প্রস্তুতি চলছে
‘ফুলের বরণ গৌরী আসে
আশার জুড়িগাড়িতে,
আইলো আমার প্রাণ লো আবার
আইলো উমা বাড়িতে’
সময়ের প্রলেপে মেয়েরা একসময় স্বাবলম্বী হয়ে যায়। তারপর বিবাহ সূত্রে এক দিন পাড়ি দেয় শ্বশুরালয়ে। ফেলে আসে পিতৃগৃহের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, বাবার আদর, মায়ের যত্ন, ভাই-বোনের খুনসুটি, নিজের বাড়ির আরাম, আনন্দ মুহূর্তগুলো। বাবার বাড়িতে ফেরা যেন বারবার উসকে দেয় ছোটবেলার সেই সব স্মৃতি। আর স্মৃতি সততই সুখের। মেয়েবেলার এ এক অন্যরকম অনুভূতি। ঠিক যেমনটা হয় উমার ক্ষেত্রেও।
আকাশে-বাতাসে খুশির হিল্লোল জানান দেয়, ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরছে। মা দুর্গার পিতৃগৃহে আগমনের পালা সমাগত। নতজানু হয়ে ডাক পাঠায় কাশফুল। বছরের এই একটি সময়ে লক্ষ্মী, গণেশ, সরস্বতী আর কার্তিককে নিয়ে উমা আসেন বাবার বাড়ি। তার পর চার-চারটে দিন আনন্দে-আহ্লাদে ভাসা।
সেটাই এ বছর কালীঘাট শ্রী সঙ্ঘের দুর্গাপুজোর থিম। পার্বতীর মহামায়া রূপী মা দুর্গা হয়ে পিতৃগৃহে আগমন। মণ্ডপ সেজে উঠছে দুর্গার ছোটবেলার টুকরো স্মৃতির কোলাজে, যেখানে ছড়িয়েছিটিয়ে আছে আবেগ, আছে সুখ-দুঃখের আদরমাখা মুহূর্ত।
সমগ্র কল্পনার রূপায়ণে শিল্পী চন্দন পাল। আনন্দবাজার অনলাইনকে শিল্পী বলেন, “হিন্দু শাস্ত্রের রীতি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের পরে মেয়েদের বিবাহসূত্রে পতিগৃহে যেতে হয়। এক দিকে বাবার বাড়ির দীর্ঘদিনের শিকড় ছিঁড়ে তাকে যেতে হয় সম্পূর্ণ একটা অন্য পরিবেশে, অন্য দিকে তাকে আবার বাড়িতে নিজেদের কাছে একটুখানি ফিরে পেতে মা-বাবার আকুতি। সেই আবেগ, সেই অপেক্ষাই থিম হয়ে ফুটে উঠছে আমাদের মণ্ডপে। বাস্তবেও বহু মেয়ে কাজের ব্যস্ততা বা দূরত্বের জন্য অনেক সময়েই নিজের বাড়িতে যেতে পারে না। সেই মেয়েদের প্রতিভূ হয়েই যেন মর্ত্যে আসছেন মা দুর্গা।’’
একটি মেয়ের ছোট থেকে বড় হওয়ার সফরে যা যা থাকে– তার ছোটবেলার ঘর, বড়বেলার ঘর, পুতুল, খেলনা, জামাকাপড়, হারমোনিয়ামের মতো নানা স্মৃতিমেদুর জিনিসে সাজানো হয়েছে এই পুজো। কালীঘাট থানার ঠিক পাশের রাস্তায় গুরুপদ হালদার রোডে এই মণ্ডপ।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।