ঢাকার সেই বাড়ি আর নেই! ১২৪ বছরের কালীপুজোয় খিদিরপুরের সাহা পরিবার এগিয়ে নিয়ে চলছে এই ঐতিহ্যময় পুজো।
শুরুর গল্পে যাই।
তখনও দেশ ভাগের ভাবনা মাথায় আসেনি কোনও রাজনৈতিক দলের। সেই সময় স্বাধীনতাকামী বাঙালির চোখে রয়েছে কেবল মাত্র ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ। এমন এক অশান্ত সময়ে ব্যবসায়ী সাহা পরিবার ব্রতী হয়েছিল শ্যামাপুজোয়।
১৯০০ সালে ঢাকা শহর সংলগ্ন গ্রামের বাড়ি ধুমধামের সঙ্গে মা কালীরপুজো শুরু করেন স্বর্গীয় বাঁশিমোহন সাহা। তার পর সেই পুজো আর থেমে থাকেনি। এর পর বাংলাদেশেই বাঁশিমোহনের পুত্ররা পুজোর রীতি এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। কিন্তু পুজো শুরুর সাড়ে চার দশক পরেই দেখা দেয় দেশভাগের ভ্রুকুটি।
তত দিনে ব্যবসায়ী সাহা পরিবারের কলকাতার খিদিরপুরেও বসত বাড়ি স্থাপন করে ফেলেছে। দেশ ভাগের সঙ্গে সঙ্গেই বাঁশিমোহনের পুত্ররা একে একে কলকাতায় বসবাস শুরু করেছে পাকাপাকি ভাবে। সেই সুবাদেই ঢাকা থেকে মা কালীর পুজো চলে আসে খিদিরপুরের বাড়িতে।
এ বছর সাহা বাড়ির সেই পুজো ১২৪তম বর্ষে পদার্পণ করেছে। বর্তমানে দক্ষিণ কলকাতার খিদিরপুরের হরিসভা লেনের বাড়িতে বিরাট আয়োজন শ্যামা পুজো ঘিরে। বছরে এক বার মেয়ে বাড়িতে এসেছে, সেই ভাবনায় দেবী পুজিত হন এই বাড়িতে। শনিবার সন্ধ্যায় মা কালীর মূর্তি আনা হয়েছে বাড়িতে। তার পর বাড়ির বউ-মেয়েরা দেবীকে সাজাতে ব্যস্ত হন। পরিবারের তৈরি গহনা দিয়ে পুজোর দিনে সাজানো হয় মা কালীকে।
বর্তমানে পুজোর দায়িত্বে সাহা পরিবারের চতুর্থ প্রজন্ম। পরের পর প্রজন্ম পারিবারিক রীতি অনুযায়ী এগিয়ে নিয়ে চলছে দেবীর মা কালীর এই পুজোকে।
সাহা পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের সদস্য কালী সাহা বলেন, "শতবর্ষ পুরনো এই পুজো আমাদের পরিবারের কাছে একটি ঐতিহ্য। আমরা আমাদের অগ্রজদের থেকে যে রীতিনীতি শিখেছিলাম, তাই আমরা আমাদের আগামী প্রজন্মকে দিয়েছি। তারাও সাধ্য মতো সেই ঐতিহ্য এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন।"
এক দিনের পুজো হলেও, সারা বছর শ্যামা পুজোর দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকে সাহা পরিবার। কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পরিবার পরিজনেরাও এই সময়ে একত্রিত হন মা কালীর পুজো দেখতে।
কার্তিকের অমাবস্যায় সাহা পরিবার যেন হয়ে ওঠে একান্নবর্তী।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।