চলতি বছর শতবর্ষে পড়ল নৈহাটির বড়মার বিখ্যাত কালীপুজো। ফেলে আসা সময়টা জুড়ে বড়মা-র পুজো ঘিরে রয়েছে নানা কাহিনি।
কথিত, একশো বছর আগে নৈহাটির বাসিন্দা ভবতোষ চক্রবর্তীরা পাঁচ বন্ধু মিলে রাশ উৎসবে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে রাশের উৎসবে বিশাল বড় সব প্রতিমা দেখে হতচকিত হয়ে যান তাঁরা। এর পর বাড়ি ফিরে ঠিক করেন একই রকম বড় প্রতিমার কালীপুজো করবেন। আর সেই থেকেই শুরু বড়মার পুজো।
সময়ের সঙ্গে বড়মার ভক্ত সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক। পুজোর দিন একশো কেজির সোনার গয়না পরানো হয় বড়মাকে। সঙ্গে থাকে কড়া নিরাপত্তা। বড়মার প্রতিমার উচ্চতা হয় ২১ ফুট।
বড়মার পুজো শুরু না হলে নৈহাটির কোনও পুজো শুরু হয় না। আবার বড়মার পুজোয় বিসর্জন না হলে নৈহাটির কোনও ঠাকুর বিসর্জন হয় না। এই প্রথাই চলে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে।
নৈহাটি এলাকায় একটি বাক্য সব ভক্তর মুখে মুখে ঘোরে, ‘‘কথায় আছে ধর্ম যার যার, বড় মা সবার।’’ নিয়মমাফিক প্রতি বছর কালীপুজোতে বাইশ হাত প্রতিমা দিয়ে বড়মা পূজিত হন। রবিবার বড়মার নবনির্মিত মন্দিরের দ্বার উদ্বোধন করা হল। ভবিষ্যতে এখানে ভক্তসমাগম বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদী উদ্যোক্তারা।
একশো ভরি সোনার গয়নায় মুড়ে কালীপুজোর আগেই প্রাণ প্রতিষ্ঠা হল বড়মার। কিছু দিন আগেই রাজস্থান থেকে আনা কষ্টি পাথর দিয়ে সাড়ে চার ফুট উচ্চতার বড়মার মূর্তি বসানো হয়ে গিয়েছে নতুন মন্দিরে।
হয়েছে মূর্তি প্রতিষ্ঠার জন্য শুদ্ধিকরণ। পাশাপাশি গীতাপাঠ, মহা মৃত্যুঞ্জয় পাঠ ও হোমযজ্ঞ তো বটেই।
গোটা প্রক্রিয়াটি বেনারস থেকে আসা তিন জন পুরোহিত এবং হালিশহরে রামপ্রসাদের ভিটে থেকে তিনজন ও বড়মার মন্দিরের চার জন পুরোহিত মিলিত ভাবে সম্পন্ন করেছেন বলে জানালেন মন্দির কমিটি।
মায়ের প্রাণ প্রতিষ্ঠার পাশপাশি চক্ষুদানও হয়। মন্দির কমিটির পরিকল্পনায় রয়েছে যে, মায়ের মূর্তির সামনে একটি অখণ্ড জ্যোতি বসানো হবে, যা এক টানা বারো বছর জ্বলবে।
বড়মা প্রতিমাকে মন্দিরে একশো ভরির গয়নায় সাজানো হয়েছে, ৩৬৫ দিনই এমন বেশে দেখা যাবে মা’কে। যদিও সর্বসাধারণের জন্য বড়মার দর্শন উন্মুক্ত করা হয়েছে গত মাসের ২৯ তারিখে।
দীর্ঘ সময় ধরে যে ভাবে বড়মার মূর্তি দেখে আসছেন ভক্তরা, ঠিক তেমনই হুবহু রূপ দেওয়া হয়েছে কষ্টিপাথরের এই নতুন মূর্তির। এ বছরই পালিত হচ্ছে নৈহাটির জাগ্রত বড়মার মন্দিরের একশো বছর পূর্তি অনুষ্ঠান।
শোনা যায়, জেলা ও রাজ্যের পাশাপাশি দেশ ও বিদেশেও বহু ভক্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বড়মার। জাগ্রত বড়মার কাছে কিছু চাইলে কাউকেই খালি হাতে ফেরান না তিনি, এমনই বিশ্বাস করেন তাঁর অগণিত ভক্তরা।
তাই কালীপুজো ছাড়াও সারা বছরই বড়মার মন্দিরে ভিড় লেগে থাকে ভক্তদের। কষ্টি পাথরের স্থায়ী বড়মার মূর্তি মন্দিরের স্থাপন হতেই, খুশি নৈহাটি মানুষজন সমেত বড়মার সকল ভক্ত।