ছবি: সংগৃহীত
একটা সময়ে এই এলাকা ঘন জঙ্গলে ঘেরা ছিল, তার মধ্যে ছিল এই মন্দির। ডাকাত দল ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে নাকি এখানে পুজো দিয়ে যেত। প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো এই কালীপুজোকে কেন্দ্র করে হাড় হিম করা রহস্যে ঘেরা একাধিক কাহিনি লুকিয়ে রয়েছে।
লোক মুখে শোনা যায়, এক সময়ে ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে ডাকাতরা গভীর জঙ্গলের মধ্যে এই দক্ষিণা কালীর মন্দিরের সামনে এসে নরবলি দিত। কেউ কেউ বলেন, এক সময়কার প্রবল প্রতাপশালী রঘু ডাকাত এই কালীমন্দিরে এসে সাধনা করে গিয়েছেন।
হুগলি জেলার পাণ্ডুয়ার সিমলাগড় দক্ষিণা কালীমন্দির ঘিরে এলাকায় নানা জনশ্রুতি রয়েছে। এলাকার প্রবীণরা জানিয়েছেন, লক্ষণ ভট্টাচার্যের পরিবারের আদি পুরুষের আমল থেকেই এই কালীর মন্দিরে পুজো শুরু হয়েছিল। এই মন্দিরে দেবী কালিকা পূজিতা হন দক্ষিণা কালী রূপে। আগে এই এলাকার নাম ছিল হরিহরপুর। পরে সিমলাগড় কালীর নামে এলাকার নাম হয়েছে সিমলাগড়। এখানকার কালীমাতা শ্মশানে কালী, ডাকাত কালী নামেও পরিচিত।
একটা সময় এই গোটা এলাকা গভীর জঙ্গলে ভরা ছিল। ডাকাত দল দাপিয়ে বেড়াত গোটা এলাকায়। এখানকার স্থানীয়দের কেউ কেউ বলেন, শেরশাহ জিটি রোড তৈরির আগে থেকে এখানকার কালীপুজো শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সাধারণ গৃহস্থের পুজো শুরু হয়নি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পর্যন্ত।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে সেনাবাহিনীর চলাচলের জন্য এই রাস্তার গুরুত্ব বাড়তে থাকে। সেই সময় থেকে স্থানীয় মানুষজনও নিজেদের ভয় কাটিয়ে মন্দিরে পুজো দেওয়া শুরু করেন। দক্ষিণা কালীর মন্দিরের ওপর মানুষের বিশ্বাস প্রবল ভাবে বাড়তে শুরু করে।
এলাকায় জনশ্রুতি আছে, ভট্টাচার্য পরিবারেরই সদস্য নটবর ভট্টাচার্য মা কালীর পুজো করতে গিয়ে মন্দিরের সামনে নর-মুণ্ড পড়ে থাকতে দেখেছিলেন। পুজো না দিয়েই তিনি সেদিন ফিরে গিয়েছিলেন। এর পরে দিন চারেক পুজো বন্ধ ছিল। কথিত আছে, মা কালী স্বয়ং এই নটোবরের স্বপ্নে এসেছিলেন।
নটবর কালী মায়ের কাছে মন্দিরে নরবলি বন্ধের আর্তি জানিয়েছিলেন। এলাকাবাসীদের বিশ্বাস, এর পর থেকে স্বয়ং দেবীর ইচ্ছাতেই এই মন্দিরে নরবলি দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এখন এই মন্দিরে ছাগ বলির প্রথা চালু রয়েছে। কালীপুজোর দিনগুলিতে সিমলাগড়ের এই দক্ষিণা কালীর মন্দিরে দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা এসে ভিড় জমান।
কী ভাবে যাবেন সিমলাগড় দক্ষিণা কালীর মন্দিরে?
বর্ধমান-হাওড়া মেইন লাইনের লোকাল ট্রেনে গেলে সিমলাগড় স্টেশনে নামতে হবে। এখান থেকে হেঁটে যাওয়া যেতে মিনিট ১০-১৫ সময় লাগবে। অথবা সিমলাগড় স্টেশনে নেমে টোটো ভাড়া করে নিতে পারেন, মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই গন্তব্যে পৌঁছে যাবেন। সড়ক পথে গেলে পাণ্ডুয়ার পরেই জিটি রোডের ধারে মন্দিরটি পড়বে। বর্ধমানের দিক থেকে গেলে রাস্তার ডান দিকে পড়বে এই মন্দির।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।