কলকাতার বনেদি বাড়ির পুজো মানেই জাঁকজমক। আর সেই পুজোকে ঘিরে নানা রকম গল্প। এই বনেদি বাড়িগুলির পুজোতে আছে নানা ধরনের নিয়ম। কোথাও দাগা হত কামান, তো কোথাও আবার মায়ের পুজোর উপাচারে রয়েছে নানা বৈশিষ্ট্য। বেলেঘাটার রামকৃষ্ণ নস্কর লেনের ভট্টাচার্য বাড়ির দুর্গা পুজোতেও কিন্তু রয়েছে নানা উপাচার। বিশেষ উপায়ে দেবী পূজিত হন এখানে।
হরিদেব ভট্টাচার্যের হাত ধরে মায়ের আরাধনা শুরু হয় ভট্টাচার্য বাড়িতে। বাংলাদেশের পাবনা জেলার স্থলবসন্তপুরে নাটোরের রানি ভবানির আমলে সূচনা হয় এই পুজোর। দেখতে দেখতে পুজো পেরিয়েছে ২৯০ বছর। শোনা যায়, নাটোরের রানি হরিদেব ভট্টাচার্যকে একটি জমি দান করেছিলেন। তারপর থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন সেখানকার জমিদার। ভট্টাচার্য মশাই শুরু করেন এই পুজোর।
হরিদেব ভট্টাচার্য ছিলেন কালী ভক্ত। দুর্গা পুজো শুরুর বহু আগে থেকেই তার বাড়িতে হত মা কালীর আরাধনা। কথিত আছে, পরে একদিন মা স্বপ্নে তাঁকে আদেশ দেন দুর্গা পুজো শুরু করার। মা নাকি আরও বলেন যে, মূর্তির রং যেন কালো হয়।
কিন্তু মূর্তি কেন কৃষ্ণ বর্ণ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন জাগে মনে। হরিদেব ভট্টাচার্য কথা বলেন, বহু পণ্ডিতের সঙ্গে কিন্তু কেউ তাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। শেষে একদিন গঙ্গার ঘাটে খুঁজে পান উত্তর। এক সাধুকে তার মনের সব কথা জানালে, তিনি নাকি বলেন মা পূজিতা হতে চান ভদ্রকালী রূপে। তাই এই কালো বর্ণের আদেশ। এরপর সেই সাধু তালপাতায় লেখা এক পুঁথি দেন হরিদেবকে। সেই পুঁথিতে লেখা নিয়ম অনুসারেই আজও পুজিত হন মা। সেই বাড়ির একটি শাখা পুজো চালিয়ে চলেছে আজও। তবে মায়ের গায়ের রং কালো হলেও সন্তানদের রং কিন্তু গৌর বর্ণ, আর অসুরের রং সবুজ।
পুজো হয় কালিকা মতে। পুরোহিতের গায়ে থাকে রক্তিম বস্ত্র এবং তন্ত্র মতে পুজো করেন তিনি। ভোগে সকালে থাকে নিরামিষ আর সন্ধে বেলা আমিষ। সন্ধি পুজোতে থাকে মাছ ভাজা, দশমীতে পান্তা ভাত এবং দই কলা। নিয়ম মেনে বিসর্জন হয় দশমীতে।
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।