বাংলায় ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য শিবমন্দির, যা গুনে শেষ করা বেশ কঠিন কাজ!
সব শিবমন্দির যে সে ভাবে ভক্তদের ভিড় টানে, এমনটা নয়। তবে কয়েকটি মন্দির রয়েছে, যেখানে মহাদেবের দর্শন পেতে বিশেষ দিনগুলিতে বিপুল জনসমাগম হয়।
এ রকমই এক মন্দির হল দক্ষিণেশ্বরের বুড়োশিব মন্দির। উত্তর ২৪ পরগনার আড়িয়াদহে এই মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে বহু অলৌকিক কাহিনি।
দক্ষিণেশ্বরের পাশে আড়িয়াদহে গঙ্গার তীরেই রয়েছে এই প্রাচীন মন্দির। বলা হয়, এটি নাকি প্রায় ২০০০ বছরেরও বেশি পুরনো।
জনশ্রুতি বলে, শ্রী রামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ-সহ অনেক সন্ন্যাসীই এই মন্দিরে এসেছিলেন।
কথিত, রাজা হুসেন শাহের আমলে এক শিবভক্ত ব্রাহ্মণ ছিলেন। তিনি এক দিন স্বপ্নে নির্দেশ পান, মহাদেব বহু দিন জঙ্গলের মধ্যে পড়ে রয়েছেন, এ বার যেন তাঁর সেবার ব্যবস্থা করা হয়।
পরদিন সেই ব্রাহ্মণ সত্যিই এই শিবমূর্তি খুঁজে পান। স্বপ্নাদেশের কথা স্থানীয়দের বলায় সবাই মিলেই এই মন্দির গড়ে তুলে মহাদেবকে প্রতিষ্ঠা করা হয় সেখানে।
এই বুড়োশিবকে নিয়ে আরও একটি অলৌকিক কাহিনি প্রচলিত রয়েছে। বলা হয়, মহাদেবের আদি ও অন্ত খুঁজে পাওয়া যায় না। ব্রহ্মা ও বিষ্ণুও খুঁজে পাননি।
ব্রিটিশ ভারতের বড়লাট ওয়ারেন হেস্টিংস নাকি ছিলেন ঘোর হিন্দুবিদ্বেষী। শোনা যায়, বুড়োশিবের অলৌকিক কাহিনি শুনে তিনি নিজেই সেখানে চলে গিয়েছিলেন ভক্তদের বিশ্বাস ভাঙাতে।
হেস্টিংস তাঁর কর্মীদের তিনি নির্দেশ দেন পাথরের মূর্তিটি তুলে গঙ্গায় ফেলে দিতে। জনশ্রুতি বলে, এই মূর্তিটি যতই খোঁড়া হয়, তার তল পাওয়া যায়নি কিছুতেই।
অনেক খোঁড়াখুঁড়ির পরেও শিব মূর্তি উচ্ছেদ করতে ব্যর্থ হন বড়লাটের কর্মীরা। বুড়োশিবের এই অলৌকিক ক্ষমতা দেখে হতাশ হয়ে ফিরে যান তিনি।
শিবরাত্রি এবং পুরো শ্রাবণ মাস জুড়ে প্রচুর ভক্তের সমাগম হয় এই মন্দিরে। মানুষের বিশ্বাস, মহাদেব সকলের মনস্কামনা পূর্ণ করেন। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।