রাত পোহালেই কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো। ঘরে ঘরে শুরু হবে দেবী চঞ্চলার আরাধনা। আশ্বিনের এই সময়েই একই চালায় লক্ষ্মী আর সরস্বতীর পুজো হয়ে আসছে বিনপুর -২ ব্লকের হাড়দা গ্রামে। গত প্রায় একশো ষাট বছর ধরে এটাই রীতি সেখানে।
একই চালায় লক্ষ্মীর বাম দিকে থাকেন সরস্বতী। লক্ষ্মী ও সরস্বতীর দু’পাশে চার জন সখী থাকেন। লক্ষ্মী সরস্বতীর সঙ্গে থাকেন দু’জন সেবাদাসীও। তাঁদের উপরে থাকেন ‘লুক-লুকানি’। এ ছাড়াও লক্ষ্মী ও সরস্বতীর মাথার উপরে থাকেন নারায়ণ। বিষ্ণুপুরাণ মতেই এ ভাবে নারায়ণের দুই স্ত্রী লক্ষ্মী এবং সরস্বতীর পুজো করা হয় একই সঙ্গে, একচালায়। অন্নভোগের পাশাপাশি থাকে নাড়ু, লুচি ইত্যাদির ব্যবস্থাও।
এই গ্রামের আর এক বিশেষত্ব লক্ষ্মীপুজোয় বিশেষ রকমের জিলিপি তৈরি। জিলিপির উপকরণে থাকে চাল গুঁড়ো, বিউলি ডালের গুঁড়ো ও সামান্য ময়দা। জলের সঙ্গে সে সব মিশিয়ে তৈরি হয় এক বিশেষ মিশ্রণ, যাকে বলা হয় ‘খামি’। অন্য রকম পদ্ধতিতে তৈরি এই অতি সুস্বাদু জিলিপির জন্যে ভিড় জমান জেলার নানা প্রান্তের মানুষ।
করোনা পরবর্তী সময়ের বাধাবিপত্তি ও বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে গ্রামীণ জীবন সবে ফিরছে পুরনো ছন্দে। তাই ঐতিহ্য মেনে এ বারও বিখ্যাত জিলিপির টানে দলে দলে মানুষ আসবেন, এমনটাই আশা উদ্যোক্তা, হাড়দা গ্রামের 'মণ্ডল' পরিবারের।
প্রতি বছর লক্ষ্মী পুজোর সময়ে প্রায় আড়াইশো কুইন্টাল জিলিপি বিক্রি হয়। নিলামের মাধ্যমে মন্দির প্রাঙ্গণে মাত্র এক জনই বরাত পায় এই দোকান দেওয়ার। এই বছর সর্বোচ্চ ১ লক্ষ ৮১ হাজার টাকা দর হেঁকে জিলিপির দোকানের বরাত পেয়েছেন রাজেশ মণ্ডল।
টানা পাঁচ দিন ধরে চলা এই বিরাট কর্মকাণ্ডে পুজোর পাশাপাশি থাকে যাত্রাপালা-সহ বহু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যা আয়োজন করতে গড়া হয় কমিটি। মণ্ডল পরিবারগুলির মধ্যেই বারো-চোদ্দো জন অংশগ্রহণ করেন পুজো কমিটির মিটিংয়ে। সেখানেই অনুষ্ঠিত হয় এই নিলাম।
এই পুজোয় বাইরে থেকে কোনও চাঁদা তোলা হয় না। মণ্ডল পরিবারের পরিকল্পনা ও আর্থিক অবদানেই পুজো সম্পন্ন হয়ে থাকে। এই বছরও অন্য বারের মতোই লক্ষ্মী পুজো ঘিরে সাজ সাজ রব। চলতি বছরে এই পুজোর বাজেট নির্ধারিত হয়েছে ১২ লক্ষ টাকা।
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।