জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমন
আমার ছেলেবেলা যেখানে কেটেছে, সেই গ্রামের সঙ্গে এখনকার গ্রামের কোনও মিল নেই। আমরা যারা বিংশ শতকের গোড়ার দিকে জন্মেছি, তখন সবে সবে মোবাইল দখল করেছে তথাকথিত ইন্টারনেট। ছোট পঞ্চাশ পয়সায় তখন দোকানে লজেন্সও পাওয়া যেত। আর যখন, পুজো পুজো গন্ধ আসতো বাবা সারা বছরের সঞ্চয় যে ভাঁড়ে জমিয়েছেন, তা ভাঙা হতো। রাত করে গোনা হত, সেই সব কয়েন। কখনও, এই আমাদের গ্রামে আলো নিভে গেলে, টর্চ আর হ্যারিকেনের আলোয় একেকটা কয়েন চকচক করে উঠতো। বাবা ওই রাতেই বলে রাখতো, কাল যাব পুজোর বাজারে। রাতে ঠিকমতো ঘুম হত না, আমার আর দাদার। ঘুম আসলেও, স্বপ্নে ঠিক করতাম, অষ্টমী তে এইটা পরবো। পরের দিন পরিকল্পনা মত, পৌঁছে যেতাম গন্তব্যে। দাদার আর আমার পাঞ্জাবি কেনার পর, কেনা হত বাড়ির জানালার পর্দা আর স্বাগত লেখা পাপশ। দেখতে দেখতে বিশ্বকর্মা পুজো পেড়িয়ে, মহালয়া আসতো। বাবা ভোর ভোর বেড়িয়ে পড়তেন, গঙ্গার উদ্দেশ্যে। কোমর জলে নেমে, "জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী"-বলে গঙ্গার জলেই গঙ্গা জল দিয়ে তর্পণ করতেন। কিন্তু, তার এক সপ্তাহ আগে থেকে আমাদের শহরতলির প্রতিটা রেডিও কর্ণারে ভিড় লেগে থাকতো, শুধু ওই ভোরের উদ্দাম কন্ঠে শোনার জন্য- "অশ্বিনের শারদ প্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জীর, ধরণীর বহিরাকাশি অন্তর্হিত মেঘমালা; প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমন-বার্তা, আনন্দময়ী মহা মায়ার পদধ্বনি; অসীম চাঁদে বেজে উঠে রূপ-লোক ও রস-লোক এ আনে নব ভাবমাধুরী সঞ্জীবন, তাই আনন্দিত শ্যামলী মাতৃকার চিন্ময়ী কে মৃন্ময়ী তে আবাহন. আজ চিৎশক্তিরূপিণী বিশ্বজননীর শারদ-শ্রীবিমণ্ডিত প্রতিমা; মন্দিরে মন্দিরে ধ্যান বোধিতা...."
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।