বাংলার বুকে ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন কালীক্ষেত্রগুলির মধ্যে অন্যতম কোন্নগরের দেবী শকুনতলা কালী। ভক্তদের বিশ্বাস, তিনি কোন্নগরকে রক্ষা করেন নিজের হাতে। গত ১৩০ বছর ধরে এখানে পূজিত হয়ে আসছেন এই মা কালী।
কথিত, যে জায়গায় এখন এই কালীপুজো হয়, বহু বছর আগে তা জল-জঙ্গলে ভর্তি ছিল এবং সেখানেই একটি বড় গাছে ছিল শকুনের বাসা। মনে করা হয়, সেই থেকেই এই কালীর নামকরণ করা হয় শকুনতলা।
স্থানীয় লোকেরা বিশ্বাস করেন, দেবী শকুনতলা কালী অত্যন্ত জাগ্রত। তিনি ভক্তদের কখনওই খালি হাতে ফেরান না। তাই কোন্নগরের সীমা ছাড়িয়ে দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা ছুটে যান এই মন্দিরে পুজো দিতে।
শোনা যায়, বহু যুগ আগে স্থানীয় চক্রবর্তী পরিবারের হাতেই এই পুজোর সূচনা হয়। সেই পরিবারের তিন বংশধর পুজো করে ফেরার পথে এক রাতে দেখতে পান সাদা কাপড় পরে খোলা চুলে কোন এক মেয়ে রাতের অন্ধকারে হেঁটে যাচ্ছেন।
তাঁকে অনুসরণ করে কিছুটা এগোলে সুন্দরী সেই মেয়ে এক অশ্বত্থ গাছের নীচে এসে বিলীন হয়ে গেলেন।
সেই রাতেই দেবী স্বপ্নাদেশ দেন, ওই অশ্বত্থ গাছ, যেখানে শকুনের বাসা রয়েছে, তার তলায় দেবীর ঘট স্থাপন করে পুজো করতে হবে। পরবর্তীতে সেখানেই মন্দির স্থাপন করে পূজার্চনা শুরু হয়।
শকুনতলা দেবীকে এখানে দেবী রক্ষাকালী হিসাবে পুজো করা হয়। মন্দিরের গর্ভগৃহের ভিতরে একটি শ্বেত পাথরের বেদীর উপরে প্রতিষ্ঠিত মা কালী। এখানকার পুজোর কিছু বিশেষত্ব আছে।
পুজোর দিন সন্ধ্যার মধ্যে প্রতিমা গড়া শেষ করে পুজো শুরু হয়। রাতভর চলে পুজো। আবার সূর্যোদয়ের আগেই প্রতিমার বিসর্জনও দিয়ে দেওয়া হয়।
প্রতি বছর বৈশাখ মাসে শুক্লা চতুর্থীতে এই দেবীর পুজো হয়। তবে কালীপুজোর দিনেও হয় বিশেষ পুজো।
প্রতিবছর বাৎসরিক পুজোর সময়ে সন্ধ্যা ৬টা ৩০ থেকে ৭টা ৩০-এর মধ্যেই দেবীকে মন্দির প্রাঙ্গণে কাঁধে করে নিয়ে যান স্থানীয় মানুষেরা।
এলাকাবাসীর বিশ্বাস, দেবীর কাছে কেউ যদি খোলা মনে কোনও প্রার্থনা করেন, দেবী তা পূর্ণ করবেন।