়ে ৮-কে রেজলিউশনের ভিডিয়ো রেকর্ড করা সম্ভব। এখানে অপটিক্যাল ইমেজ স্টেবিলাইজেশনের সুবিধাও আছে। সামনের ক্যামেরাটি ২০ মেগাপিক্সেলের। এর অ্যাপারচার এফ/২। এটি ১০-এক্স জুম করতে পারে। আর ১০৮ মেগাপিক্সেলে ২-এক্স পর্যন্ত জুম করা সম্ভব এই ক্যামেরায়। এই ক্যামেরাটি ফোনের উপরে বাঁ দিকের কোণায় স্ক্রিনের মধ্যে রয়েছে। অনেকের মনে হতে পারে, এতে ডিসপ্লে-তে সমস্যা হবে। কিন্তু ভিডিয়ো চালিয়ে দেখা গিয়েছে, সাধারণত ওই ক্যামেরার জায়গাটি সমস্যা করছে না।
আরও পড়ুন : ইন্টারনেটের ফাইভ-জি খুলে দেবে নতুন দুনিয়া
এ বার আসা যাক ব্যাটারির কথায়। এমআই-১০ ফোনে ৪৭৮০ মিলি-অ্যাম্পিয়ারের ব্যাটারি রয়েছে। ব্যাটারিতে কত ক্ষণ চার্জ থাকবে তা ফোন কেমন ভাবে ব্যবহার হচ্ছে তার উপরে নির্ভর করে। এক বার চার্জ দিলে মোটামুটি এক দিন চলে যায়। এতে ‘কোয়ালকমে ফাস্ট চার্জিং ৩.০’-এর সুবিধা আছে। রয়েছে ফাস্ট ওয়্যারলেস চার্জিং-এর সুবিধা। এর দাম ৫০ হাজার টাকার কাছাকাছি।